You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। বদরুজ্জামান আলমগীর এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। বদরুজ্জামান আলমগীর এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

বদরুজ্জামান আলমগীর এর
একগুচ্ছ কবিতা

বদরুজ্জামান আলমগীর এর একগুচ্ছ কবিতা

 

 

একোরিয়াম

 

তোমার মৃত্যু দেখার জন্য আমি ঠাঁই বেঁচে আছি

বেঁচে আছি এখনও একসার।

 

তুমি কোনদিকে কাত হবে না জানি

ভয়ে আঁৎকে উঠে সরে দাঁড়াবে না।

 

সটকে যাবে না আমার সীমানা থেকে

কেবল আমার জন্য পড়ে থাকবে নিথর

আমার রক্ত পরাগের অধীন, আর কারো নয়।

 

এই মোক্ষম লীলাক্ষণ আমার একমাত্র চাওয়া

তোমার মৃত্যুর নিশানায় আমি অপেক্ষা করে আছি।

 

আমি সবটুকু তোমার স্থিতির অধীনএকাগ্র নীল ক্ষণ

স্টিল লাইফ ছবি, একোরিয়াম কামে রঙিন মীন।।


উপাসনাসমগ্র

 

আশায় বসতি মানুষ ফুলের কেন্দ্রীয় প্রণতি

 

আমার জন্মের পর আমার নাভি মায়ের নাভির সঙ্গে

একাকার ছিলমায়ের শ্বাস থেকে আমারও শ্বাস হতো

আমাদের জীবনই শুরু হয় বিচ্ছেদের ওঙ্কার থেকে।

আজ যতোই ভাবিআমার নাভি জননীর নাভির সনে

এক হতে পারে না আর।

 

তুমিও আমার জীবনে এমনই এক বনাঞ্চল

ওখানে ছায়া হয় মায়া হয় অন্তরীক্ষের সুবাস হয়

কেবল রাত্রিযাপন হয় না, হয় না বীজায়ন।

 

বেঁচে থাকার সবটুকু মধু টোটকা, স্তব্ধতা আর সাহস

তামাম ভেষজগুণ বনভূমি থেকে আসে

একাকার না হওয়া, পিছুটানের জ্যোৎস্না সুরের দানায়

গৃহাঙ্গনে তুলে আনা অনাঘ্রাত মহিমা তোমার

এভাবেই তুমি জীবনভর আমার চাঁদের বীজানু বিভা।

 

কখনও ঠাণ্ডা গোলাকার চাঁদ নও আমার, 

তুমি দূরত্বের হৃৎস্পন্দন , ঈশ্বরের অদেখা নুন,

জন্মেরও আগের হেরিটেজ, আমার উপাসনাসমগ্র।



হরপ্পার দিন

 

ভোরের শীতলক্ষ্যার স্নেহবতী হাওয়া

অঙ্গে তোলে সবুজ ভোরের সঞ্চারী

পরম্পরার কালনিধি নিমগ্ন কারিগর

নরম কীর্তি নেশায় বোনে জামদানি শাড়ি।

 

কিনিককিনিক নদী নারীর কাছে

প্রজ্ঞা বিদ্যুতে আমি হেরে গ্যাছি কৃষিজীবী

প্রাণের ঘোলা জলে হরপ্পার বিমুগ্ধ পথ

অদেখা রীতির নিয়মে আদিতম সংবিধি।

 

মেঘ বলে যায় সে তো চৈত্র দিনের মনে

ফিরে ফিরে দেখে আগামীর নকশা প্রতিক্ষণে

বৃষ্টির ফোঁটায় বুকে তুলি আগুনের নীল দানা

ভাবি তারে জলের ভরসা উন্মনা আনমনা।।



নকটার্ন কদমফুলগুচ্ছ

 

