You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। কবিতার প্রহর-২

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। কবিতার প্রহর-২

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

কবিতার প্রহর-১

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

 

কবিতার প্রহর-১

 

নদী  উপাখ্যান

সোহরাব পাশা 

 

মানুষের আগে জল খায় শাদা গেলাস ,

 

নদীগুলি পথের মতোই খুব একা 

অনুবাদ করে নিত্যকালের ভ্রমণ;

 

মানব বিশ্বাস সহজেই ভেঙে যায় 

একদিন জোছনা ঘড়ির স্বপ্ন ছিল

বুকে ভূগোল দেখার ,

উজ্জ্বল গল্পের নদী বয়ে যাবে ঘুমের ভিতর 

শুনবে না কেউ রংওঠা স্মৃতির বিষণ্ণ পঙক্তি 

আর তোমার প্রিয় প্রসঙ্গে ;

 

আজ সকল দুয়ার খুলে বলি,শোনো 

তোমার প্রসঙ্গ এলে জ্যোৎস্না ভাঙে মেঘে

অন্ধকার নদী হয়ে যায়

 

(ঈশ্বরগঞ্জ , ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ)

 

ভালো নেই

আলম মাহবুব

 

তোমাকেতো বলেছি সৌজন্য করেভালো আছি

কি করে ভালে থাকি বলোআসলে ভালো নেই 

একদম ভালো নেই আমি

 

ভোরের কাগজ কী আর দেখো না আজকাল 

দেখো না কী রাতে কী রকম নকল জোছনায় ভরেছে নগর

সমস্ত গোলাপে কীট আর কীট, সুচারু কণ্টকগুলিও 

অধিক তীক্ষ্ণতায় আধুনিক মরণাস্ত্র এখন

মানুষেরা মানুষের বিনাশে কেবল 

পশুর মতো নেমেছে যে যার ভূমিকায়

পৃথিবীর হায়াতকে এনেছে তারা হাতের মুঠোয়।

 

আমিতো নারিকেল পাতার ফাঁকে ফাঁকে রূপালী নরম চাঁদ দেখতে ভালো বাসিসেই চাঁদ কই

আমিতো গোলাপ তুলে তোমার খোঁপায় গুঁজে দিতে ভালোবাসি

সেই স্নিগ্ধ গোলাপ কই।

 

তোমাকেতো বলেছি সৌজন্য করেভালো আছি

কি করে ভালো থাকি বলোআসলে ভালো নেই

একদম ভালো নেই আমি।

 

পৃথিবীর ইতিহাসতো লেখা হলো রক্তের কালিতে

এখনো হয়নি ভূমিহীনদের নিজস্ব ঠিকানাহালজোয়াল

ছিঁটেফোঁটা ঘরবাড়ি রোদেলা সুখস্বপ্ন, সভ্যতার রেলে মানুষতো এগুলো সামনের দিকে 

হায় তৃতীয় বিশ্বে ক্ষুধাযন্ত্রণা গেলনা তবু।

 

আমিতো দেখলাস শুধু দেখলাম নিঃশব্দে

মহারাজ সেজে মানুষ মানুষকে করেছে অপমান

কাঁধে বয়ে নিয়েছে মানুষ বড় মানুষের পাল্কী দোলা। 

কতো আর দেখবো বলো কান্না কাতর দরিদ্র মানুষের ময়লা মুখ

নিরভিমান দারিদ্র্যের দুঃখকষ্টকত আর দেখবো বলো এইসব।

 

তোমাকেতো বলেছি সৌজন্য করেভালো আছি

কি করে ভালো থাকি বলোআসলে ভালো নেই

একদম ভালো নেই আমি

 

এমন কি কথা ছিলো মিথ্যে হলেও বলতে হবে ভালো আছি।

 

(ঈশ্বরগঞ্জ , ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ)

 

আগুনে স্বপ্নপুড়ে

তারিকুল ফেরদৌস 

 

স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার

স্বপ্ন ছিল বেঁচে থাকার। 

ঝর্ণাজলে গা ভিজিয়ে

সুখের ঘোরে মেতো থাকার।

হঠাৎ সেদিন কি যে হলো

অগ্নি শিখায় ঝলসে গেল

স্বপ্ন পুড়ে মাটি হলো।

বস্ত্র পুড়ে, দোকান পুড়ে

হৃদয় পুড়ে, শরীর পুড়ে

স্বপ্ন গুলো ঝরে পড়ে 

ঈদের শত আনন্দ পুড়ে

হা কি যে দৃশ্য ভাসে

বঙ্গবাজারে স্বপ্ন পুড়ে। 

 

(জামালপুর, বাংলাদেশ)

 

জ্যোৎস্নায় রূপসা

আবু আফজাল সালেহ

 

ধীরে ধীরে চাঁদ উজ্জ্বল জ্বলছে আকাশে

জলের উপরও

মেঘ ছাড়া আকাশ যেন আদরে পরিপূর্ণ

মধ্যরাতের নবযৌবনা জ্যোৎস্নায়।

 

দখিনমুখী স্রোতের ধারা জ্বলছে, চলেছে  সাপের মতো

পতঙ্গের ডানার মতো ঝাপসা

দুধারে আলো আর কাচের দালান  

জেলেদের গান ভাসে, নিশাচর পাখিরা জেগে

আলো দিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে  রূপসা

হয়তো তোমার দিকেও।

 

বলছে, আমাকে যৌবন দাও, কাজে লাগাও।   

 

(চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ)

 

সময়

পারভেজ হাসান 

 

 

