You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। মাহফুজ আল-হোসেন এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। মাহফুজ আল-হোসেন এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

মাহফুজ আল-হোসেন এর
একগুচ্ছ কবিতা

 মাহফুজ আলহোসেন এর একগুচ্ছ কবিতা


একটি বাড়াবাড়ি রকমের কবিতা

কিছুকাল আগে অবিমৃষ্যকারী অচিন কবিতায় অর্বাচীন  মৃত্যুচেতনার অনুবাদ করতে গিয়ে কবি জীবনের নোনতা স্বাদ খুঁজে পেয়েছিল প্রত্ন শব্দের শ্বাসমূলে ;

ধ্বনিমাধুর্যের কেলাসিত পানপাত্রের অবিরাম ঠুংঠাং আর ওদের আরক্তিম ফিসফাস শুনে নিদ্রিত পঙক্তিরা সেসময় জেগে উঠেছিল বিগত জন্মের ব্যথা ভুলে ;

শব্দের অন্তরাত্মাকে না খুঁজে কেউ হয়তো কবিতাকে বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবেসেছিলনিথর ফসিলের কন্ঠে এখন সেই গান বলো কীভাবে দেবে তুলে !


কবিতার অপমৃত্যু

তুমি কর্সিকান কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে
অস্তগামী সূর্যের সঙ্গী হতে চেয়েছিলে সেদিন;
ধূমায়িত সফেন পেয়ালায় সেমূহুর্তে
জীবনের বাদামী স্বাদ জুড়িয়ে যাচ্ছিল
একটু একটু করে
অথচ , নিজেকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারতে
তোমার  জীরাফীয় গ্ৰীবা
সতৃষ্ণ ঠোঁট ,
উভচর জিহ্বামূল,
থিতিয়ে পড়া মানস সরোবরে
উন্মাতাল ঢেউ তুলতে চেয়েছিল
সেই মিতবাক গোধূলিতে ‌!

অথচ, একটি সম্ভাবনাময় দিনের
অকাল মৃত্যুর সাথেসাথেই
একটা স্নায়ুক্ষয়ী রোম্যান্টিক কবিতার
অপমৃত্যু হয়েছিল সেদিন সন্ধ্যায়

.
মহাকাশযাত্রা

দেখো , দেড়শো টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হলফ করে বলতে পারি চিৎকার চেঁচামেচি করে আমি কেনকোথাও কেউ কিচ্ছুটি বদলাবে না
কবিতা না হয় আর নাই লিখলামকারণ, জোর করে তো অনিচ্ছুক কাউকে অর্ধসিদ্ধ উৎপ্রেক্ষা গেলানো যায়না!

আচ্ছাএক্কেবারে এন্ড্রোমিডা চলে গেলে কেমন হয় ?
ধুর বোকা, তুমি ছাড়া আপাতত নো নড়ানড়ি ;
মাথার উপরে ক্ষমতাদর্পী কেউ না থাকলে হয় কী করে বলো তো?

খুনসুটি ছেড়ে চটজলদি ব্যাগপ্যাক গোছাও যৌথ উড়ানের উদ্দেশে ;

হিসেব করে দেখলাম , হাউজলোন কেটেকুটে স্বেচ্ছা অবসরে  যা পাবো
হিউস্টনে ওজনহীনতায় হাঁটাহাঁটির জন্য বোধহয় কিচ্ছুই হবেনা;
আর স্পেসশীপের ফেয়ারদুদশজন বাদে থার্ড ওয়ার্ল্ডের যে কারোর জন্যই তো ভীষণ আনফেয়ার!

আমার আগাছা বইপত্রিকা দিয়ে ঠাসা এই ঘিঞ্জি ফ্ল্যাটটাআজগুবি যুদ্ধের বাজারে কতোই বা বিকোবে বলো?
আর আমার অশীতিপর বাপমা তাঁরাই বা উঠবে কোথায় শেষকালে এসে ?

কী বললে, ফ্রিজে মাছ তরকারি কিছুই অবশিষ্ট নেই ?
পেঁপে সিদ্ধ চলুক না হয় বিষ্যুদবার পর্যন্তলিভারের জন্যও তো মহৌষধ, তাই না !

শোনো, বলতে ভুলে গিয়েছিলাম আমার কবিতা লেখার ট্যাবটা কিন্তু সাথে নিতে হবে আসন্নমহাকাশ যাত্রায়,
আর সেই সাথেশালুক‘ –এর পরিমার্জিত আবুল হাসান সংখ্যাটাও


চৈতালি সংরাগ

বাসনার কতিপয় ভুল 
ঘটালোকী যে হুলস্থুল
আর  কিছু  চাপা পড়ে ছিলো
দীর্ঘশ্বাসের প্লেটোনিক নোটপ্যাডে
সে সৌগন্ধের কতকটা তুমি
অকস্মাৎ তুলে নিলে ঠোঁটে
বৈদেহী শব্দেরা সব সদলবলে
লাজ ভেঙে শরণাগত আজ
চৈত্রের চিত্রকূট মেঘেদের কাছে
উৎপীড়িত উপমার আরাধ্য মিলনাভিসার
মীণাক্ষী বজ্রবিদ্যুতে   –না হবে না নিষ্ফল
তৃষিত উপমিতের অনুসূয়া ঢলে



লবণসহিষ্ণু চাষবাস

নৈঃশব্দ্যমহাসরণির মধ্যবর্তী দ্বীপাঞ্চলে  লবণসহিষ্ণু পুরুষতান্ত্রিক চাষবাস  সৌৎসাহে চলুক না চক্রক্রমিক চব্বিশ ঘন্টা সাত দিন আহ্নিক বর্ষব্যাপী

অথচ, কর্পোরেট চ্যানেলে কর্মরত কতিপয় কাকাতুয়া হারিয়ে যাওয়া আটলান্টিসের সুগভীর অতল থেকে কুড়িয়ে পাওয়া বাইনোকুলার লাগিয়ে অতীতের অতিকায় ডাইনোসরের ভবিষ্যত গণনা করে চলেছে আশ্চর্য  নির্ভুলতায় !

