You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

 

জোনাকী জীবনের গল্প            

 

একটা গল্প বলতে চাই, শুনবে কী তুমি?

সময় হবে কী আগের মতো, কোন গল্প শোনার?

 

একটা স্বপ্ন বেড়ে উঠার গল্প,

বিরুদ্ধ  স্রোতের মাঝে সাঁতার কাটার গল্প,

হার না মানা অদম্য স্পৃহার গল্প।

চলতে চলতে পথ হারাবার গল্প,

আঁধারের বুকে পথ চলার গল্প,

উড়তে উড়তে হঠাৎ নিভে যাওয়ার গল্প,

একটা জোনাকী জীবনের গল্প!

 

নিস্তব্ধ রাতে, নিঃশব্দ পায়ে হেঁটে যাওয়ার গল্প,

নিথর তারাদের সাথে একাকী কথা বলার গল্প,

আঁধার রাতে নিঃসঙ্গ চাতকের বিলাপ শোনার গল্প,

হিম শীতল রাতে একটু উষ্ণতার আশায়

দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকার গল্প!

 

শিউলী ঝরানো প্রভাতে ফুল আর

স্বপ্ন কুড়ানোর গল্প,

চাঁদনী রাতে জোছনা ভেজা দেহে

ঘুরে বেড়ানোর গল্প,

আস্থা আর বিশ্বাস হারানো এক ভবঘুরে জীবনের গল্প;

উচ্ছ্বাস আর আবেগে জীবনের হিসাব মিলাতে গিয়ে

হিসাব মিলাতে না পারার গল্প।

 

যে জীবন দীপ্তি ছড়িয়ে, প্রভাত কিরণের ছোঁয়ায়

নিঃশব্দে যায় মিলিয়ে; কিংবা আঁধারের বুকে

যে নিজেকে জ্বালিয়ে রাখে পথিকের মন জুড়াতে,

পথিক রাখে না মনে তারে কোন কালে;

তেমন কোন হেমন্তের শিশির কিংবা জোনাকী জীবনের গল্প!

 

একটা গল্প শোনাতে চাই তোমারে,

কোনটা শুনবে তুমি? এতো এতো গল্পের ভীড়ে।

 

উল্টো পথের যাত্রী

আমি চাইনি কভু আমার হৃদয়ের গহীনে তুমি কড়া নাড়ো,

তুমি তা নাড়লে তবু, তোমারই ইচ্ছায়,

বার বার, যতক্ষণ হয়নি খোলা দ্বার।

আমি চাইনি আমার মনোগৃহে প্রবেশ করো তুমি,

তবু করলে তা, যেন এটা তোমার অধিকার।

আমি চাইনি তুমি আমার হাত ধরো,

তবু তুমি ধরলে তা, তোমার ইচ্ছে মতো;

সবার মাঝখানে টেনে দিলে বিশাল লাল দাগ,

যেন হাত শুধুই তোমার।

 

আমি চাইনি আমার সাথে তুমি সেঁটে থাকো সারাক্ষণ,

কারণে অকারণে, সব খানে;

ক্লাশের বেঞ্চেতে, অলস সময়ে সেমিনার রুমে,

ক্যাফেটেরিয়ায়, লাইব্রেরীতে, ক্যাম্পাসের আনাচেকানাচে,

যখন ইচ্ছে তোমার, এখানেসেখানে;

কিংবা ঝুল বারান্দার রেলিংয়ে গা এলিয়ে,

দাঁড়িয়ে পাশাপাশি, দখিণা হাওয়ার মাদকতার সাথে

শরতের নীল আকাশের মেঘ দেখো, এবং আমাকে দেখাও;

তবু তা দেখলে তুমি এবং হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে

আমাকেও দেখালে।

 

আমি চাইনি বারুদের গন্ধে অভ্যস্ত নাকে

তুমি ফুলের গন্ধ শুঁকতে দাও,

আমার অনভ্যস্ত নাকে তুমি তা শুঁকালে;

রজনীগন্ধার মিষ্টি সুবাস বাতাসে ছড়িয়ে,

কখনো হলুদ করবী, কখনো বা বকুল ছিটিয়ে,

কিংবা তোমার ঝাঁকরা চুলে লাল টুকটুকে গোলাপ গুঁজে,

কাঁধে মাথা রেখে, চুল এলিয়ে,

চারিপাশে ছড়িয়ে থাকা পোড়া গন্ধ সব

চাইলে তুমি মুছে দিতে;

আমি চাইনি আমার অনিশ্চিত কাঁধে মাথা রাখো,

তবু তুমি নিশ্চিন্তে তা রাখলে।

 

এমন চাইনি কিছু; তবু চলতে চলতে নিজেকে হারাই,

কোন অজানা ছোঁয়ায় অজান্তেই বদলে যাই,

অদম্য মনের দুর্বার ঘোড়ার মুখে লাগাম পরিয়ে,

উত্তপ্ত রাজপথের মিছিল ছেড়ে নিজেকে লুকাই;

বারুদের গন্ধ ছাপিয়ে আমার নাসারন্দ্র তখন

শুধুই গোলাপ, বেলী, হাসনাহেনা, করবীদের গন্ধ পায়।।

 

 

ভাঙ্গনের ক্ষণাবলী

কোন প্রশ্ন ছিলো না সে দিন তোমার,

আমারও হয়নি করা কোন প্রশ্ন তোমাকে আর;

শুধুই নিস্তব্ধতা, স্থির ভাষাহীন সময়

চোখে চোখ রেখে, বসে মুখোমূখি

শুধু তুমি আর আমি!

