You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। এলিজা খাতুন এর গুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। এলিজা খাতুন এর গুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

এলিজা খাতুন এর গুচ্ছ কবিতা

এলিজা খাতুন এর ‍গুচ্ছ  কবিতা

 

 

বিবিধ ঘুম

 

তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে নিথর ঘুমের হাতছানি

অযাচিত ঘোরে এটা ওটা ভুল হলেও

অনুভব এই যে- তোমার আমার স্নায়ুযুদ্ধ যতটা স্পষ্ট

তারো বেশি অদৃশ্য-সত্য অপ্রতিরোধ্য টান

 

আর সেই জোরেই নিশ্চিন্ত-নির্ভার মনে 

কদমফুলের শৈল্পিক গাঁথুনির মতো উন্মুখ হয়ে

ধানক্ষেতের ঢেউয়ে ভেসে ভেসে

উপচে ওঠা নদীতে কচুরীপানার ঠাসবুনটে মিশে

হরহামেশা পাড়ি দিই- নিসর্গের বিপুল মায়াঘোরে

 

এমনকি অগাধ ঘুমের ভেতরেও একে একে হাজির হয়

সমুদ্রনীল, অরণ্যগভীর, পর্বতচূড়া থেকে ক্রমশ শূন্যে…

 

আজকাল আমাকে ঘিরে সমস্ত অভিযোগ 

আর অস্থিতিশীল বাজারদরে ক্ষিপ্ত সমাবেশ -একজোটে 

তাদের আবিষ্কার ফাঁস করে দেয়-

  

আমি নাকি আপন ভুবন থেকে কদাচিৎ ছিটকে এসে

বা ঘুমের খোলস থেকে বেরিয়ে আশ্চর্য ভারসাম্যে-

মানুষের মুখোশ পরে অংশগ্রহণ করে থাকি সংসারে

 

 

 

 

পাখিটিকে দেখে

 

নগর-ভবনের দেয়ালগুলো

মেঘের নকশিকাঁথা গায়ে জড়াতে না জড়াতেই

ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘেরা উৎসবে মাতে, 

নেমে আসে  দৃষ্টির গাঙ্গ ভাসিয়ে

 

মৃত্যু ও বিস্ফোরন বিষয়ক বার্তা ঠোঁটে তুলে নিয়ে 

একা একা উড়ন্ত বোহেমিয়ান পাখিটিকে দেখে

আকাশ সরে যায়  দূর থেকে আরো দুরে

 

ধোঁয়া ও তাপে ঘুরপাক খেতে খেতে 

ঝলসে যেতে থাকে বিপন্ন পাখিটির ক্ষুধা

 

 

 

 

শাশ্বত ডাক

 

গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে রাত !

হারানো পথ কিংবা অনুচ্চারিত অক্ষরেরা 

আরো বেশি ম্লান হতে থাকলে 

প্রহরী বেষ্টিত গুহা থেকে হাতে হাতে পাঠিয়ে দেয়

নতুন মডেলের কিছু অন্ধকার

 

আত্মজের চোখে ধু ধু দিগন্তের টানাপোড়েন

ধার চাহিবামাত্র নিকটজনের আকস্মিক স্তব্ধতা

নগরের অগণিত রান্নাঘরের বিব্রত অস্তিত্ব…

এ সকল বাক্যের প্রতিধ্বনি ছড়াতে না ছড়াতেই

শাশ্বত ডাকে এক একে সরে যেতে লাগলো 

ব্যানার, মাইক, সামিয়ানা, এমনকি চাঁদটাও

 

রাত গভীর! তাই

পুরোনো ইঁদারার তলদেশে শিশুর লুকোনোর মতো

কার্তিকের সমূহ-অনটন নিঃশব্দ-ঘুমে ঢলে পড়ে- 

চিরন্তন প্রভুদের পাঁজরে

 

 

 

 কলোনির বাঁকে 

 

কোলাহলরত কলোনি, সরু গলি 

স্যাদলাপড়া দেয়ালের গা বেয়ে নেমে যাওয়া 

সাবান-জলের দাগ, কড়া রোদ, ছেঁটে ফেলা পাতা

অপ্রশস্ত পথের মুখে রঙিন তোরণ, মাইক ও মানপত্র

 

এখানে কীসের উৎসব! জিজ্ঞাসা করা মাত্র-

 

সামিয়ানা টাঙানো এক একটি উড়ন্ত ঝলমলে কাপড়ের 

আস্তিন থেমে যায় একটি আরেকটির ধুলো ঝেড়ে

ব্যাঙেরা বিরত থাকে 

আলুবিহীন ভোজ সম্বন্ধীয় ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডাকাডাকি থেকে

 

ঘোর বৃষ্টির ঘোরে অন্ধকারে বেড়ে ওঠা বান-জোঁকের 

মহোৎসবে- ঢাকনা-বিহীন নর্দমার কালো জলে একাকার 

কলোনির সমুদ্রে উঁকি দেয় প্রতারক চাঁদ

 

