শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা
ওবায়েদ আকাশ এর একগুচ্ছ কবিতা
ওবায়েদ আকাশ এর একগুচ্ছ কবিতা
তবু গগনে তোমার দেখা
শহরের দেয়ালগুলো শেভ করা বিশ্বাসের মতো কৃত্রিম
এবং মাটি খুঁড়লেই প্রত্ন রোদ, তারও চেয়ে প্রাচীন
পুরনো ইতিহাসের ওপর বিছিয়ে রেখেছ মায়া
মায়ার সন্তানগুলো প্রাক–ইতিহাস থেকে বর্তমান
মেলাতে মেলাতে তামাটে চুলে পাক ধরিয়ে দিচ্ছে
তবু উঁচু দালানের ওপর দাঁড়ালে
তোমাকে কী গ্রামীণ মনে হয়!
ভেবে দেখি রাজরাজড়াদের ধসে পড়া সিঁড়িতে পা রেখে
উপরে ওঠার প্রাণান্ত চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠছ
স্মৃতিসৌধের উঁচুতে উঠলে বোঝা যায়
মধ্যবিত্ত পরিবহনের হাতলে তোমার সততার ভাষা
মুষ্টিবদ্ধ বিপ্লবী হাতের চেয়ে দ্ব্যর্থহীন
কখনো পাখির চোখে চোখ রেখে
প্রগাঢ় অনন্তে উঠে দেখিÑ এমন যোদ্ধা তুমি
পৃথিবীকে বদলে দেবার যথার্থ দৈর্ঘ্য–প্রস্থ তোমার আছেÑ
কখনো গলি–ঘুপচির ছায়ার আড়ালে দেখি
স্বপ্নগুলো অনর্থ স্বাস্থ্যবান, অর্বাচীন
মহাকাব্যিক অনুরণন
স্তব্ধ আগস্ট, ভোরের প্রায়ান্ধ কুয়াশা¯স্রোত…
কাপুরুষতা থেকে হিংস্রতার জাজ্বল্য অধ্যায়, তবু
মুজিব নামের লোকটি এই মানচিত্রের সেরা নাম
অগণিত গ্রাম। শহর ও গাঁয়ের ক্ষীণাঙ্গী–দীর্ঘাঙ্গী মানুষ
লাল গোলাপ, রক্তজবার লালে এই আগস্টের চোখ
বারবার ফিরে আসে পৃষ্ঠায়
তাকে আমরা বরণ করি
হৃৎপিণ্ডের জখম, কালো পতাকার মতো বুকের পাথরকষ্ট–চাপায়
আমাদের শ্রমব্যস্ততার ঘুম, ভাতঘুমের ছায়ায়
আলস্য ঘনিয়ে এলে
প্রতিবার ফিরে আসে আগস্ট। রক্তনদীর মতো
সুবিপুল ঋণের বহর মনে করিয়ে দেয়- শোধতে হবে তাকে
আর আমরা শৈশবের বাগানে–অরণ্যে ঘুরি
বুনোফল, বুনো ¯স্নেহের অধিক বাঙালির প্রতি
তাঁর প্রগাঢ় অনুরাগের গন্ধ লাগে নাকে
তাঁর বিপুল কণ্ঠের ডাকে
আমাদের শৈশব ফেটে কিশোর যুবক হয়–
অরও বড় হতে হতে বুঝি– বঙ্গবন্ধু
অতলান্ত বিস্তৃত সীমায়– আমাদের সবটুকু অস্তিত্ব ছুঁয়ে যায়
অজস্র ক্যানভাসে তাঁর অগণ্য তুলির আঁচড়ে
শুধু একটিই চিত্র চিত্রিত দেখি বারবারÑ
বাংলাদেশ
আমাদের মগ্নতা ঘিরে বড় হয়
তাঁর স্বপ্নের মতো বেড়ে ওঠা, প্রস্থান কিংবা
সংক্ষিপ্ত মহাজীবনের এক মহাকাব্যিক অনুরণন…
শীতকাল পৃথিবীর নতুন সন্তান
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম
একটি মহাদেশ গড়ে ওঠার জন্য কতগুলো হ্রদ এবং উপত্যকা
পেরিয়ে দীর্ঘ মোহনায় এসে একেকটি মানচিত্র পরিপূর্ণ হয়
সাইপ্রাসের মেয়েটি শীতশোভন এবং
মরুভূমির মেয়েটিতে ফুলফোটার উষ্ণতা বোঝা যায়
