শব্দকুঞ্জ বর্ষা কদম্ব সংখ্যা
গল্প: সুরকার
সিয়াম আল জাকি
গল্প
সুরকার
সিয়াম আল জাকি
কংক্রিটের সীমানা সাক্ষী হয়ে গেছে তার পথচলার। কালো রঙের সাথে মিশে গেছে খুনীর খুন করার প্রমাণ। নেমে গেছে সকল সফলতা উদযাপনের মুহুর্তের পারদ। জেগে উঠেছে যে জেগেছিলো কিন্তু থেকে গিয়েছিলো আড়ালে। কান পেতে থাকবে এখন থেকে সে প্রতিটি মুহূর্তের আবেগহীন দরজায়। শত শত সিনেমার হিরোদের ট্রাজিডি উপহার দিতে সে এখন বদ্ধপরিকর। তাকে ফেলে দেওয়া যাবেনা, অবহেলা করা যাবে না এবং রক্ষা করাও যাবে না। সকল ব্যাখ্যাকে পাশ কাটিয়ে সে এগিয়ে চলবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে যেখানে অপেক্ষা করছে সুরের মূর্ছনা।
সুনসান নীরবতা দেখে কিছুটা ইতস্তত বোধ করে মানবো। এই শহরে সে নতুন। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে অবশেষে সে এই শহরে এসে পৌঁছেছে। শুনেছে এই শহরের লোকজন ব্যবসামুখী। সুতরাং বুঝতে পারা যায় যে এরা মানুষ হিসেবে হয়তো খুব একটা আন্তরিক হবে না। অন্তত তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এমন সিদ্ধান্তে এসে পৌছানো যায়। এর আগে এই শহরের খুব কাছে অবস্থীত অন্য একটি দেশের এমন একটি শহরে যেয়ে তার এমন ধারণা তৈরি হয়েছে। সেখানে একটি চিকেন তন্দুরির দাম শুনে সে হতবাক হয়ে যায়। পরে শুনতে পায় এসব মাংসে অন্য কোনো প্রাণীর মাংস মেশানো থাকে।
এই শহরের অবস্থান সমুদ্রের পাশে। জানুয়ারি থেকে মার্চ অবধি এইরকম শহরগুলোতে অট্টালিকার আশেপাশে কুয়াশা পাহাড়ায় থাকে। কাছে ঘেঁষতে পারা যায় না তখন বিরাট বিরাট অট্টালিকার। মানবো যে কাজ করতে এসেছে সে কাজ করার উপযুক্ত সময় বলা যায় এখন।
মানুষ এখনো শুনতে পায় ভালোই। কয়েকদশক আগে শুনতে পেতো না। যদিও কে মানুষ আর কে অন্য কোনো কিছু সেটা নির্ণয় করাটাও হয়ে গিয়েছিলো কঠিন। মানবোর পিতা রঁদেভু সবুজ জঙ্গলে বাস করে টের পাচ্ছিলেন তাদের ডাক এবার এলো বলে। মানব সমাজে তাদের প্রয়োজন দেখানোর সময় চলে এসেছে। পুত্র সন্তান এর জন্য তিনি শুরু করেন তপস্যা। তপস্যার বলি হয়ে জন্ম নেয় তার সন্তান মানবো।