আর, বন্ধকী ঋণে কেনা সিন্দুকভর্তি ইমিটেশনের গয়ণাগুলো গোধূলির  টকটকে লাল সূর্যকে ব্যঙ্গ করার পুনরাবৃত্ত সংলাপ আউড়ে যাচ্ছে ব্রেখটীয় একাঙ্কিকায়।

আসুন‌, আমরা সবাই হৃষ্টপুষ্ট আরব্য উষ্ট্রের পিঠে সওয়ার  হয়ে সবুজ খর্জুর পত্রের সংক্ষিপ্ত ক্রপ টপস্ আর এনাটমিক নীল জিন্স পরা ঋতুমতী বৃক্ষের সতীচ্ছেদ করি পরাক্রমী পৌরুষের নামানুষি ধারাবাহিকতায়।


সিজোফ্রেনিক  পদাবলিনয়

 

চতুরঙ্গ অশৈল্পিক দ্রোহের
বস্তুগত অন্তর্জালের দোহাই ;
খণ্ডকশৃঙ্খলের
সাংকেতিক লিখনজাত
বিশৃঙ্খল গুপ্তমুদ্রার স্বচ্ছতার দোহাই;
অলীক ঘিলুর আন্তরিক অকৃত্রিমতার দোহাই;
আমাকে নামানুষি হৃদয়বিবর্জিত
বিনিময়যোগ্য বস্তু বানিয়ে দাও,
যাতে , স্বৈরশাসিত কবিতার
কুসুমিত সিলিকন কান্না যেনো
সুসম্পাদিত শোকের নিমিত্ত না হয়ে দাঁড়ায় !!

কবি পরিচিতি: মাহফুজ আলহোসেন বিংশ শতাব্দীর নব্বই দশকের ব্যতিক্রমী কবি , বিগত তিন দশক ধরে তিনি বাংলা এবং  ইংরেজি ভাষায়  শিল্পোত্তীর্ণ অসংখ্য কবিতা রচনা করে স্বদেশ বিশ্বের অগণিত পাঠকহৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। নন্দনতাত্ত্বিক অনুবাদক হিসেবেও সুখ্যাত এই কবি অধুনাবাদী চিন্তার লিটল ম্যাগাজিনশালুকএর সহযোগী সম্পাদক এবং কোলকাতা থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক লিটারারি জার্নাল ‘Litinfinite’ – এর এডিটোরিয়াল বোর্ডের সম্মানিত সদস্য। ছাড়াও তিনি ‘Poetry and Literature World Vision’ – এর এক্সিকিউটিভ বোর্ড মেম্বার এবং এডমিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্ৰন্থসমূহ হলো: সুবাসিত শব্দের ঘুমঘোর, প্রতীচ্যের বিউগল, কালকেউটের ট্যাক্সিডার্মি, Probably Poems or May Not, দুঃখবিলাসের পুলিৎজার, সিজোফ্রেনিক রাখালবালিকা মনের বাঘ, নিজের হাতে খুন করেছি গতকাল, এক গুচ্ছ কুচিলা ফুলের সমীপে, ভালোবাসলে বুকে বিপ্লব বেঁধে রাখতে হয়। তাঁর বেশ কিছু কবিতা অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, সুইডিশ স্প্যানিশ ভাষায় বহির্বিশ্বের বেশ কিছু খ্যাতনামা লিটারিরি জার্নাল এবং অ্যান্থোলজিতে তাঁর কবিতা ঠাঁই পেয়েছে। তিনি  ২০১৯ সালে তাঁর কাব্যগ্ৰন্থসুবাসিত শব্দের ঘুমঘোর‘ –এর  জন্য পেয়েছেন  ‘বেহুলাবাংলা বেস্ট সেলার পুরস্কারএবং গতবছর কিরঘিজস্তানের প্রখ্যাত কবি রহিম করিম করিমভএর নামে প্রবর্তিত ‘ Rahim Karim World Prize 2022 ‘  – এর জন্য মনোনীত হয়ে ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন।
কবি মাহফুজ আলহোসেন ১৯৬৮ সালের ২২শে নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার নওদাখাঁড়ারা গ্ৰামে মাতুলালয়ে জন্মগ্ৰহণ করেন, শৈশবের কিছুকাল অতিবাহিত হয়েছে পৈত্রিক নিবাস চুয়াডাঙ্গা জেলার গড়চাপড়া গ্ৰামে এবং বেড়ে ওঠা , লেখাপড়া  বসবাস ঢাকা শহরে। আইনজীবী পিতা এবং সমাজসেবী মাতার দ্বিতীয় সন্তান মাহফুজ পেশাগত জীবনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত রয়েছেন। উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ছায়াসঙ্গী মাহবুবা রহমানের সঙ্গে তিনি দীর্ঘ আটাশ বছর যাবত প্রেমময় দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করছেন।

 

ইমেইলmahfuzalhossain.bd2018@gmail.com

মাহফুজ আল-হোসেন
কবি, প্রাবন্ধিক ও নন্দনতাত্ত্বিক

Leave a Reply