 

শব্দহীন এক ঘর, মুখোমূখি পরস্পর,

কিছু লাজ, কিছু দ্বিধা,

তবু বলতে হবে কথা;

কী দিয়ে শুরু হবে কথন

হাতরিয়ে বেড়ায় দুটি মন,

শুধুই অযথা!

 

সময় চলেছে বয়ে, মস্তিষ্কে ভাবনার ঝড় তুলে

তবু পায় না সে খুঁজে ভাষা,

যা বলিতে চায় মন, লে যায় পরক্ষণ,

দুজনেরই একই দশা।

 

হৃদয়ের উত্তাপ বাড়ে, তবু বলিতে পারে নারে

যা আছে বলার,

শুধু শূণ্যতা, শুধু হাহাকার,

ক্ষণগুলো যেন আজ শুধু হারাবার।

বেদনার নীল ছাপ ছড়িয়ে দেহ মনে

সময় যেন আজ চলেছে বয়ে

কষ্টের ঢালি খুলে, অজানার পানে;

দু’চোখে যায় না দেখা কিছু তার,

নেই তো এমন কিছু জগতে হায়

যে মাপিতে পারে এই বেদনার ভার!

 

বসেছিনু দু’জন সেদিন মুখোমূখি,

বলিতে কিছু কথা, কিংবা লিতে নিরবধি;

কিন্তু হয় না কিছুই বলা দুজন দুজনারে,

শুধুই ছল্ ছল্ নয়ন, করিতেছে স্মরণ

অতীতের যত স্মৃতি;

হৃদয় হৃদয়ের টানে, সাড়া দিতে চায় আনমনে,

বাকী পথ দিতে পাড়ি;

হায়! যে পথ গিয়েছে বেঁকে,

কালের চক্রে হঠাৎ দু’দিকে,

সে তো আর মিলিবার নারি!

তাই ঘটনার ব্যবচ্ছেদ করে,

দু’জনের শুধুই দীর্ঘশ্বাস বাড়ে;

অবশেষে পথ চলায় যতি।।

 

শেষ যাত্রার দিনে

আমি যে দিন ঘুমিয়ে যাবো সবার মায়া ছেড়ে,

ঘয়তো সেদিন আসবে তুমি, দেখতে আমায়

গব মানুষের ভীড়ে।

ব্যস্ত বে সবাই যখন আমায় বিদায় দিতে,

ওপার থেকে খুঁজবো তোমায় , একটু দেখে নিতে।

তোমার মনে পড়বে সেদিন অনেক স্মৃতি, অনেক কথা;

মুছবে তুমি চোখের জল, আড়াল কওে নিজের ব্যথা।

হয়তো কেহ দেখবে না তা,

শুনবে না কেউ বোবা কান্না;

অঅমি তখন বাতাস হয়ে মুছে দিবো,

তোমার চেখের জলের বন্যা।

 

আমার দেহ বে পড়ে,

গাছের ছায়ায় গোরের ধারে;

আসবে না আর কেহ তখন,

বুকে নিতে আদর করে।

তুমি জানি দাঁড়িয়ে বে,

বিষাদ ভরা উদাস চোখে;

বাতাস যদি ছোঁয়ায় পরশ,

তোমার চোখের পাতারপরে

মনে করো, মুক্তপ্রাণ আমিই তোমায়

 

জড়িয়ে আছি বুকে ধরে।।

শামীম ইমাম, কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার দিলালপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়ীয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬৮ সালের ৩১ শে ডিসেম্বরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম এম. ইব্রাহীম এবং মাতা মরহুমা ফজিলত উন্ নেসা। তিনি ঢাকা বিভাগের অধীনে ১৯৮৬ সালে এস এস সি, ১৯৮৮ সালে এইচ এস সি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ১৯৯১ সালে অনার্স এবং ১৯৯২ সালে মাস্টার্স পাশ করেন।

 

পড়াশোনা শেষে তিনি দেশের বৃহত্তম এনজিও ব্রাকে যোগদানের মাধ্যমে কর্ম জীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ব্র্যাক ত্যাগ করে প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করতে থাকেন। বর্তমানে একটি বৃহৎ জয়েন্টভেঞ্চার কোম্পানীতে মানব সম্পদ এবং প্রশাসন বিভাগের প্রধান হিসাবে কর্মরত আছেন।

শামীম ইমাম
কবি

Leave a Reply