মানবো হাটতে থাকে। তার সঙ্গে আছে সবুজ রঙের বাঁশী।” সুর আছে সেখানে মানুষ থাকে যেখানে ” পিতার কথা স্মরণ করে সে। মানুষ মধ্যে লুকিয়ে আছে সেই সুর যা কিনা তার আরাধ্য সেই সুরকে খুঁজে বের করা তার কাজ। দক্ষিণে এক পাহাড়ের কাছে তার মূল আশ্রম। সেখান থেকে তার উদ্দেশ্যে বার্তা আসে যে কোথায় এখন তাকে যেতে হবে। তার জানা মতে সমুদ্রের কাছের শহর গুলোতে সুর এর প্রয়োজন বেশী। আদিকাল থেকে সমুদ্র প্রধান আশ্রয়স্থল মানুষের। তার কাজ চলে এই সমুদ্র থেকে। সমুদ্র সেই অসীম আত্মার সবচেয়ে নীর্ভরযোগ্য ক্ষুদ্র বাহক। শহরের রাস্তায় এখন মানুষজন কম। চৌরাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ দাড়িয়ে আছে। সবুজ রঙের কাপর দেখে দূর থেকে ভ্রম হয় যে একটা প্রায় শুকনো গাছ দাড়িয়ে আছে একদম মাঝখানে। শহরে এদের এড়িয়ে চলায় ভালো। এদের মধ্যেও যে সুর থাকতে পারে মানবো জানতো না। কিন্তু, মানুষ যেহেতু সুর থাকাটা আবশ্যক। মানবো সবুজ রঙের যেকোনো কিছুকে পছন্দ করে এদের ছাড়া। এমনকি উত্তরের এক শহরে সবুজ রঙের চোখ আর ঠোঁটের একটি মেয়ের সাথে সে সঙ্গম করেছিলো। যে ছিলো সেই অঞ্চলের রাণীর দাসী। তার উপর নেমে এসেছিলো নিষেধাজ্ঞা তখন। রুষ্ট সবাইকে তুষ্ট করতে মানবো তখন পাড়ি দিয়েছিলো পিতার অতীতে। পিতার অতীত অতিক্রম করার যে পথ সে পথ যে কতটা দূর্গম তা বোধহয় মানবো ছাড়া কেউ জানে না।
মানবো দেখতে পায় শহরের একদম শেষ সীমানায় কিছু হলুদ আলো নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে গৌরবের সাথে। এখন এসব আলোয় মানুষের ঘুম ভাঙে। সূর্য মুখী ফুল মারা গেছে বহুকাল হলো কারণ সূর্য এখন সূর্যের আলোর মতো সোনালী অতিত। মানুষ ভুলে গেছে তার আলোকিত হওয়ার অস্তিত্বকে। মানুষের সামনে যে দেয়াল আছে তা অনেককিছু মানুষকে ভুলিয়ে দিতে চায় আজকাল। মানুষ ভেবে রেখেছে যে তার সামনে একটি দেয়াল উপস্থিত। তাকে ডিঙিয়ে ঐ পারে যাওয়া অসম্ভব।
দেয়ালের অবস্থান বর্তমানে পৃথিবীর প্রতিটি শহরের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে আরো অনেক দূর। আসলে এই দেয়াল মানসিকতাকে করেছে খন্ডিত। এই শহরে দেয়ালের অস্তিত্ব আছে। শহরের পিএসএস মোড়ের রাস্তার ঠিক উল্টো পাশে। মানবো এমন কিছু দেখতে পায় না আদতে। দেখতে পারার কথা নয় যদিও। দেয়াল শব্দ শুনলেই চোখের সামনে যা ভেসে আসে তেমন কিছু নয় এই দেয়াল। দূর্বল মানসিকতার কারণে মানুষ ধরে নিয়েছে যে তার সেখানে যাওয়ার যোগ্যতা নেই। ঐ পার যারা নিয়ন্ত্রণ করে তারা অনেক উন্নত। উঁচু জাতের কেউ। তারা কী আসল৷ কেউ? বা ঐ পারে যা আছে সেটাকে তারা বলে সম্বোধন করার উপায় আছে?