সময়ের সাথে স্রোত বদলায়

বদলে যায় তার রূপ 

পরিবর্তন হয় তার গন্ধ 

তেমনই এক সময় মানুষও বদলে যায়

ঠিক তেমনটাই আমি।

একসময় আমারও কত চাঞ্চল্যতা ছিল 

ছিল কত ব্যস্ততা 

কারণেঅকারণে কত সময় নষ্ট হয়েছে  

কত গুরুত্বপূর্ণ কাজকে অবহেলা করেছি 

কখনো একটু বোঝার চেষ্টা করেনি।

কিন্তু আজ হয়েছি তার উল্টো 

সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে 

নেই কোন উচ্ছ্বাস

নেই কোন চাঞ্চল্যতা,

শুধু আছে একবুক দীর্ঘশ্বাস।

কিন্তু আজ বুঝতে পেরেছি 

সময় বড়ই এক অদ্ভুত 

কখন যে কাকে কোথ থেকে কিভাবে বদলায়

তা ভাবাই যায়না।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কেউ কখনো 

ঠিকে থাকতে পারেনি পারবেনাও

সে তার আপন গতিতেই চলতে থাকে। 

 

(শ্রীমঙ্গল,মৌলভীবাজার, বাংলাদেশ)

 

ঈদের খুশি
সুব্রত চৌধুরী

 

কে   পরালো   সাঁঝ  আকাশে

নয়ন   কাড়া  রূপের  সাজ ?

আকাশ  গায়ে  খুশির  নায়ে

বাঁকা  চাঁদের  কারুকাজ।

 

মেন্দি হাতে আলতা পায়ে

ঈদের গানের সুরে  সই,

বাঁকা চাঁদের হাতছানিতে

বল না কেমনে দূরে রই।

 

কোরমা পোলাও মন্ডা মিঠাই

ঘরে ঘরে পড়ে ধুম,

খিড়কি গলে ঈদের চাঁদে

খুকুর গালে দেয় যে চুম।

 

রাত পোহালে ঈদের নামাজ

মনোবীণায়  খুশির  সুর,

ঈদের দিন তাক ধিনা ধিন

মন হারাবে অচিনপুর। 

 

(আটলান্টিক  সিটি , নিউ জারসি ,যুক্তরাষ্ট্র)

 

বঙ্গবন্ধু 

অরণ্য আপন 

 

মাগরিবের আজান তোমার শূন্যতা ঘিরে থাকে

আজানের ভিতর পাখির বাসা 

সেখানে তুমি কিচিরমিচির কর

যেন তুমি আজই নরক থেকে ছাড়া পেয়ে বাংলাদেশে এলে

যেন তুমি মুক্তির কথা বলে কণ্ঠে দিলে গান ঢেলে 

তুমি সে সুর

যাকে পথ করেছে রোদ্দুর

 

তোমার মুখটা নদীর মতো 

চোখের ওপর এসে অশ্রুর মতো দাঁড়ায় 

 

অনেক রাজনীতি করে যে ফসল আসে ঘরে

তাও তো ফুরিয়ে যায় 

আমরা জানি গাছ বেঁচে থাকে তার শাখাপ্রশাখায় 

 

( ঢাকা, বাংলাদেশ)

 

মূর্তি নদীর ধারে

অভিষেক ঘোষ

 

মুঠো মুঠো বুনো ফুল কুড়িয়েছিলাম;

দূরে সবুজচিত্রার্পিত, হাতিরা কোথায়!

নুড়ির বিছানা ধুয়ে বইছিল লঘু জলধারা,

আমার ক্লান্ত পাদুটো চুপ করে

থেমে ছিল সেই ডুবজলে!

আদরের মতো নরম কোনো পাখির গান

সেই মুহূর্তে কানে ভেসে আসে।

এমন একটা সময় তখন, যখন 

কোনো ইতর শব্দ মনেও আসে না।

গামছা বা হাতঘড়ির মতো শব্দগুলোও

বেমালুম মুছে যায় মাথা থেকে।

মনে হয়, ওই নদীটির দীঘল চোখে চোখ রেখে,

নেমে যাই, যতদূর নেমে যাওয়া যায়!

গভীরতা নাই বা থাকুক, প্রসারতাও নিরর্থক নয়।

 

(পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)

 

ঘনরোয়া নলখাগড়া

নুরুন্নাহার মুন্নি

 

কুয়াশা ভোর- সাঁওতালি গ্রাম,

খই ফোঁটা ঘ্রাণ পাহাড় ভেঙে কৃষ্ণচড়া ছুঁয়ে যায়,

আমি বকশীতল স্নান গায়ে কাঁদা মেখে আবার ডুব দেই

প্রকৃতির সংলাপবিহীন আচরণ আমাকে জংশন চিনিয়ে দেয়

আমি নেমে যাই অচেনা গন্তব্যে,

পথশিশুর হাতে অসময়ের কদমফুল কিছু চিহ্ন ছুঁড়ে দেয়,

অগোছালো বাক্য আমার জন্য তোলা থাকে

বুঝতে না পারার অপরাধ মৃত গাছের মতো সাক্ষ্য দেয়

তবুও আমি স্বপ্ন মাড়িয়ে চলি,

পাহাড়ের কটাক্ষ চাহনি-উজাড় হয়ে যাওয়া ঘনধোয়া বন

আমাকে উপহার দেয় বিভিষিকার খেতাব,

প্রেম নেই চলন্ত পথের ট্রেন অবরোধ করে মুকুলের ঘ্রাণ

আমি ফিরে যাই কোন কারফিউ নগরীতে।

 

 

(চাঁদপুর, বাংলাদেশ)

Leave a Reply