You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ইংরেজি নববর্ষ সংখ্যা। শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ইংরেজি নববর্ষ সংখ্যা। শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ইংরেজি নববর্ষ সংখ্যা

শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ইংরেজি নববর্ষ সংখ্যা

শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

 

কোন এক হেমন্তে

                       

আমিও একদিন হারিয়ে যাবো কোন এক হেমন্তে,

শরতের শুভ্র সফেদ কাশফুলেরা যেমন ঝরে যায়

ঈষৎ উষ্ণ-শীতল বাতাসের ছোঁয়ায় হেমন্তে এসে,

আকাশের সব নীল যেমন হারিয়ে যায় ধীরে, অতি ধীরে

হেমন্তের কুঁয়াশার আড়ালে;

তেমনি করে আমিও একদিন ঝরে যাবো, শিশিরের মতো নিঃশব্দে,

শিউলী ঝরা কোন প্রভাতে, কিংবা জোছনা ছড়ানো কোন রাতে,

ছাতিমের গন্ধের সাথে মিশে বিলীন হবো একদিন-

কেউ জানবে না তা, অতি নীরবে।

 

করবীর শীতল ছায়ায় শুয়ে র’বো কোন একদিন,

আলগোছে তোলে রাখা কোন মুখচ্ছবি, হয়তো তখনও

রয়ে যাবে মাংসহীন পাঁজরের দেয়ালে,

হয়তো কিছু অবাধ্য ঘাস উঁকি দিবে

আমার বুকের উপর চেপে বসা মাটি ফোঁড়ে

নতুন জীবনের খুঁজে; দিনে দিনে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হবে

তার বাস, ঢেকে দিবে আমায় সবুজ আচ্ছাদনে।

 

আমার এ ঘুমহীন চোখ, ডুবে র’বে তখন সীমাহীন প্রশান্তির ঘুমে

সবুজ কোমল ঘাসের চাঁদরের ওমে;

কিংবা, হয়তো বা পড়ে র’বো নিদারুণ অবহেলায়,

ঝরে পড়া হলুদ করবীর সাথে।

ধুপ, ধোঁয়ার গন্ধের সাথে কুঁয়াশার চাদর ভারী হবে

আমাকে ঘিরে, ধীরে অতি ধীরে রাত আসবে নেমে

জোনাকীর আলোর হাত ধরে, আমার আঁধার গোরে।

কামিনীর গন্ধে মাখা শীতল হাওয়া ছুঁয়ে যাবে

আমায় সেদিন; ঝিঁঝিঁর শব্দের সাথে খুঁজে নিবে কেউ

আমার চেনা স্বর, অলখে খুঁজবে আমায় দাঁড়িয়ে দ্বারে;

হয়তোবা কারো মনে হাজারো প্রশ্ন দোলা দিবে

সেদিন আমাকে ঘিরে;

কিংবা অদৃশ্য খেরো খাতায় কেউ বুলাবে চোখ

অযথাই মিলাতে হিসাব- পাওয়া, না পাওয়ার;

কোন এক হেমন্তে এসে আরও এক বার।

                                   

 

 

জীবন্মৃত

         

 

মৃত্যুর কাছাকাছি যাই,

ফিরে আসি, আবার উঠে দাঁড়াই;

এভাবেই বেঁচে আছি,

বেঁচে থাকতে হয় আমায়!

 

হে প্রেম, হে ঘৃণা,

হে বিশ্বাস, হে প্রবঞ্চনা,

হে ত্যাগ, হে স্বার্থপরতা,

হে অনুরাগ, হে অবহেলা,

আমি তোমাদের প্রাচীরের ভিতরে বেড়ে উঠা প্রাণ;

আপন পথে চলতে অভ্যস্থ এক পথিক,

তবু সময়ের প্রয়োজনে কখনো তা বদলায়;

সরল সমতলে কিংবা বন্ধুর পথে, চলতে চলতে

তোমাদের অনুভব করি,

একে একে ভেসে উঠে সব স্মৃতি; যা ঘটেছিল

কিংবা যা ঘটছে, তার মাঝে

বার বার তোমাদের স্পর্শ খুঁজে পাই।

 

আমি উপভোগ করি আমাকে ঘিরে তোমাদের সব আয়োজন,

কারণে অকারণে আটকে যাই তোমাদের বিন্যস্ত জালে;

অনুভব করি আমার ভাবনার, চেতনার ফুলকায় জড়ানো ফাঁস

ধীরে ধীরে আমাকে নিস্তেজ করে তোলে,

চেয়ে দেখি আমার আমিত্ব নিঃশব্দে ঢলে পড়ে

অদৃশ্য মৃত্যর কোলে।

প্রচন্ড আক্রোশে কিংবা ঘৃণায় তোমাদের এ জাল ছিঁড়তে গিয়ে,

অমোঘ টানে আবারও তোমাদের পৃথিবীর মায়ায় জড়াই।

 

মৃত্যুর কাছাকাছি যাই,

ফিরে আসি, আবার উঠে দাঁড়াই;

এ ভাবেই বেঁচে আছি,

বেঁচে থাকতে হয় আমায়।।

 

 

শ্মশানে শবযাত্রা

 

আত্মহনন সেই কবেই শেষ হয়েছে,

অবশিষ্ট আছে শুধু শব দাহের।

শ্মশানে এখন বড়ই ব্যস্ততা,

মৃত্যুর মিছিলে ভর করে একে একে

চিনÍার, চেতনার, কৃষ্টির, সব ধরণের

শবদেহের জমেছে স্তুপ, এ শ্মশানে;

পুরোহিত সবাই তৎপর তাই

তাদের শেষকৃত্য আয়োজনে।

 

আওড়ে চলেছে কত শ্লোক দারুণ গর্ব ভরে,

আর অন্ধ কিছু লোক, শবাধারের পিছে

চলেছে হেঁটে ভীষণ ভক্তি লয়ে;

মিলিয়ে একই সুর, বলে উঠে হরিবোল-

যেন তাদের যেতে না হয় শবাধারে!

 

সম্মুখে অজস্র লাশের সারি, পুরোহিত উঠে হাঁকি-

কেউ আছো ভ্রমে, কোন পুত্র জ্ঞাতি?

করিতে পারো এতো শবের মুখাগ্নি?

(এসো তবে, এক বার আমি চেয়ে দেখি তারে!)

 

ঔদ্ধত্য প্রশ্ন বাণে, ভীত-সন্ত্রস্থ প্রাণে

অন্ধ-অজ্ঞের দল, সবাই নিথর, বাকহারা;

পুরোহিত তাকিয়ে রয় শুনিতে উত্তর,

কিন্তু পায় না কোন সাড়া।

এমন দৃশ্য দেখে, পুরোহিত সব

হাসে নিঃশব্দে, অতি তৃপ্ত মনে;

বুঝে গেছে তারা, শব পুড়ানোর ভার

নিতে পারে এমন, অবশিষ্ট কেউ নেই আর

এই শ্মশানে!

তাই উচ্ছ্বসিত আজ পুরোহিত সব,

উল্লাসে গুণে দেখে পড়ে থাকা যত মগজহীন শব,

যারা এসেছে এ ভ্রমে নত শিরে, মরিবার তরে;

আজি প্রফুল্ল চিত্ত মনে, পুরোহিতেরা দলে দলে

 

নিমগ্ন এখন শেষকৃত্য শেষে তাদের যজ্ঞ আয়োজনে।।

Leave a Reply