আসলে ঐ পার যেটা মানসিক দূর্বলতার জন্য তৈরী দেয়ালের ঐ পার তা মূলত প্রোগ্রাম ওয়ার্ল্ড।
ওখানে সবকিছু চলে মসৃণ গতিতে। কোনোকিছুর দরকার নাই। সেখানে শুধু কমান্ড থাকে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদেশ, নিষেধ, উপদেশ থাকে। কী করা উচিত বা না উচিত তার জন্য আছে পরিকল্পনা। ওখানে প্রয়োজন নেই বিভিন্ন মতের মধ্যে চলতে থাকা বিরোধের অবসান করা। কারণ সেখানে ভিন্ন মতে নেই কোনো। তারা নিজেরা নিজেদের সৃষ্টি করে। সৃষ্টি করে নতুন ভাবনা। ওখানে আসলে প্রাণ নাই। যা আছে তা হলো আইডিয়া। এই আইডিয়া তৈরী করে নতুন নতুন চিন্তা। সে আবার নিজেকে মানিয়ে নেই। ঐ চিন্তার জগতে রক্ত মাংসের মানুষের প্রয়োজন নেই আর। শুধুমাত্র দশজন মানুষ সেখানে থাকে। তারা কমপ্লিট ডিক্টেটর।
নজরদারি করা তাদের কাজ নিয়ম বানিয়ে দেওয়া তাদের নেশা। বন্দী করে রাখা তাদের পেশা। শুধুমাত্র সেইসব চিন্তাকে তারা প্রশ্রয় দেয় যেগুলো তাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। তাদের পরবর্তী দশজনও তৈরী হয়ে আছে। দুইশো বছর টাইম লিমিট একেকেটা টিম টেন এর। তারা টিম টেন এর দশম ব্যচ৷
মানবো সবকিছু ঠিকঠাক আছে কীনা বুঝতে পারছে না। রশ্মির পরিমাণ বেশী ছড়িয়ে দিয়েছে তারা। বুঝতে পারা যায় যে মানবোকে তারা ভয় পাচ্ছে। মানবোর উদ্দেশ্য তারা বুঝতে পেরে গেছে যখন সে আরিকা শহরে নিজের ক্ষমতা দেখিয়েছিলো তাদের। তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী জোন গুলোর একটা সেটা। হকচকিয়ে গিয়েছিলো তারা মানুষের ভাবনার পরিবর্তন দেখে। নজরদারি করার জন্য যে রশ্মি ব্যবহার করা হয় তার প্রভাব ক্রমশ কমে আসছিলো। কালোজামা পরিহিত এক যুবক আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছিলো সেই অদৃশ্য দেয়ালের কাছে৷ হঠাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই সে অতিক্রম করে ফেলে সেই দেয়াল। শহরের সেই উন্মাদ আসলে তখন অতিক্রম করো ফেলে একটি কাল। তার দেখাদেখি অন্য অনেক মানুষও অতিক্রম করে ফেলে সেই অদৃশ্য দেয়াল। যে দেয়াল কিনা আসলে মানসিকতার দেয়াল। তাদের দূর্বলতার প্রতীক।
এই খবর অন্য প্রান্তে খুব একটা পৌঁছালো না। যোগাযোগ নিয়ন্ত্রিত হয়ে আছে। তথ্য ও বন্দী হয়ে আছে সেই শক্তির দখলে। কারণ মানুষ ঠিকঠাক অবস্থা নেই। মানবোর মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষ আসলে কোনদিনই ঠিকঠাক হতে চায় না। এই ঠিক হওয়াটাকে সে বড্ড বেশি ভয় পায়। এই নিয়ন্ত্রিত অবস্থাকে সে পছন্দ করে। কারণ হয়তো তাকে এবং তার চিন্তাকে অন্য কিছু একটা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে তার পরিশ্রম হয় কম। আর কে না জানে যেখানে নিজের পরিশ্রম কম হবে মানুষ আসলে সেখানেই নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন দিতে সদা তৎপর থাকে। মানবো চিন্তা ভাবনা করে বুঝতে পারছে যে এইসব ভাবনা তাকে তার মূল কাজ করতে দিচ্ছে না। মানুষের ভেতর নিয়ে পরেও ভাবনা চিন্তা করা যাবে। আগে যে শৃঙ্খলের মধ্যে মানুষ ঢুকে পরেছে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করাটা জরুরি বিষয় হয়ে পড়েছে।
মানবো তার আশ্রমের দিনগুলোতে ফিরে যায়।
আশ্রমের সঙ্গেও কিন্তু বাইরের জগতের একটা দেয়াল তৈরী হয়ে আছে। মানুষের ক্ষমতা আছে এই দেয়াল ভাঙার। সমস্যা হচ্ছে এই দেয়াল তৈরী হওয়ার পেছনে অদৃশ্য শক্তির কোনো অবদান নাই। মানুষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে এমন কিছুকে। তাদের কাছে এসবের এখন মূল্য নেই। জীবনের সাথে যায় না এমন কিছু এসব এখন। এক কথায় প্রকৃতির সাথে বিচ্ছিন্ন করে নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন দেওয়া। মোহ ত্যাগ করার নামে অন্য কিছুর কাছে নিজেকে বেঁচে দেওয়া। এই ক্রয় বিক্রয়ের খেলায় সংকটে পরে গেলো এই ভুবন।
মানবো আক্ষেপ এর সুরে তার গুরুদেবকে জিজ্ঞেস করে মানুষ এমন কেন? যদি তারা এভাবেই বেঁচে থাকতে চায় তবে তাদের জন্য এতো আয়োজন এতো সংগ্রামের কোনো প্রয়োজন আছে? তারা কী এমন পরিণতির যোগ্য না?