তুমি ধরেই নিয়েছো, আমি যা চাইছি তা ঠিক নয়

তা তুমি ধরেই নিচ্ছো, চোখ বন্ধ করে জপছো

আমি যা বলছি তা নয় সমীচীন।

এখন মধ্যরাত, ঘুমিয়েছে ঝাউপাতা,মোহনচূড়া হুদহুদ

ফেরেশতার ডানাও অবসাদে ঝিমোয়

কেবল ফুঁপিয়ে কাঁদে এক নক্ষত্র পাওয়া ভাঙা বইলাম

অন্তরীক্ষে বয়ে যায় আমাদের ব্যথিত পূর্বপুরুষের ঢেউ

আর অন্তর্গত দূরাভিগামী পরাণ চোবানো হামিংবার্ড

আমি কেবল বলেছিআমার নামটি কাঁপা কাঁপা

হাতে তোমার নার্ভাস আঙুলে ভুল বানানে

একবার ভার্চুয়াল জালে লিখে পাঠাও

তোমার ভুল বানানে লেখা আমার নাম বুকে জড়িয়ে

ঘুমাবো বলে এই রাত দুপুরে হাজার মাইল দূরে

নির্ঘুম কলরবে, নিস্তব্ধতায় জেগে আছি।

জানি, তুমি ধরেই নিয়েছো বাইবেল আর বেদের

সীমানার বাইরের বয়ান ঠিক নয়।

আমি তা বসে থাকি

তোমার ভুল বানানে লেখা আমার নামটি দেখবো বলে

এই মাঝরাতে বসে আছি আমি আর আদি নোটবুক।

শোন, তোমাকে এবার আদত কথাটি বলি

যেই তুমি বলবে ঠিক, তিনসত্যি অকৃত্রিম খাঁটি

বনবীথি হাওয়ার সাইরেন অঙ্গে মেখে বলবে

ঠিক, তোমার অপেক্ষা পবিত্র জলধি, তৃষ্ণার জল;

 

তুমি যখনই আমাকে আলিঙ্গন আর চুম্বনের কথা বলবে

আমি সটান দরজা বন্ধ করে দেবো,

আর কোনদিন বলবো নারাত্রির কদমফুল মিশিয়ে

ভুল বানানে আমার নামটি লিখে পাঠাও।


রূপকথার কাচ

 

পনেরো হাজার কোটি বছর আগে দুনিয়া জন্মেছে

বিশেষ জ্ঞান বারবার বলছে কথা

পিনাজিয়াস, রবার্ট উইলসন, জন মাথার, জর্জ স্মুট,

সম্প্রতি স্টিফেন হকিং এই ঘন্টা পিটিয়েছেন জোরে।

 

ঋগ্বেদও অথৈ জলডোবা থেকে মুখ বাড়িয়ে বলে

আমার নিসা পর্বের ১১৬ শ্লোক কহে

বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জন্মেছে এক অতি ক্ষুদ্র মৌলিক শূন্য হাহাকার বিন্দুর উন্মেষ থেকে।

 

আমরা দেখেছি ক্ষীণকায় বিন্দু একক সুষমা প্রভা

সে ছিল সময় আধারের অধিক, বস্তু নিরপেক্ষ।

চারদিক ঘন অন্ধকার অনড়ে ছাওয়া কাটাকাটা শীতে, বিচ্ছুরণে দেখা, না দেখায় চোখ চক্ষুহীনতায়

ফোটে, কাঁপে, ঝলসায়, গন্ধ বিলায় হিরণ্যগর্ভ।

 

এভাবে জগতের লাস্য শব্দের শিখা অনির্বাণ।

সময়ের শুরু নেই, নেই তার অভিপ্রায় মুখ,

 

সব বিজ্ঞান আর ইতিকথার নাভিমূলে

একটি নির্জ্ঞান পিপাসার বিন্দু বাঁধ মানে না

 

কুটকুট কাটে কালের পাপড়ি, কেশর রুমাল।

বদরুজ্জামান আলমগীর: কবি, নাট্যকার, অনুবাদক।

 

কবিতা : পিছুটানে টলটলায়মান হাওয়াগুলির ভিতর।

নদীও পাশ ফেরে যদিবা হংসী বলো। দূরত্বের সুফিয়ানা।

 

প্যারাবল : হৃদপেয়ারার সুবাস।

 

ভাষান্তরিত কবিতা : ঢেউগুলো যমজ বোন।

জালালউদ্দিন রুমির কবিতা, মসনবি : মোরাকাবা জলসংগ্রহ।

প্রকাশিতব্য সাম্প্রতিক আমেরিকান কবিতা : পানপাত্রে নক্ষত্র কুচি।

 

ছিন্নগদ্য : সঙ্গে প্রাণের খেলা।

 

 

নাটক : নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী একটি বাঘ আসে। পুণ্যাহ। আবের পাঙখা লৈয়া। জুজুবুড়ি। চন্দ্রপুরাণ। পানিবালা। বাঘ। পরীগাঁও। ইলেকশন বাজারজাতকরণ কোম্পানি লিমিটেড। এক যে আছেন দুই হুজুর। পিঁয়াজ কাটার ইতিহাস। ডুফি কীর্তন। ভাসিয়া যায় লাল গেন্দাফুল।।

বদরুজ্জামান আলমগীর
কবি, নাট্যকার ও অনুবাদক

Leave a Reply