অনাচ্ছাদিত মেয়েটি সাহসী
শীত গ্রীষ্ম পরোয়া নেই তার
পৃথিবীর গণতান্ত্রিক সংক্রামে তুমুল ফাটল
স্বৈরতন্ত্র, মৌলতন্ত্র বুঝে উঠবার আগেই
গণনা চলছে প্রতিটি মেয়ের শরীরে বস্তুত কতটি ভাষা
উর্বরতা মাত্রই মস্তিষ্কাশ্রয়ী, প্রবল দাপুটে, যৌনাবেদনময়ী
ভাষার পাললিকতা নিয়ে এখন ভীষণ চিন্তিত পুঁজির উচ্ছ¡াস
ব্যক্তিগত গৃহহীন নিষ্প্রাণ–নিষ্প্রভ যখন ভাষার কারুকাজ
প্রকৃতই শীতকাল বুঝি পৃথিবীর নতুন সন্তান
জেগে থাকার বীজধান
একদিন হাঁটতে হাঁটতে
পথনির্দেশিকা ছাড়াই পৌঁছে গেলাম আসানসোলে
দুতিন রাত্রি লেগে গেল, সারাপথের ক্লান্তি
বড় বড় প্রকৃতির শোভা দুহাতে মাড়িয়ে যাচ্ছি–
কোথাও চুপচাপ আগুন, কোথাও জলোচ্ছ্বাস..
সাঁতরে পার হচ্ছি আগুন এবং লাফিয়ে জলোচ্ছ্বাস
নজরুলকে ফজরের আগেই ডেকে তুলতে হবে
[কেননা, যে কোনো মহাকল্পনা ভোররাতের
অতটুকু অন্ধকার ব্যতীত প্রায়শ অপূর্ণ থাকে]
অথচ আমরা পৌঁছানোর অন্তত দুরাত্রি আগেই
জেগে বসে আছেন কবি–
ভাবলাম, প্রতিদিন ভোরে চারাধান রোপণের আগে
কবির কাছ থেকে শেখা জেগে থাকার পদ্ধতি
মুঠি মুঠি ছড়িয়ে আসবো অপর ভূমিতেও
সঘন শ্যামল পেরিয়ে, আততায়ী, ডাকাতের ভয় উজিয়ে
আসানসোল আজো নগরের মর্যাদা পেল না
অথচ পাহাড়ে উঠলে বোঝা যায় আসানসোলের প্রতিটি তৃণ
ঈশ্বরের মতো কতটা প্রাজ্ঞ এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বি
মর্মছেঁড়া ইশারায়
আজকাল ঈশ্বরের সান্নিধ্য ধরে
টানাটানি করি বিস্তর
ছেনে দেখি পরমায়ু, নিভৃত পাশ
ভ্রমণের প্রান্ত টেনে দেখি
বাতাসের কলাকৈবল্যবাদ
এখনো আস্তিক কিংবা মুরতাদ
সহজিয়া কিংবা সাংসারিক
কোনোই উপাধি জোটেনি; তবু
বেহিসেবি অঙ্কগুলো বহুদূর বৃত্তান্ত ছেড়ে
হেঁতালপ্রহরে ঘুমায় বুকের ললিত ব্যথায়
তাদের আহারের পাশে
পুঁই মাচায় সাজানো রয়েছে
অবিকল্প নিশ্বাসের সারি
খুঁজে দেখি, অহরহ
তুমুল প্রাবল্যে তারা
ফেঁড়েকেটে খায় ঘুম…
একবার দম নিলে, ছিঁড়ে খায়
পরবর্তী নিশ্বাসের ব্যাকুল সম্ভাবনা
কলাবতী আশঙ্কারা চাঁদ হয়ে গেলে
মিটে যাবে কুহকের সব লেনাদেনা
কবি পরিচিতি:
ওবায়েদ আকাশের জন্ম : ১৩ জুন ১৯৭৩; সুলতানপুর, রাজবাড়ী।
একাডেমিক পড়াশোনা : বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।
পেশা : গণমাধ্যমে চাকরি। বর্তমান কর্মস্থল : দৈনিক সংবাদ। প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা :
কবিতা, অনুবাদ, গল্প, প্রবন্ধ, সম্পাদনা মিলিয়ে ৩৭টি।