গুরুদেব চুপ থাকেন দীর্ঘ এক কথার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমনটাই সে ধরে নেয় ।
গুরুদেব বলেন ” তারা কী কাজ করছে কী ভাবছে তাতে গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। তাদের পরিচালিত করতে হবে সঠিক পথে। যে পথ তোমার আমার ও তাদের মাধ্যমে তৈরী হবে। বর্তমানে তারা পথ হারিয়ে ফেলেছে। নিজেদের করণীয় কী সে ব্যপারে নিশ্চিত নয়। সবচেয়ে খারাপ কথা তারা মানিয়ে নিতে হবে এমন যুক্তিতে অটল অবস্থান নিয়েছে। তাদের অনুধাবন করতে হবে নিজেদের অস্তিত্বের গুরুত্ব। তাদের মধ্যে যে সুর আছে যা কীনা মূলত বেঁচে থাকার মূল প্রাণ সেটা তাদের মধ্য থেকে তুলে আনতে হবে। যে কাজ তুমি করবে। তোমার পিতা করতে পারবে না। তার সেই ক্ষমতা বর্তমানে নেই। সেই অসীম এর আশীর্বাদ প্রাপ্ত রঙের তৈরী বাঁশী বাজানোর দক্ষতা তোমাকে অর্জন করতে হবে। বাঁশীর ব্যবহারের কিছু সময় আছে। কিছু নিয়ম আছে। বাঁশী ব্যবহার করতে হবে সন্ধায়। সূর্যের আর হারিয়ে ফেলা নিজের অস্তিত্বের জন্য সমবেদনা থাকতে হবে এই বাঁশী ব্যবহার করার সময় । “
মানবো বুঝতে পারে এই বাঁশী শুধু বাজালেই হবে না। বাজানোর সাথে অনুভূতির যোগাযোগ যথেষ্ট পরিমাণে না থাকলে কাজে আসবে না এটি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বাস। গুরুদেব আরো বলেছিলেন কোনোভাবে যেন মানুষের উপর বিশ্বাস হারিয়ে না ফেলা হয়। মানুষের উপর বিশ্বাস রাখাটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে শহরের লোকালয় আর লাল মাঠ গুলোতে যেসব মানুষ থাকে তাদের মধ্যে এসবের কোনো প্রভাব পরে না। দৈনন্দিন জীবন তারা উপভোগ করে। রাজনীতি তাদের পোষা কুকুর। লাল মাঠের লাল রঙ পোষা কুকুরের হিংস্রতার ছোট উদাহরণ। এখানে পোষা কুকুর গুলো ঝাপিয়ে পরে এই লাল মাঠে তাদের মালিকদের শত্রুদের উপর। মালিকদের হুকুমে তারা এই কাজ করে। লাল মাঠে মূলত মেলা বসে। লাল মাঠের এই মেলা অযোগ্য নিধন মেলা হিসেবে পরিচিত দক্ষিণে। এখানে যেসব মানুষ অক্ষম তাদের মেরে ফেলা হয়। অপ্রয়োজনীয় দুর্ভাগ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় এখন মানুষের নেই। লাল মাঠ তাই অযোগ্য ঘোষণা করা মানুষদের জন্য এক ভয়ের নাম। এই অযোগ্য মানুষদের প্রথমে বলা হয় দেয়ালের ঐ পারে চলে যাওয়ার জন্য। এখন অবধি কেউ এই কাজ করেনি। তারা কুকুরের খাদ্য হিসেবে মারা যাবে তবুও এ কাজ করবে না। পৃথিবী বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যে ভয় উৎপাদন করে তার প্রভাব যে কত বেশী তা এদের মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে যায়।
