শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা
সাজ্জাদুর রহমান এর গুচ্ছ কবিতা
শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা
সাজ্জাদুর রহমান গুচ্ছ কবিতা
হালখাতা
যে চিঠির মায়া আলিঙ্গন মেখে
তোমার দোকানে যাই,
তুমি নীল প্লেটে সাজিয়ে রেখেছো হালখাতা।
অচেনা শিরোনামে শুঁকে আসি পৃথিবীর ঘ্রাণ
তোমার রাজ্যে তখন তরতাজা শুভ্র শীত।
কুয়াশার চাদরে আমার বসন্ত
মৃত্যু আপ্যায়ন করে
বিশ্বাস রোজকেয়ামত ।
ভালোবাসার পরাকাষ্টে
হাতুড়ি পেটায় ঘোর কলিকাল
তোমার হালখাতা আমাকে নিঃস্ব করে।
আমি শিরোনামহীন কফিন
হালখাতা চকচকে রূপালী ইলিশ !
তছনছ দুঃখ ক্ষয়
আয়না দেখে চমকে ওঠে তছনছ দুঃখ ক্ষয়
পূণর্বার জেগে ওঠে ছদ্মবেশী সামাজিক ডাক
আমি নিমন্ত্রণ ছাড়াই মানুষের কাছে যাই
তাদের অহংকারে নম্র হয়ে নিজের হাত মাপি
পাশাপাশি দ্রোহের সংকেত বাতাসে ওড়ে
মানুষ আর মানুষ থাকেনা।
সবকিছু ছেড়েখুড়ে ভূয়ো মোকদ্দমায়
পরাজিত হয় স্বপ্নবিলাস
রুহের অলিন্দে পেঁচিয়ে যায় ফেরাউন পাপ
আমি কে? এই টানাপোড়েন সংশয় উপেক্ষা করে
ফি বছর ফিরে আসি বানভাসি মরাতংকে।
নশ্বরতা বড় হতে হতে
ভূয়ো চিঠির নিমন্ত্রণের ভাঁজ খোলে
প্রতিবার আয়নায় চমকায় তছনছ দুঃখ ক্ষয়।
জলতরঙ্গ
অন্তত এক চিলতে তরঙ্গ দাও নিশ্চুপ বন্দরে
হৃদয়ের ঠোঙায় ভরে সযত্নে রাখি তারে বুকে।
প্রতি দিবস সংক্রান্তিতে ভাজ খুলে
জ্বালাবো রাতের সুখ;
পাশফিরে জ্যোস্নায় দেখবো তোমার সলাজ ঘাম।
প্রতি চন্দ্রকলায় প্রেমে বাজাবো সেতারে সরোদ,
ষষ্ঠ তারে বেহুলার নিঃস্বার্থ সানাই,
লখিন্দরের ভালোবাসায় খেলবো প্রতিদিন জলতরঙ্গ !
আমার হৃদবেহালায় খুব অন্ধকার বাজে
পঞ্চতারে আমার নির্ঘুম রাত
বিকলাঙ্গ স্বর তুলছে শেষ ব্যঞ্জনে!
দুঃখ পুষবো
যদি চাও
পুড়িয়ে দাও শোকার্ত গেরস্থালি;
মৌলিক লেনদেন,
পরিশুদ্ধ জীবনে আবার যুদ্ধ খুঁজো।
আমি দুঃখ পুষবো
দুঃখের এক ইঞ্চিও ছাড় দেবনা
তুমি নিয়ে যাবে
ইলাস্ট্রেট ব্যাগে করে সব সুখ
আমি ঘাস হয়ে বিছানা পেতে দেব
ধুম্রচোখের লোবানে জ্বালাবো চন্দনের ঘ্রাণ!
মাংসে পৌরুষে বিপ্লবী ক্ষুধা
মানুষ হবার পাপ থেকে উঁকি দেয় ক্ষুধার কঙ্কাল
জবরদখল করে আছে মরা লিঙ্গের চাতুর্য্য আর ষোড়স ঘামের তাচ্ছিল্য বুনন
সেখানে কৃচ্ছ শিল্পের অভিসম্পাত
ক্ষুধার প্লেটে বিছিয়ে দিচ্ছে শর্তের ফাঁস।
শতবার মরা পোড়ানো চিতায়
তপ্ত পীড়িত অন্ধ জোছনা যজ্ঞে বিভাসিত চন্ডী-প্রলয়
সব ভাসিয়ে চৈতন্য তুলে রাখে খুন্তির ডগায়
আর তেল-নুন-মরিচের ঝটকা অভিযানে
ভাগ্যের কবিতা লিখি।
আমারও ইচ্ছে করে প্রিয় চিঠির দৃশ্যান্তর ছুঁয়ে
রাতের মহাকাব্যে তুমুল ডেকে উঠি-
পাপ তোমার এতো ক্ষুধা
মাংসে পৌরুষে বিপ্লবী কেনো?
নারী
হৃদয়ে আগুন
ভেতরে চিৎকার ফেটে রক্তাক্ত স্বপ্নমেঘ
প্রতিশ্রুতি অক্ষরে ঢুলুঢুলু ধুম্রমানবতা
গচ্ছিত মিহিন বন্ধন লুটেরাদের দখলে।
ভোরের সূর্যোদয় হাতের মুঠোয় রেখে
অন্ধকারের নীচে পেতেছে রাজপালংক,
কপাল-চন্দনের শৌর্য ডানায় নির্ভরতার বীর্য
ধারণ করে উড়িয়েছে অতৃপ্ত পতাকা
সুদীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে
পরম যত্নে বিছানায় রেখেছে আবাদি শরীর
ভূতপূর্ব জীবন তুচ্ছ করে
যে নিয়তি করেছে লালন
হৃদয়ের সহাস্য জানালায় ঝুলে তার ব্যবচ্ছেদ !
নারীত্ব, নারী,উড়ন্ত বলাকা, নূপুরের নিক্কন
প্রতিবাদ, প্রতিরোধ,তিলোত্তমা মাতৃজঠর,
জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত ঝড় ফসলের ক্ষেত
একটি শস্য দানার ভেতর অজেয় রহস্য
ইজারা সম্পত্তি ,বেনারসি জর্জেট কাতানে আবৃত
অস্পৃশ্য মাটির কঙ্কাল!
ভাত-কাপড়ের দক্ষিণার পরের পৃষ্ঠায়
মাঝ বরাবর বন্ধনীতে ধর্ষণ লুটতরাজ
বিষন্নতার রাত্রি মরে যায়
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে
প্রকাশ থাকে চুম্বন হবেনা রক্ষিত ফুলদানি ।