শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা
আতাউর রহমান মিলাদ এর
গুচ্ছ কবিতা
শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪
আতাউর রহমান মিলাদ এর গুচ্ছ কবিতা
রৌদ্রলীলা-
এক দুপুরের সতেজ রোদ,অনায়াসে
আটকে গেলে তোমার খোঁপায়
ঠাহর করতে পারিনা আকাশের উচ্চতা
দেখেছি,অধীর আগ্রহে,অরন্য বনানী
স্পর্শের অপেক্ষা নিয়ে লোভাতুর চোখ
ছুটছে,ঘোড়ার পায়ে,নির্ঘুম পাহারায়
দেখো,খোঁপায় ফুটেছে রোদের ফুল
ভেদ করে মেঘের আকাশ,কোলাহলহীন
মুহুর্তের নীরবতা ছড়ায় মগ্নতার রেশ
জাগে,আলোর স্পর্শে সরল উপস্থিতি
ছত্রভঙ্গ মনের গভীরে এক অর্বাচীন ঢেউ
মেঘভারে ফিরে যায় খোঁপার বিস্ময়ে!
ছোবল
কেউ কাউকে রাখেনা মনে,অকারণ
পাথরের মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে
পাথরের প্রাণ…
শীতের শীর্ণ নদী মনে রাখেনা ভরা জোয়ার
প্রেমিকারা রাখেনা মনে ঐশ্বর্য্য প্রহর
দেয়ালে লেখা হয় রক্তাক্ত শ্লোগান
সেখানে থাকেনা লাল চিহ্ন,বিবিধ প্রশ্নে
মেঘে রোদে খসতেই থাকে জীবন বৃত্তান্ত
পুরাতন বন্ধন,চিরন্তন রীতি
ভেঙে যায় মানুষের নির্বাচিত অভিলাষ
মাটির কলস!
কবিতার সাথে দিনযাপন সেই কবে থেকে
সেই সখ্যতা সেই প্রেম আজো
কবিতার প্রিয় মানুষেরা ভুলে গেছে
দুরে গেছে সরে
কবিতার ভালোবাসা রেখে
মাটির কাগজে লিখি প্রিয় সব নাম
পথিকেরা মুছে ফেলে পায়ের তলায়
শীতের শহরে আসে অতিথি পাখি
উড়ে উড়ে আসে…
ফিরে যায়…যায় ফিরে
অজানায়।
স্মৃতির বাহন—
শিস দিলে জেগে ওঠে পুরনো প্রেম
ফুঁ দিলে,স্মৃতিরা বাজায় বাঁশী
তুচ্ছ তুচ্ছ জমা
যত অভিমান,
মেঘ কেটে গেলে ফিরে আসার ভয়
ভাগের অংশ হই বৃষ্টি পতনে
সংসারী প্রেম,আজো
হয়নি প্রমান।
জীবন,সন্দেহ দ্বিধার ছায়াভরা পথ
দুঃখ সুখের দোলাচলে পাখির জগ
অমীমাংসিত –
সেই পাঠশালায়,টোলপড়া গালে পূর্ণিমাদি…
লিখেছি গরুর রচনা,মানুষ হবার কালে
মানুষ হইনি আজো,গরুর রচনা লিখি
গরুকেই ভাবি আপন
গৃহস্ত পৃথিবীতে
প্রতিদিন বেড়ে উঠি গরুতেই
কচি কচি ঘাসপাতা খেয়ে,
বেড়া ভেঙ্গে পরের জমিন
জানালার পর্দা সরিয়ে দেখি
ছোট হয়ে আসে গরু ও মানুষের পার্থক্য
মানুষের মাথায় গজায় অবাধ্য শিং…
ভেতরে ভেতরে কি হয়ে উঠছি গরু
স্বভাবে ও আচরণে?
পোড়াবীজ –
বুকের জামা লাল লীলাবতী চাল
রকমারি গল্পে ভরা,
ভুরুর নীচে শিশির স্বপ্ন চোখে নীড়
চিত্র জটিল যত্নকরা।
জানালা ভরা ফুল হাওয়া খোলা চুল
সন্ধ্যা ভেজা সঙ্গীতে,
ভরা জলের ঢেউ নদীর তীরে কেউ
কিসের যেন ইঙ্গিতে!
নগ্ন পায়ের মৃদু ছন্দে প্রদর্শনী জমকালো
অন্তরঙ্গ অনুভবে নেপথ্য রং চমকালো।
আতাউর রহমান মিলাদ কবি ও গল্পকার। লিখছেন আশির দশক থেকে ।
বর্তমানে বাংলাদেশ ওবিলেতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত বাংলা কাগজগুলোতে তার লেখা নিয়মিত ছাপা হয়।১৯৮৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী।প্রবাসে জীবন যাপন করলেও শেকড় স্বদেশেই প্রোথিত।
এ পর্যন্ত তার ৭ টি কাব্যগ্রন্থ,২ টি গল্প গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ‘দুঃসময়ের চিৎকার’ তার ১ম কাব্যগ্রন্থ ১৯৮৪সালে এবং ‘জলভরা জটিলতা’ ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়।একুশে বইমেলায় ২০২১ এ প্রকাশিত হয়েছে কাব্যগ্রন্থ ‘স্মৃতির সেলাই’।
বর্তমানে সাহিত্য কাগজ ‘শব্দপাঠ’এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
কবিতার জন্য পেয়েছেন সংহতি সাহিত্য পদক ২০০৮। কবিতার জন্য সম্মাননা পেয়েছন ‘আমরাকভেন্ট্রিবাসী’ সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে।
সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৭ সালে টিএসএফবি মিডিয়া কর্তৃক কমিউনিটি এপ্রিসিয়েশন পদক দেয়াহয়।
কাব্যগ্রন্থ:-
দুঃসময়ের চিৎকার,হৃদয়ের জানালা খুলে,আর যদি একটা গুলি চলে,কবিতার চেকবই
স্মৃতিহীন অচিন আঁধার,স্বরচিত অন্ধকার
জলভরা জটিলতা,স্মৃতির সেলাই (যন্ত্রস্থ)
গল্প গ্রন্থ:-
তোমার দেয়া দুঃখ,স্বপ্ন ও ছায়া (যৌথ)
সম্পাদনা:-
ত্রৈমাসিক শাপলা,সাম্প্রতিক সাহিত্য ,ভালোবেসে অন্ধ হই,তৃতীয় বাংলার কবিতা,
শব্দপাঠ (প্রধান সম্পাদক)
Contact: milad1961@hotmail.com