প্রোগ্রাম ওয়ার্ল্ড এ এখন কিছুটা আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। মানবো যে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তার কাজ শুরু করবে তা তারা বুঝতে পেরে গেছে। তাকে আটকানোর উপায় তাদের জানা নেই। সেই তথ্য তাদের হাতে নেই এখন। অতীতের প্রায় সব রেকর্ড তারা ডিলিট করে দিয়েছে তথ্য লিক হয়ে যেতে পারে তাই। কয়েকজন এতো কম শক্তি নিয়েও মাঝে মাঝে হ্যাক করতে চেষ্টা করে। শোনা যায় পৃথিবীর কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান মিলে একটি কমিটি গঠন করেছে তাদের কাজের বিরুদ্ধে। টিম টেন এখন ভাবছে মানবোর কথা। মানবোর শক্তির উৎস আদিযুগের মধ্যে পাওয়া যাবে এ কথা তারা জানে। কিন্তু আদিযুগের তথ্য তাদের হাতে নেই এখন। থাকলে সেই অনুযায়ী কিছু একটা করা যেত। তথ্য না থাকলে কোনো কিছু করা যায় না। টিম টেন এর প্রধান সিরোত মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন। তিনি বুঝতে পারছেন না। আদিযুগের মধ্যে কতটা শক্তি লুকিয়ে আছে! এতো শক্তির উৎস কোথায় তিনি জানেন না। সমস্ত সোর্স একটা কথাই বলছে শক্তির উৎস মূলত বিশ্বাস। এই বিশ্বাস জাগানোর উপায় মানবো জানে এটাই চিন্তার বিষয় তার জন্য। বিশ্বাসকে আটকানোর জন্য তিরি ভয়ের সৃষ্টি করেছেন। এই ভয় তৈরী করেছে লোভ আর বিশ্বাসঘাতকতার। এসব দিয়েও কিছু হচ্ছে না। মানবোর বিশ্বাসের ক্ষমতা বোধহয় অনেক বেশী। চিন্তায় তিনি অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। সেক্স রুমে যাওয়া উচিত তার এখন। ওখানে ত্রিনাদ অপেক্ষা করে আছে। তিনি বুঝতে পারছেনা কী করবেন। অবশেষে তিনি হাটতে থাকলেন সেক্স রুমের দিকে। তিনি বুঝতে পারছেন কিছু একটা শেষ হয়ে আসছে। এবং তিনি এটাও বুঝতে পারছেন যে চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য তাকে প্রস্তুত হতে হবে।
মানবো বুঝতে পারছে তার কাজ মূলত মানুষের অনুভূতি জাগিয়ে তোলা। মানুষ এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে যার থেকে। মানুষ ভুলে গেছে তার অতীতকে। তার অতীতে ছিলো কতপ্রকার অনুভূতি। একেকটা গাল ভরা নাম ছিলো সেসব অনুভূতির। কত আজেবাজে কাজ হয়েছে সেসব অনুভূতিকে ব্যবহার করে। তবুও সেসব থাকার কারণেই বোধহয় বেঁচে ছিলো তখন মানুষ । মানবো জানতে পারে তার গুরুদেবের কাছ থেকে যো মানুষ একসময় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে চর্চা করতো। এই যে অনুভূতির চর্চা সে