You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। গৌতম তালুকদার এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। গৌতম তালুকদার এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

গৌতম তালুকদার এর
একগুচ্ছ কবিতা

গৌতম তালুকদার এর একগুচ্ছ কবিতা

   

দুধের‌  জন্য

 

 

সে দিন রাতে ট্রেনটা আমাদের নিয়ে ছুটছে

কাঞ্চনজঙ্ঘা ছু্ঁতে।

 

বহু বছর থাকতে পারিনি কবিতার সাথে

বড় অভিমানী হয়েছিল।

 

জানালার কাঁচ তুলে দিয়ে এক যুগের বেশী

পিছিয়ে গেলাম।

 

হঠাৎ দেখি শঙ্খ ঘোষ বলছেনকতোদিন  লুকিয়ে থাকবে।লুকিয়ে থাকতে পারবে কি ?

আমরা কেউ পারি নি।

 

দেখি রতন দে ছড়া কাটতে কাটতে বলছে

চলছে কোলকাতা চলছে খড় দা” 

শুধু খায় ঘন ঘন জর্দা।

 

বেশ দেখি রেগে আছে স্বপন রক্ষিত বলছেঅমলেন্দু কে বলে রেখে ছিলাম তোমার কথা নৌকোর মাঝি হবে। আর তুমি কিনা…!

 

বিজয় কর হাঁপাতে হাঁপাতে বললেনওর কিছু হবে না।ছাড়ো ওর কথা সে কারণেই আমি ওকে ছেড়ে পালিয়েছি।

 

ওরা চারজন আমায় ঘিরে ধরেছে।আমি নির্বাক। কি বলবো !কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

 

কি করবো দুধের প্রোয়জন, আগুন জ্বলছে।

কবিতা কি জানে সেকথা?

 

এবার আমার অভিমান হয়।চুপ করে চোখ 

বুঝে আছি।মনের চোখে দেখি যুগের ছেঁড়া পাতা

কখন যেনো ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে গেছি।

 

বগীর বোতল নোংরা পরিস্কার করতে করতে ছেলেটা বলল বাবু গুয়াহাঁটি নামবিনা ?

হ্যা রে নামবো। তুই ভালো আছিস ?

ঘাড় কাত করে চলে যায়। ডেকে বলি 

কি রে দুধ কিনবি না‌ , এদিকে আয়।

 

এখনো কি কবিতার মান ভাঙ্গে নি!

তবুও থাকবো। যতোই অভিযোগ অভিমান করুক। 

 

 

 

মনের ঘরে

 

 

একটি জানালার ভীষন প্রোয়জন

অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সাজাতে।

 

বসন্ত এসেছিল মৌ বনের যৌবনে 

একদিন আগুন মুখ গিলে খেয়েছে।

 

বনানীর বেণু বন ঘিরে একে একে

চাঁদ তারা পাখি নদী ঝর্ণা পাহাড়

 

কোথাও নেই সেই খোলা জানালা

মনের ঘরে কড়া নাড়ে বিভীষিকা।

 

       

 বিসর্জন

 

 

আমাদেরো বিঘে খানেক তিন ফসলি

ধানি জমি ছিল ফল মুলের বাগান

বাবা কাকারা সকাল সকাল পান্তা খেয়ে

মাঠে যেতো বলল জোড়া সাথে।

 

মা কাকিমা ব্যস্ত উনুনে চেলা কাঠ গুজে

মোটা চালের গরম ভাতের গন্ধ ঢেলে দিয়ে

গেরস্থালি ঘর কান্না সামলাতে।

 

দিদি,পিসি ঠাম্মী দাদুর কোলে ঘাড়ে চড়ে 

রথের,মেলা,নাগরদোলা,হাওয়াই মিঠাই কেনা।

করিম মিঞার দু কাঁধে চড়ে দীঘির জলে  

সাঁতার কেটে পদ্ম শালুক তোলা।

 

আমাদের ছিলো একান্নবর্তী পরিবার  

দশ গ্ৰামের সকলেই একে অপরের আপনার। 

পিকনিক বোনভোজন,ইতুপুজো,মনসা মঙ্গল 

ঘরে ঘরে পিঠে পুলির ধুম।

 

হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান বুঝিনি তখন

কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে হাতে রেখে হাত।

গাজনেরচক্রিকাটা মিলেমিশে সবে বরাত 

ইফতার,খুশীর ঈদের চাঁদ দেখা।

 

