শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা
কবিতার প্রহর-২
শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা
কবিতার প্রহর-২
বোধহীন সংলাপ
গোবিন্দ মোদক
ক্রোধের মতো ভারী কিছু আর হয় না
কাছাকাছি বুঝি তার দুঃখের বসবাস
নতজানু মন সর্বত্রগ্রামী হয়ে ওড়াউড়ি করে
একে একে ছুঁয়ে যায় ইর্ষা হিংসা লোভকে
সংকোচে সরে দাঁড়ায় সংশয়
তারপর প্রতারণার পালাগান শুনিয়ে যায়
চিরন্তন খলনায়কের সংলাপ
অন্তরে ঘুমিয়ে থাকা শোকানল
একসময় বদলে যায় শক্তপোক্ত মনোবলে
তখন সব পেয়েছির সুঘ্রাণ পাওয়া যায়
অযথা নরকের পাহারাদারের হুঙ্কার
কানে আসে! কে জানে কোনটা সত্যি!
(কৃষ্ণনগর, নদীয়া ,ভারত)
পিঁপড়ে কথন
রজব বকশী
একদল পিঁপড়ে কোথাও যাচ্ছিল
দেখে ওদের পথে পা রেখে দাঁড়ালাম।
ওরা আমার পায়ের প্রতিরোধ তোয়াক্কা না করে
ছোট ছোট মিছিলে বিভক্ত হয়ে দ্রুত ছুটে চলে
আমার পায়ের পাতার উপর দিয়ে
এমন কি, বাধাগ্রস্থ কেউ কেউ দংশন করে।
অনেকে অদংশনে দ্বিধাগ্রস্থ তবু সময়ের
কাজ সময়েই করে নিতে ঐক্যবদ্ধ,
পায়ের আঙুল পাতার দুপাশ দিয়ে চলে যায়
আপন গন্তব্যে।
শত বাধার পাহাড় সমুদ্র পেরিয়ে
আমিও আলোর পথে
সহস্র ধারায়
প্রেম অথবা দ্রোহের দুধারা কিরিচ
(বকশীগঞ্জ, জামালপুর,বাংলাদেশ)
হাড়
শাহ্ কামাল
একটি কবর খুঁড়ে
তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে এলাম
কতগুলো হাড় পেলাম
মাংশল যা ছিল সব খুবলে নিয়েছে রাক্ষসী মাটি
আমি কল্পনা করতে থাকলাম
তোমার চোখ মুখ নাক নাসিকা কন্ঠ
হস্ত পদ
আমি আঁতকে উঠলাম
কী অরূপ রূপে তোমায় দেখেছি সে সোনাঝরা শৈশবে
তারপর কৈশোরে
অতঃপর যৌবনে দেখেছি তোমার কফিনে তারকাটা মারা
তোমাকে নিয়ে গেছে লাশকাটা ঘরে
এখন কতগুলো হাড়
ভেসে আসে হরিণী লাবন্য চোখ
ভেসে আসে মেঘকুন্তল
আসে দীঘল রাত্রির পা যুগল
এই অবশিষ্ট হাড় দিয়ে কী হবে? কালো জাদু?
আমি কামুক কামাক্ষা থেকে শিখে এসেছি
জ্যান্ত মানুষের হাড় দিয়ে বান দিলে মুছে যাবে—
সকল কুপির অন্ধকার
(নারায়ানগঞ্জ, বাংলাদেশ)
পুড়ে যায় রাত তোমার উত্তাপে
আসিফ আলতাফ
পূড়ে যায় রাত তোমার উত্তাপে
পোড়ে বৈশাখী সময়
অথচ তোমার দুহাতে বরফের চাঁই;
তোমাকে ছুঁতে যেয়ে কাবাব হয়ে গেল
অর্ধেক রাত
বাকি অর্ধেক শুধু শীতের সাইবেরিয়া ,
কিছু শীতল বাতাস আমাকে ভালোবেসেছিলো বলে
তুমি তাকে সাম্প্রদায়িকতার তকমা দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিলে;
তার পর থেকে কোনো দখিনা বাতাস আর
আমার ছায়া মাড়ায়নি;
তোমার ঠোঁটে অগ্নিগিরি শুয়ে থাকে
পোষা বিড়াল যেন,
তার দৃষ্টি অন্ধকার ভেদ করে তীরের ফলার মতোন;
তোমার উত্তাপে তুমি পোড়ো
আমি পুড়ি
দুজনে পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাই;
অবশেষে ভস্ম থেকে আমরা আবার জেগে উঠি
পৌরাণিক পাখির মতোন।
(সেনহাটী, খুলনা,বাংলাদেশ)
ইচ্ছে
মোমেন এইচ
তোমার শহরে আমার কান্নার শব্দদূষণ
যাচ্ছি চলে—বহুদূরে। হচ্ছি আমি একা ভীষণ।
আঁকাবাঁকা পৃথিবীতে না হোক দেখা তোমার সাথে
যাচ্ছি চলে। ভালো থেকো। ভালো থেকো নিজের মতোন।
তোমার শহরের নিয়ন আলো,রাতের ফুটপাত কিম্বা ধুলো
আমায় চেনে তোমার নামে। … ভালো থেকো।
বেঁচে থাকা পাঠিয়ে দিলাম ভালোবাসার সবুজ খামে
আমার শহরের নামকরণ হোক— তোমার নামে।
চূর্ণ হওয়া স্বপ্নগুলো
খায়রুননেসা রিমি
পহেলা বৈশাখে সন্ধ্যার শেষ ভাগে
মন আকাশে একটু উঁকি দিয়েছিলে,
দেখতে এসেছিলে আমি মরে গেছি না বেঁচে আছি।
সেকেণ্ডে সেকেণ্ডে তোমার মনবাড়িতে উঁকি দেই–
কেবলি মনে হয় এই বুঝি তুমি এলে।
তোমার প্রতীক্ষায় থাকি— চাতকের মতো।
তোমার মতো একগুঁয়ে,পাথর মানবেরা ভালোবাসা বোঝে না।
বোঝে না অস্রুসজল চোখ।
বোঝে না শত অবহেলার পরেও
প্রেমিক হয়ে ওঠার কষ্ট।
কখনও মধ্য রাতে,কখনও কাক ভোরে,
কখনও মধ্য দুপুরে, সারাদিন ধরে খুঁজে ফিরি তোমায়।
অবসাদে নুয়ে পড়া শরীর নিয়ে তোমায় খুঁজি,
তুমি সবই বোঝো।
বুঝেও না বোঝার ভান করে অবজ্ঞা ভরে
ছুঁড়ে মারো আমায় ঘৃণার আস্তাকুঁড়ে।
তোমার অবহেলা সয়ে সয়েও আমি তোমায় জপি,
অনেকটা তফসি জপার মতো করে।
আমার মনের হাহাকার একটুও কি পৌঁছে না
তোমার কর্ণ কুহরে?
কিছুইতো চাইনি আমি,চেয়েছি তোমার হাসি মুখ
দূর থেকে একঝলক দেখতে।
আমার ছোট্ট চাওয়াকে পদদলিত করে
তুমি মিথ্যা আস্ফালনে এগিয়ে যাও বীর দর্পে।
আমার স্বপ্নগুলো চূর্ণ হয় তোমার পদতলে।
আমি কেঁদে পৃথিবী ভাসাই—
যে পৃথিবীতে তোমার অনিরুদ্ধ যাওয়া আাসা।
(শরীয়তপুর, বাংলাদেশ)
দূরত্ব
কেয়া ওয়াহিদ
আঙুলের সাথে আঙুলের কাটাকাটি খেলায়
করতলের কাছে হেরে যাওয়া বিষাদের গন্ধ এখনো লেগে আছে,
প্রেমানন্দ উৎসব বাড়ি আজ
মৌন মৌতাতে মগ্ন বিরোহী স্থায়ী নিবাস
তোমার পাঠানো হাতের লেখারা –
পৃথিবীর চূড়ায় কাঁটা তারের বেড়ায় অবরুদ্ধ,
কোন এক কোজাগরী পূর্ণিমায় হয়ত এসে পৌঁছাবে;
নতুবা ফসিল হবে হাহাকারের অতল গহ্বরে—
স্বপ্ন মন্দিরের বেদিতে তুলে রেখেছি
তোমার দ্বিধা, ঠোঁটের আড়ষ্টতা এবং দীর্ঘশ্বাস–
শব্দাতীত শব্দরা কড়া নেড়ে যাবে মনের দুয়ার,
অনুভূতির একক অনুরণনে,
অনাদিকাল থাকবে তুমি
নিঃশ্বাস ও নোলকের দূরত্বে।
( ঢাকা, বাংলাদেশ)
আমি চাই
জান্নাতুল ফেরদৌসী
আমি প্রেমিকা হতে চাই, তোমায় ভালোবেসে,
ঝিনুক যেমন মুক্তকে লুকিয়ে রাখে।
আমি সুখি হতে চাই, তোমার সুখেতে হেসে,
যেমন পূব আকাশে সূর্য উঠে হেসে।
আমি স্বপ্ন সত্যি করতে চাই, তোমার সাহায্যে,
মেঘের সাহায্যে বৃষ্টি যেমন ঝরে।
আমি ব্যস্ত হতে চাই, শুধু তোমায় নিয়ে,
সাগর যেমন ভইছে চলমান শ্রোতে।
তোমায় সুখ দিতে চাই, আমার স্পর্শে,
গরমে স্বস্তি যেমন শীতল বাতাসে।
তোমার সঙ্গী হিসেবে থাকতে চাই, সারাজীবন ধরে,
আকাশের পূর্নতা যেমন একরাশ নীলে।
(শরিয়তপুর, বাংলাদেশ)