করতো তার মাধ্যমেই মানুষ প্রমাণ করতো যে মানুষ এখনো মানুষ হয়ে বেঁচে আছে। এখন মানুষ আসলে জড় পদার্থ ছাড়া অন্য কিছু নয়। মানুষ নিজেকে এককথায় বেঁচে দিয়েছে। মানুষ নিজের অস্তিত্ব সংকটকে গুরুত্ব দিচ্ছে না আর। অনুভূতির মাধ্যমে নিজেকে আর প্রকাশ করছে না। নিজেকে যতোটুকু প্রকাশ করছে তা হলো আসলে ভন্ডামি। মেকি একটা ভাব আর পরিবেশ নিজের চারপাশে মানুষ বিছিয়ে রেখেছে জালের মতো। মানুষ চায় অন্য কোনো মানুষ যাতে সেই জালে ধরা পড়ে। এটাকে আসলে বলা যায় মানুষের মানুষ শিকার।
মানবো বুঝতে পারছে এখন সময় নিজের উপস্থিতি জানান দেয়ার৷ মানুষ মাত্র ঘরে ফেরা শুরু করেছে। অফিস ফেরা মানুষ শহরের মেরিন ড্রাইভ দিয়ে ঘরে ফেরে এখন। শহরের ঐ অংশের ঘরে ফেরার রাস্তাগুলোকে এখন দেয়াল এর অংশ হিসেবে মনে করে তারা। তাই সমুদ্রের গা ঘেঁসে নিজের ঘরে তারা ফিরে যায়। হাতে থাকে মেয়ে বা ছেলের জন্য দামী চকলেট আর স্ত্রীর জন্য থাকে ক্লান্তি। নিজের জন্য বোধহয় বিরক্তি ছাড়া আর কিছু থাকে না।
মানবো এখন আছে শহরের একটি পাহাড়ের উপর। পাহাড়ের উপর থেকে লাল আভা দেখা যায় অনেকক্ষণ। সমুদ্র আর পাহাড়ের এই যুগলবন্দী মানবোর ভালো লাগে। সে তৈরী হয়ে নেয়। তার হাতে সেই সবুজ রঙের বাঁশী। যার এখন স্বাধীনতার উপভোগ করার সময়।
মানবো শুরু করে হৃদয়ে ভালোবাসা আর সমবেদনাকে সাথে নিয়ে। মানবো বুঝতে পারছে সে আজ একটি নতুন কালের শুরু করছে এই শহরে। তার বাজানো শুরু হয়। মানবো অনুভব করতে থাকে মানুষ আস্তে আস্তে চোখ মেলছে। মানুষের মনের দুয়ারের পাহাড়ায় থাকা প্রহরীরা পালাতে শুরু করেছে। মানুষ এবার নিজেকে আর তার শহরকে আবিষ্কার করতে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ আবার নিজের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিচ্ছে প্রশ্ন। আবার সেই মানুষই তার উত্তরঃ খোঁজার জন্য ব্যকুল হয়ে গেছে । মানুষের মধ্যে জেগে উঠেছে সুর। এই সুর নির্মম দেয়ালকে ভেঙে ফেলার ক্ষমতা রাখে।
এই সুর কঠিন পাথরের মতো অটল সিরোতকে জাগিয়ে তুলছে। তার মনের মধ্যে ভয় প্রবলভাবে নাড়া দিচ্ছে।
সুর নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে এইভাবে যেন সেই এখন সকল কিছুর স্রষ্টা। আসলে এই সুরই এতোকাল পালন করে এসেছে স্রষ্টার ভূমিকা।
সুরকার মানবো নিজের কাজ করে যাচ্ছে আরো প্রবলভাবে। শহরে আবার ফিরে এসেছে বিলুপ্ত হওয়া সেই গাঢ় সবুজ রঙের রাত।
সিয়াম আল জাকি
গল্পকার
ঠিকানাঃ উত্তরা আবাসিক, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম