শব্দকুঞ্জ বর্ষা কদম্ব সংখ্যা
শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা
শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা
আবার যখন দেখা হবে
আবার যখন দেখা হবে, অনেক দিনের পরে এসে
বসবো মোরা মুখোমূখি, অনুভবে থাকবো পাশে;
কি পেলেম আর কি হারালো- অভিমানে, রাগের বশে,
হিসাবগুলো মিলিয়ে নিবো, না হয় মোরা মিলেমিশে।
আবার যখন দেখা হবে, তুমি হয়তো আধপ্রৌঢ়ি হবে,
ঘন কালো কেশের ভাঁজে, শুভ্র কোন কেশ গজাবে;
আমার ধূসর চুলের মাঝেও, সেদিন হয়তো পাক ধরিবে,
তুমি হয়তো হঠাৎ করে চিনতে আমায় ভুল করিবে;
আমি ঠিকই চেনে নিবো, তোমার চুলের গন্ধ থেকে।
আবার যখন দেখা হবে, মেপে নিবো কষ্টগুলো
এক এক করে সঠিক ভাবে, কার কাছে কি জমা আছে;
রাখবো সবই পাশাপাশি, কার কষ্টের ওজন বেশী
হিসাব করে দেখে নিতে।
আবার যখন দেখা হবে, কোন রোদ ছড়ানো বৈশাখীতে,
কৃষ্ণচ‚ড়ার রঙের সাথে রাঙিয়ে দিবো স্মৃতির পাতা,
বুকের ভিতর জমে থাকা, হতাশা আর নীলাভ ব্যথা
উবেয়ে দিবো সযতনে, শুনিয়ে তোমায় জমানো কথা।
আবার যখন দেখা হবে, আকাশ ভাঙ্গা বর্ষা দিনে,
তপ্ত হৃদয় শীতল হবে, রঙ ছড়াবে সঙ্গোপনে।
টাপুর টুপুর সুরের মাঝে, জলকেলীতে উঠবো মেতে
পদ্মদীঘীর সফেদ জলে, জোড়ায় জোড়ায় হাঁসের সাথে;
ডুব সাঁতারে মত্ত হবো, পদ্মরেণু গায়ে মেখে
কষ্টগুলো ঝরিয়ে দিবো, রাজ হংসের পাখার মতো
পুকুর জলে ছড়িয়ে দিয়ে।
আবার যখন দেখা হবে, কোন শিশির ভেজা শরৎ কালে,
হয়তো তুমি ব্যস্ত রবে আপন মনে ফুল কুড়াতে;
শিউলি ঝরা ঘাসের ’পরে, জীবন নিয়ে ভাবছো তখন
নিঃশব্দে ঠাঁই দাঁড়িয়ে, অলখে তোমার নয়ন ভিজে
স্মৃতিগুলো সব আসছে ফিরে।
আমিও তখন আপন মনে, হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো
একে একে মিলিয়ে নিবো, পাশে থেকে তোমার সাথে।
নীল আকাশের মেঘের ভেলায়, চাপিয়ে দিয়ে কষ্টগুলো
দু’জন মিলে পাঠিয়ে দিবো, দূর আকাশের অসীম পানে।
আবার যখন দেখা হবে, কোন সুদূরের মেঠো পথে,
হেমন্তের গন্ধ ভরা, প্রশান্ত এক দিনের প্রাতে,
শিশির ছোঁয়া ধানের শীষে, জোড়ায় জোড়ায় প্রজাপতি
আলিঙ্গনে উঠছে মেতে;
জোড় শালিকের কলতানে, অনেক কথা পড়ছে মনে,
তুমি তখন ফিরে গেছো স্মৃতি ঘেরা অতীত দিনে!
আবার যখন দেখা হবে, রঙ হারানো শীতের শেষে
ঝরা পাতা পড়ে র’বে, বিস্তীর্ন ঐ চলার পথে;
সেদিন মোরা দু’জন মিলে, অভিমানের ঝুরি খুলে,
দেখবো সেথায় কি আর আছে; গুণে গুণে জড়ো করে,
একে একে ঝরিয়ে দিবো, শীতের ঝরা পাতার সাথে।
বসন্তের গন্ধ মাখা নতুন কুঁড়ির সুবাস নিয়ে,
বসবো আবার পাশাপাশি, ভুলগুলো সব নিবো মেপে
কার কম আর কার বেশী, সাজিয়ে রেখে এক সাথে;
সব ভুলকে চাপা দিবো, চির দিনের জন্যে সেদিন,
আর যেন সে ফিরে না আসে।
আবার যখন দেখা হবে, বসন্তের মাতাল হাওয়ায়
দু’জন মিলে মগ্ন র’বো, নতুন পাতার নরম ছায়ায়,
সব কষ্ট ভ‚লে সেদিন, অভিমানের বাঁধন ছিঁড়ে,
নতুন ভাবে জড়িয়ে র’বো, প্রশান্তি আর পরম মায়ায়।
বিরহ যাতনা কাল
বাদল ধারায় ছেয়ে আছে চারিপাশ,
অজানা কোন শোকে যেন কাঁদিছে আকাশ;
তার মাঝে এক বিরহিনী একাকী নীড়ে সেথায়,
ঐ দূর পথ পানে চেয়ে আনমনে,
প্রিয়কে খুঁজে ফিরে নিদারুণ ব্যাকুলতায়।
বাতায়ন পাশে দাঁড়ানো কদম্ব তরু,
তারই দেহ বেয়ে শ্রাবণের জল ঝরে ঝরো ঝরো,
অলখে শীতল ছোঁয়া লাগে দেহ-মনে;
ঝিরঝির হাওয়ার তালে, কদম্ব শাখা দোলে,
বিরহিনীর মনও যেন তার সাথে উঠে দোলে;
দুরু দুরু বুকে চেয়ে রয় পথ পানে,
উতলা হৃদয়ে কি যেন সে চায় বারে বারে,
আকুতি জাগে তারি সনে;
হায়! প্রিয় যদি আসিতো এমন বরিষণে!