এখন আমরা টুকরো টুকরো লাটাই লাট্টু

সংসার ভেঙ্গে বদলে দিচ্ছি সবুজের সমারোহ।

চাই আরো চাই ইট রড সিমেন্টের বাহার।

 

আমি,আমরা আত্ম গরিমায় অহংকারের রঙে 

পরছি মুখোশ সং সাজাতে ঢং দেখিয়ে।   

ভাইয়ের খাবার খাচ্ছি কেড়ে বোনের চোখেজল 

মাকে বেঁচে গোছাই মুলধন,গড়ছি ইমারত

আমার আমিকে দিচ্ছি বিসর্জন।

 

 

 

মরে যাওয়া নদী

 

 

এর তার জামা প্যান্ট ধরে টানে,

চর,থাপ্পর খেয়েও ঠোঁটে হাতের– 

আঙুল ঠেকিয়ে ঈশ্বারায় বোঝায়

খেতে চায়।পয়সা দিলে নেয় না   

ছুটে য়ায় অন্য জনের কাছে। 

 

কেউ যদি বলে চল আমার বাড়ি

কাজ করবি,খেতে দেবো।গুটি গুটি

পায় চলে যাবে,জেদ করবে। কিছু 

বললে গালি দেবে।ছেলেটা কি পাগল ?

 

সে দিন দুপুরে পুরনো ভাঙ্গা ব্রীজের নীচে

মরা নদী বুকে  জল ঢালে মাটির ঘড়ায় করে।  

কৌতুহলে,দুবার জানতে চেয়েও পাইনি উওর।

দেখি ব্রীজের পিলারে লুকানো ছাপা শাড়ি

শুকানো রক্তের দাগ লেগে।

 

সেদিন রাতে ঘুম ঘরে,কে যেন অপবিত্র

হচ্ছে। আর আমি মামা, চিৎকার করি।

রক্তে ভেজা মা,নদী থেকে শিহরে।

ছেলেটার হাতে ঘড়া,মায়ের আঁচল ধরে।

 

গলি সে গলি,উচ্ছৃষ্টের ডাষ্টবিনে অনেক

 

পাগলের দেখা মিললেও ছেলেটি উধাও।

কবি গৌতম তালুকদার।

জন্ম১৯৬৮ 

জন্ম অধুনা বাংলাদেশের, ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত রামপাশা গ্ৰামে।

পিতাকানাই তালুকদার।

মাতাবিমলা রানী তালুকদার।

কবি বর্তমানে কোলকাতা নিবাসী।

 বিগত ৩৭ বছর ধরে শব্দসৃজনের কাজ করে চলেছেন ।দেশবিদেশের ছোট কাগজ লিটিল ম্যাগাজিন, বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লিখেই চলেছেন আজওকবিতা,ছড়া,ছোট গল্প,অনু গল্পো,বড় গল্প,গানের কথা মূলতো কবি।তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থধন্যবাদ নেলসন ম্যাণ্ডেলা১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় কাব্য গ্ৰন্থ -‘ডুবে গেল চাঁদপ্রকাশিত হয় ১৪২৯

শারদীয়ায় কব্যগ্ৰন্থটি গুণীজন কবিতা প্রেমি পাঠকের প্রশংসা লাভ করে কবির তৃতীয় কাব্যগ্ৰন্থ প্রকাশিত হয় কোলকাতা ৪৬তম আন্তর্জাতিক বই মেলা ২০২৩এ। তাঁর লেখা অনেক লিরিক (গানের কথা) প্রসিদ্ধ কন্ঠশিল্পী কন্ঠে গাওয়া হয়েছে এবং সেগুলো ক্যাসেটে প্রাকাশিত ।কবি নিয়মিত লিটিল ম্যাগাজিনের লেখক(বিভিন্ন পত্রিকায় লিখছেন ,পশ্চিম বঙ্গ, বাংলাদেশ,এবং বিদেশের কাগজ অনলাইন পত্রিকায়।  এছাড়া 

 

কবিসহ সম্পাদক বাংলার লেখা ম্যাগাজিন পত্রিকার,একটি সাহিত্য পত্র খেয়া৯(খেয়ালী) সহ সম্পাদক মণ্ডলীর একজন এবং স্বর্ণচাঁপা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক (কর্ণধার)।নিরলস সাহিত্যকর্ম করে চলেছেন।

গৌতম তালুকদার
কবি

Leave a Reply