You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। গোলাম কিবরিয়া পিনু’র গুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। গোলাম কিবরিয়া পিনু’র গুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

গোলাম কিবরিয়া পিনু’র
গুচ্ছ কবিতা

গোলাম কিবরিয়া পিনু’র গুচ্ছ কবিতা

 

অগ্নিসখা  

 

কাঁধে তুলে নিলেভর সহ্য করতে হয়

    বরফ অঞ্চল পার হতে হয়

                   অগ্নিপ্রান্তরও!

             অগ্নিসখা হয়ে উঠি আমিও!

 

ভ্রান্ত হয়ে পথ হারালে চললে না!

কাঁধে রাখা কাউকেকাকের কা-কা শব্দে,

      মাঝপথে নামিয়ে  ফেলতে পারি না!

 

কালবেলায় কালজ্ঞ লোকের উপদ্রব থাকবেইÑ

কটুকথায় কানঝালাপালাও হবে,

তারপরও গৃহসজ্জা ও রণসজ্জায়

                     লজ্জাটুকু রাখি,

শজিনার ফুল ও ফল তরকারি হিসেবে

          খাওয়ার পরও,

অঙ্গীকারের মাথা চিবিয়ে খেতে পারি না!

 

কাঁধে যখন তুলেছি

             তখন তাকে নিয়ে হাঁটি,

ঝুমকোজবার বাগানে পৌঁছানোর জন্য

                     পথে পা রাখি!

 

 

কালজয়ী অক্ষরগুলো

 

পর্ণকুটিরে উৎপন্ন অক্ষরও কালজয়ী হয়ে যায়!

অট্টলিকা ও রাজপুরি ভঙ্গুরতা নিয়ে

         মুড়মুড়ে হয়ে পড়ে যায়

              ঝুরঝুরে হয়ে পড়ে যায়, 

সেই কালজয়ী অক্ষরগুলো প্রাণশক্তি নিয়ে

            উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে!

 

অক্ষরগুলোকে খোঁড়লে ঢুকিয়ে

খুঁচিয়ে খোঁচানো হলেও

                 তাদের মৃত্যু হয় না!

গতিবিধিতে বাধা দিলেও           

          গতিশক্তি নষ্ট করা যায় না!

অক্ষরগুলো তো চিতই পিঠা নয়

      চিত করে ফেলেমুখে তুলে নেবে!

 

অক্ষরগুলো আপনাআপনি জুঁই হয়ে ফোটে

বাগানের কোনো প্রয়োজন নেই,

ভিসা ছাড়া যেকোনো দেশে যেতে পারে,

                 সীমান্ত মানে না!

 

সেই অক্ষরমালাÑমালা হয়ে যায়

মস্তিস্কের নিউরণেস্বপ্ন জেগে তোলে,

এমন গাঁথুনিএমন ঢালাই

এমনই ভিত্তিমূলমূল উৎপাটন করা যায় না!

 

পাপোষে পা

 

আপোষে পাপোষে পা রাখি

      যারা মুনিয়া পাখি ভেবে

           আমাকেও পোষে!

তারা তো চাইবে

তাকে নিয়ে গুনগুন করিগান করি,

হুকুমে হুকুমে

       বেহালাটাও হাতে ধরি!

 

ধাতু ও প্রত্যয়ে থাকা ধাই ফুল

খনিজ ধাতুতে তৈরি ফুলদানিতে রাখি!

অবশেষে তার পদপাদে সেই ফুল রাখি!

 

আপোষের এমনি স্বভাব!

      ধানগাছ কেটে সেই মাঠে

          ধুতরার বীজ বপন করি!

              ধামালিতে মেতে উঠি!

উঠানওয়ালা ঘরের বাসিন্দা হওয়ার পরও

পরের ঘরের পাপোষে পা রাখি!

 

সংশয়

আমি এখন সংশয়বাদী,

মানুষ নিয়ে!

  মতলববাজ শুধু মতলবপুর থেকে আসে না!

      পাশের বাড়ি থেকেও আসে,

হতে পারে তারা পাড়া-প্রতিবেশী

       বন্ধু ও আত্মীয়বেশী!

 

হিমালয়ের বরফগলা জল আসে না নদীতে!

       আসে বেশি ড্রেনের জল!

এলো কী-এক নগর সভ্যতা!

নকরামি হয়ে উঠে মানুষের মূল প্রবণতা!

জটিল গ্রন্থিতে চিত্তবিকার!

        ইন্দ্রিয় হারায় বানানের ইকার!

 

কে যে মতলব থেকে কথা বলে?

কে যে মন থেকে কথা বলে?

কে যে ভয় থেকে কথা বলে?

কে যে লোভ থেকে কথা বলে?

 

বিস্ময় ও বিভ্রমে ভ্রমরও ভুল ফুলে গিয়ে বসে!

কে কাকে হেফাজত করে?

               কে কাকে আগলে রাখে?

কে কার পৃষ্ঠপোষকতোষক বিছিয়ে রাখে কার জন্য?

সঙ্ঘের লোকেরা বলশালী হয়ে বল খেলে কার সাথে?