সমান্তরাল

 

পথ্য-উপকরণ ও প্রাতঃভ্রমণ-যুক্ত স্বাস্থ্যবিষয়ক আলাপ

যখন হুড়মুড় করে বের হচ্ছে প্রাচীরের ভেতর থেকে

 

তখন শেষ হয়ে গেছে বৃক্ষের দিন

পাতাদের ফাঁকে পাখির সংসার নিদারুণ তছনছ

জোনাকিরা নিভে গেছে আমাদের দুঃখ শুনে শুনে

 

বহুদিন সমস্ত হৃদয় যেন পিরামিডে সুরক্ষিত মমি

পাথরের শরীর কেটে মসৃণ মুখশ্রী বানানোর মতো 

আছে কোনো ভাস্কর!

 

অন্তরের কারুকাজে কে দেবে অন্তর সাজিয়ে!

খাটিয়া কে সাজাবে কাফন আর কর্পূর  ঘ্রাণে!

 

সহিষ্ণু-বিস্ময়ে জীবন আর জীবনের শ্মশান

যথাযথ সমান্তরাল!

 

 

 

দীর্ঘশ্বাস

 

বন্ধ জানালার বাইরে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে

রোজ রোজ প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসা

বিশ্বস্ত উচ্চারণ

 

বিরুদ্ধ হাত টানছে সময়ের রশি

 

ফিরে আসা শব্দের সাথে

হ্যাঁ এবং না শব্দ দুটোও মিলেমিশে এলো

দোদুল্যমান এক অদ্ভুত নীরবতায়!

 

জানালা খুলতেই

নৈঃশব্দ্য বা শব্দের ভিন্ন ঘ্রাণ, ভিন্ন স্বাদ

বাড়িয়ে তোলে এলোপাথারী বাতাসের গতি

 

 

 

মুখোশের ভিড়ে

 

একদিন নক্ষত্রে উন্মুখ ছিলো একজোড়া চোখ

সবুজ ক্ষেত ছিলো হৃৎপিন্ডের চতুর্পাশে 

পিচপথ, দালানকোঠা, বণিক সমাজের তীরে 

শহরের বুক ভর্তি সম্ভাবনার নৌকা ভিড়তো 

কুয়াশার স্বর মুছে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়- 

নৌকোর বদলে এখন পাড়ে ভিড়ে কাগজের নৌকা

 

এখানে রোজ মুখোশের ভিড়ে 

নতুন মুখোশ যুক্ত হওয়ার উৎসবে

গোপনে খুলে রাখা নিজস্ব মেরুদন্ড খুঁজতে খুঁজতে

ধর্তব্য কথার বদলে উড়ন্ত বাক্যের সংলাপ 

 

এখানে স্বচ্ছ জলের প্রবাহ খোঁজার প্রহসন 

এখন জল শুকোনোর দিন চলছে নদীতে

আকাশ ভরা চিল-মাছালের ওড়াউড়ি 

কাদাময় ঘোলাটে রঙের প্রবাহ কৌশলী স্রোতে

 

এখানে সঙ্গির মনদ্বীপে নিঃসঙ্গতার নিরেট নিবাস

মাটির এলাকায় পাথরের বোবা-বিস্ময়!

মাটি ও পাথরের একত্র শব্দহীন-অবস্থানে 

 

বিচ্ছিন্নতা কিংবা সমঝোতার সর্বোচ্চ মাত্রা কেমন হয়!

এলিজা খাতুন, ১৯৮১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অরুণবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মহানন্দা নদীতীরে বেহুলা গ্রামে পৈত্রিক বাড়ি, বাবা- মো: মাসদুল হক, মা- মোসা: মাসকুরা বেগম। খুলনা ভিক্টোরিয়া স্কুলে প্রথম লেখাপড়া শুরু। সর্বশেষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এসসি গণিত বিষয়ে পড়াশোনা। সাতক্ষীরা জেলা সদর মেহেদীবাগে বসবাস। একটি মানব-সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান Ôঋশিল্পী’র হস্তশিল্প বিভাগে এক্সিকিউটিভ-এইচ.আর পদে কর্মরত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- নৈঃশব্দ্য ছোঁয়া জল (২০১৭), মধ্যরাতের খামে (২০১৮), ভাঙনকাল (২০২০), শ্রাবণ জানালা (২০২০), আরাধ্য পথের দিকে (২০২০) এবং গল্পগ্রন্থ – বর্গামাটি (২০১৮), ভাটির টানে (২০১৯), আগুন গোঁজা মাটি (২০২০) সম্মাননা : উতল হাওয়া সাহিত্য সম্মাননা(পশ্চিমবঙ্গ)

 

ইমেইল : alizasat335@gmail.com

এলিজা খাতুন
কবি

Leave a Reply