কাব্যগ্রন্থ: পতন গুঞ্জনে ভাসে খরস্রোতা চাঁদ (২০০১), নাশতার টেবিলে প্রজাপতিগণ (২০০৩), দুরারোগ্য
বাড়ি (২০০৪), কুয়াশা উড়ালো যারা (২০০৫), পাতাল নির্মাণের প্রণালী (২০০৬), তারপরে,
তারকার হাসি (২০০৭), শীতের প্রকার (২০০৮), বিড়ালনৃত্য, প্রেতের মস্করা (২০০৯), যা কিছু
সবুজ, সঙ্কেতময় (২০১০), প্রিয় কবিদের রন্ধনশালায় (২০১১), শুশ্রূষার বিপরীতে (২০১১), রঙ
করা দুঃখের তাঁবু (২০১২), বিবিধ জন্মের মাছরাঙা (একটি দীর্ঘ কবিতা, ২০১৩), তৃতীয় লিঙ্গ
(কয়েকটি দীর্ঘ কবিতা, ২০১৩), হাসপাতাল থেকে ফিরে (২০১৪, কলকাতা), ৯৯ নতুন কবিতা
(২০১৪), পাতাগুলি আলো (২০১৬), তথ্যসূত্র পেরুলেই সরোবর (২০১৮), সর্বনামের সুখদুঃখ
(২০১৯) এবং পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর (২০২০)
কাব্য সংকলন:
ঋতুভেদে, পালকের মনোবৃত্তিগুলি (কাব্য সংকলন, ২০০৯), স্বতন্ত্র ৬০টি কবিতা
(কাব্য সংকলন, ২০১০), ওবায়েদ আকাশের কবিতা ॥ আদি পর্ব (কাব্য সংকলন, ২০১১),
উদ্ধারকৃত মুখমণ্ডল (বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নির্বাচিত কাব্য সংকলন, ২০১৩), মৌলিক
পৃষ্ঠায় হেঁয়ালি (কাব্য সংকলন, ২০১৭, কলকাতা), বাছাই কবিতা
(২০১১থেকে২০১৮ পর্যন্ত নির্বাচিত কাব্য সংকলন, ২০১৮), স্বতন্ত্র কবিতা (স্বতন্ত্র
কাব্যসংকলন, ২০১৮), শ্রেষ্ঠ কবিতা (কলকাতা, ২০১৯)।
Translated Book (Poetry Collection)
Faux Assassin
Translated by : Ashoke Kar, Haikal Hashmi, Mahfuz Al-Hossain, Razia Sultana and
Kamrul Hasan. (2019)
শিশুতোষ গ্রন্থ : ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ, ২০১৯
অনুবাদ:
ফরাসি কবিতার একাল / কথারা কোনোই প্রতিশ্রুতি বহন করে না’ (২০০৯)
‘জাপানি প্রেমের কবিতা / এমন কাউকে ভালোবাসো যে তোমাকে বাসে না’ (২০১৪)
গদ্যগ্রন্থ :
‘ঘাসের রেস্তরাঁ’ (২০০৮),
‘লতাপাতার শৃঙ্খলা’ (২০১২)
সম্পাদনা গ্রন্থ :
‘দুই বাংলার নব্বইয়ের দশকের নির্বাচিত কবিতা’ (২০১২),
পাঁচ দশকে বাংলাদেশ : সাহিত্য সংস্কৃতি সমাজভাবনা (বিশিষ্ট কবি লেখক বুদ্ধিজীবীর
সাক্ষাৎকার সংকলন, ২০১৮),
সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন :
শালুক (১৯৯৯–)
পুরস্কার :
এইচএসবিসি–কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০০৮
কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র পুরস্কার ২০০৯
লন্ডন থেকে প্রাপ্ত সংহতি লিটারারি সোসাইটি বিশেষ সম্মাননা ২০১২
কলকাতা থেকে ঐহিক মৈত্রী সম্মাননা পদক ২০১৬
যোগাযোগ:
email : oakash1971@gmail.com