 

অচেনা মানুষ

তুমি তো এখনো অচিনপুরের অচেনা মানুষ

চিনিনি খানিক এখনো তোমাকে!

রহস্যপুর! কর্পূর হয়ে যেন উড়ে যাও!

 

এক বইয়ের এক প্রচ্ছদ! তোমার অনেক!

নদ ও নদীতে কত নৌকো রাখো! চলে যাও দূর!

এক গানেকত রকমের সুর!

 

অচেনা থেকেছোঅচেনা তোমার কত রাজধানী!

দেশও যায় না চেনা! কখন যে বিক্রি ও কেনা

কখন কোথায় কী পোশাক পরো?

 

শুধুই চমকে যাইতোমার কি অবয়ব নাই!

 

গাছপোঁতা স্বপ্ন

জমি উপযোগী না হলে

          বীজ বপন করো না,

           যতই সার দাওজল দাও

বীজ ফলবে না!

বীজ ফললেও উদ্ভিদ হবে না

ফল তো দূরের কথা!

 

চাাঁপাইনবাবগঞ্জের হিমসাগর

তোমার চরের জমিতে,

    পাহাড়ের প্রস্তর ও গিরিখাদে ফলবে না!

তোমার মাটি যদি উপযুক্ত হয়

               সেই ফল ফলবে।

গাছের পাতা ও কাণ্ড বুঝতে পারে

প্রতিকূলতা ও সম্ভাবনা কতটুকু!

অচিরেই তার মৃত্যু হবে?

       নাকি তরতর করে বেড়ে উঠবে?

 মগের মুলুকেজোরের মুলুকে

         গাছপোঁতা স্বপ্ন থাকলেও,

 

      সব উদ্ভিদ জন্ম নেয় না!

গোলাম কিবরিয়া পিনু , মূলত কবি। প্রবন্ধ, ছড়া ও অন্যান্য লেখাও লিখে থাকেন। গবেষণামূলক কাজেও যুক্ত। গোলাম কিবরিয়া পিনু-এর জন্ম ১৬ চৈত্র ১৩৬২ : ৩০মার্চ ১৯৫৬ গাইবান্ধায়। গাইবান্ধা শহরে মূলত শৈশব-কৈশোর কেটেছে। পড়েছেন গাইবান্ধা শহরের মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, এর পর মাধ্যমিকÑগাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে, এর পর গাইবান্ধা সরকারি কলেজ হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা : স্নাতক সম্মান (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য) এবং স্নাতকোত্তর; পিএইচ.ডি. । ১৯৮৩ থেকে ধারাবাহিকভাবে ঢাকায় বসবাস করেন। লিখছেন তিন দশকের অধিককাল। এর মধ্যে কবিতা-ছড়া-প্রবন্ধ ও গবেষণা মিলে ২৬টি গ্রন্থ বের হয়েছে–বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে। বিশ্ববাংলা কবিতা, উত্তম দাশ, মহাদিগন্ত, কলকাতা, ২০১৩, পৃষ্ঠা-১৪৩ কবিতার বই ছাড়াও তাঁর ছড়ার কটি বই আছে। আছে বাংলা নারীলেখকদের নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ, যা বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থে নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠা থেকে নারী লেখকদের সৃজনশীলতা ও বাংলা সাহিত্যে তাঁদের অবদান বিশেষভাবে এসেছে। নারী লেখকদের সাহিত্য-ভূমিকা, সৃজনশীলতা, জীবনচেতনা, আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও ভূমিকার বিবর্তন তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই গ্রন্থে ধরা পড়েছে । এছাড়া অন্যান্য বিষয়ে প্রবন্ধের বইও রয়েছে। শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর-সহ ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধেও তাঁর রয়েছে ভূমিকা। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী প্রতিবাদ-কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গাইবান্ধায় অনুষ্ঠিত প্রথম ছাত্র মিছিলে নেতৃত্ব দান, ১৯৭৫-৭৭ পর্যন্ত হুলিয়া ও গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। সে-সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কবিতা লেখা ও তা ‘সাপ্তাহিক মুক্তিবাণীসহ অন্যান্য সংকলনে ছাপা। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী ও ধর্মান্ধ-মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনে ধারাবাহিক ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলা একাডেমির জীবনসদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ-এর সদস্য। এখনো কটি সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন সংগঠন থেকে পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। পেশাগত প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য প্রয়োজনে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, আমেরিকা, বলিভিয়া, নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ পর্যন্ত একটি আর্ন্তজাতিক মিডিয়া বিষয়ক সংস্থা ‘ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড’-এর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করেছেন। এর আগে এফপিএবিতে উপপরিচালক (এডভোকেসি), ফোকাল পয়েন্ট ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া এফপিএবি থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘সুখী পরিবার’-এর সম্পাদক হিসেবে ১৯৮৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বিসিসিপি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও যুক্ত ছিলেন। পেশাগতভাবে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকতা, কলামলেখা, সম্পাদনা ও এডভোকেসি বিষয়ক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকেছেন।

গোলাম কিবরিয়া পিনু
কবি ও গবেষক

Leave a Reply