ঝরিছে ঝর ঝর শ্রাবণের ধারা,
ঘুমন্ত ইন্দ্রিয়গুলো দিতে চায় সাড়া
যদি প্রিয় এসে ডাকে তারে;
সাজিয়ে প্রেমের ডালা, পথ চেয়ে বসে আছে প্রণয়ী ঐ,
কামনার পাঁপড়ি মেলে কদম্ব ফুল যেমন শাখায় ফুটে রয়,
হায়! তবু প্রিয় কেন আসে নারে!
বিরহ যাতনার ভার, বহিতে পারে না সে আর,
হৃদয় কাঁদে ক্ষণে ক্ষণে;
কেন প্রিয় আসে না কাছে? কোন অভিমানে?
হায় প্রেম! অবুঝ প্রেম!
মানিতে চায় না কোন বাঁধা,
চারিপাশে রাত নামে, তবু চোখ ঘুম হারা,
গুমরে গুমরে কাঁদে হৃদয়, আঁখিতে শ্রাবণের ধারা।
এমন শ্রাবণ রাতে, প্রিয় বিহনে
কাটে না সময় তার, বেড়ে চলে বেদনার ভার,
হৃদয় খুঁজেছে যারে, পায় না তো কাছে তারে
শূণ্যতায় শুধুই বাড়ে হাহাকার;
বাহিরে শীতল হাওয়ার ছোঁয়ায়, কদম্ব পাাঁপড়িগুলো ঝরে যায়,
তবু শীতল হয় না বিরহিনীর হৃদয়, প্রশান্তি যেন অধরা;
অদৃশ্য অনলে জ¦লছে মন, হৃদয় পুড়ে ছাড়খার,
যেন চৈত্রের খরা।।
নিঃসঙ্গ যামিনী বিলাস
তিমির যামিনীতে আজও আকাশ দেখি,
শুকতারার সাথী হই, পূর্বাকাশে ঢলে পড়া অবধি;
চেয়ে চেয়ে দেখি একা, নিঃশব্দে ঝরে পড়া
দু-একটা অভিমানী উল্কার মিলনের ব্যাকুলতা;
কি এক মায়ায়, দুর্নিবার টানে পৃথিবীকে আলিঙ্গন করবে বলে
নিজেকে বিলীন করে দেওয়ার দৃশ্য;
আমি আকাশ পানে চেয়ে থাকি, কান পেতে রই
শুনিতে তার অব্যক্ত হাজারো কথা, সযতনে আড়াল করে রাখা
গোপন কষ্টের ইতিহাস,
জমে থাকা বেদনার ভার, আর মাঝে মাঝে
বুক চিড়ে বের হয়ে আসা দীর্ঘশ^াস।
দূর মহাকাশ থেকে চেয়ে দেখা পৃথিবীর প্রেমের টানে,
একটু স্পর্শের জন্যে, অন্ধের মতো ছুটে আসা
হাস্যোজ¦ল দেহের অপমৃত্যু।
কিংবা পৃথিবীর স্পর্শ পাওয়ার আগেই অতৃপ্ত হৃদয়ে
মরণ যাত্রার পরম তৃপ্তির দৃশ্য;
এমন শত সহস্র ঘটনা, রয়ে যায় লোক চক্ষুর অন্তরালে,
শুধু কালের সাক্ষী হয়ে, এ আকাশ আর মাটি
ধরে রাখে তার স্মৃতি, কাল থেকে কালান্তরে;
হয়তো অনেক মানব চক্ষু পায় না দেখিতে তারে,
কিংবা ইচ্ছেই জাগে না কোন মানুষের, তা দেখার
একটু ক্ষণের তরে।
আমি চেয়ে দেখি রাতের অন্ধকারে উল্কার ধেয়ে আসা,
মোহগ্রস্থ প্রেমিকের মতো পৃথিবীকে কাছে পাওয়ার দুর্বার বাসনা,
নক্ষত্রের আলোয় মিলিয়ে যাওয়া না পাওয়ার বেদনা,
শুনতে পাই নিস্তব্ধ আকাশে ভেসে বেড়ানো নিঃশব্দ হাহাকার;
যেন হাজারো মানুষ আর উল্কার হৃদয়
এক বিন্দুতে মিলেমিশে একাকার।