You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। শাহ্ কামাল এর গুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। শাহ্ কামাল এর গুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

শাহ্ কামাল এর গুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

শাহ্ কামাল এর গুচ্ছ কবিতা

 

পৃথিবী, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো আমায়

আমি বক আর পানকৌড়ি থেকে
একটাকে কোনদিন বেছে নিতে পারিনি

গাভীর দুগ্ধ আমি কখনো খেয়ে দেখিনি
শালদুধ কাকে বলে

যতবার আমি শামুক কুড়াতে গিয়েছি
মাজা পানির বিলে
ঝোঁকের সাথে ততবারই আমার ভস্যা হয়েছে

শালিক পাখিকে মনে হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে
শ্যান, লুটতরাজ
মাটির চাকে ক্রমাগত ঢিল ছুঁড়েছি
গুলাইয়ের মতো করে
সবুজ গমের শীষ প্রতীকের জন্য

কাকদের শহরে
আমি মিছিল করেছি
চিলটাকে ঢিলে নামিয়ে আনবো মাটিতে
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়
এটি চিল নয়—
এটি আমাজনের ঈগল

আর এ দিকে সব সময একটা সুতানালী সাপ
শরীর বেয়ে উঠে

চোখগুলো ঝাপসা হলে কী করে বুনোশিয়াল
খাবি খায়? নখ আচড়ায়?

মৃত বিড়ালটাকে ওরা টেনে নিয়ে গেল
গারলের দিকে
থাবা মেলে তবু বসে আছে চিতাবাঘ
শিকারীর খোঁজে

একবারই বুঝেছিলাম হাতির কাটামাথা
লেগেছিল কাজে
ইঁদুর বাহকের

রাজহাঁস রক্তাক্ত
পদ্মফুল মলিন
ময়ূরের পেখম আর ডিম দেয় না
বইয়ের ভাঁজে
পুরো সরিষার বইউম ঢেলে দিলে বইয়ের পুরো শরীর

পৃথিবী, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো আমায়


৩রা এপ্রিল ২০২৪
ফতুল্লা

 

 

 

ভাঁটফুল

 

তোমার ঠোঁটে ভাঁটফুল গুঁজে দিতেই

তুমি হিংমাছের মতো কাটা ফুটিয়ে দিলে

আমার কামরাঙ্গা মদে…

 

চৈত্রের খরতাপ মাঠে

লাঙ্গল বিকল হয়ে পড়ে রয়

শতাব্দী পেরিয়ে এসে আজো শরবন

শাদা খসে যাওয়া পালকে

একাকার ।

 

ডিমগুলো একাই ফুটে

শীতের রোদে তৃষ্ণা মেটায়…

 

৩০ই মার্চ ২০২৪

ফতুল্লা

 

অ্যাম্বুলেন্স

 

দিনকে দিন আমি অ্যাম্বুলেন্স হয়ে যাচ্ছি

প্রতিদিন হাজারো স্বপ্ন ডেডবডি হয়ে যাচ্ছে

আমার ভিতর চড়ে

পৃথিবীর শেষ গন্তব্য স্টেশনে।

 

পৃথিবীর শেষ গন্তব্য স্টেশন

তুমি চেনো?

সোনার জরিতে সাজানো এই পুষ্পকানন

বিবর্ণ শীতের ধোঁয়া ছড়িয়ে

উড়ে যাচ্ছে

হরমুজ প্রণালী ছেড়ে

আরব সাগরে ।

 

আরব সাগর

বাব-এল মান্দেব তুমি চেনো?

আমি লোহিত সাগরের লাল লাল রক্ত চিনেছি

চিনেছি সিনাই উপদ্বীপ

তানাখ, গসপেল, দাউদের গীতসংগীতা।

 

গীতসংগীতা

অতঃপর আরণ্যককান্ড অতঃপর কুরুক্ষেত্রের ময়দান

দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ, গান্ধারীর অভিশাপ

থেরোগাথার পদ্য উঠে আসছে সমান্তরাল দীর্ঘনিকিয়ায়

আরো দূরে কনফুসিয়াস।

 

কনফুসিয়াস

মেষপালক থেকে ই লি রেন ঝি সিন

টুয়েলভ লেবারস অব হারকিউলিস

টুয়েলভ অলিম্পিয়ান

মেষশাবকের গল্প সব মিশতে মিশতে

প্রশান্ত মহাসাগর এসে পড়েছে

অ্যাম্বুলেন্সের ভিতর

চোখে শুধু বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল, লাসার নিষিদ্ধ নগর

কামুক কামাখ্যার যোনীপথ

অক্সিজেন মাস্ক হয়ে পড়ে আছে আমার ভিতর

দিনকে দিন।

 

দিনকে দিন আমি অ্যাম্বুলেন্স হয়ে যাচ্ছি

প্রতিদিন হাজারো স্বপ্ন ডেডবডি হয়ে যাচ্ছে

আমার ভিতর চড়ে

পৃথিবীর শেষ গন্তব্য স্টেশনে।

 

২৯ই মার্চ ২০২৪

ফতুল্লা

 

শব্দের দোকান

 

দোকান খুলে বসেছি

শব্দের দোকান

বাম পাশের বুক বরাবর তাকে হার্ট শব্দটা

লাল রঙে চেয়ে আছে

 

নিলামে বিক্রি হবে

পাশের খোপে মনের তাক খালি

চোখ শব্দটা জ্বলজ্বল করছিল ওপরের তাকের মাঝে

 

আগুন শব্দটা সারাদোকান জুড়ে তাকের পর তাক জুড়ে

এককোনে দেশলাই একা পড়ে আছে

 

 

পানি পানি পানি কোথাও নেই

দোকানটা পুড়ে যাচ্ছে যাচ্ছে

 

২৪ই মার্চ ২০২৪

ফতুল্লা

 

 

নেইলকাটার

 

নেইলকাটার, তুমি চাকু ছুরি হও

রক্ত ভালোবাসো

তুমি কি সেফটিপিন? না । তাও না।

 

অথচ আমি দেখেছি তোমার খোলের ভেতর আড়াল করা

একটা বাঁকা অদ্ভুত কিরিচ

একটা কালের র‍্যাদা

তুমি কি বলতে চাও আমি বুঝি না

 

আমি নখ হলেও সব বুঝি

তুমি বোবা ডাকাত

 

রক্তপাতশূন্য তুমি ছেঁটে ফেল ফোঁস করে উঠা সকল উর্দ্ধত বিদ্রোহ

 

২২ই মার্চ ২০২৪

ফতুল্লা

 

কালের শনি মহাকাল

 

একদিন আমার কাছে সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, তিতুমীর এসে

কবিতা চাইলো

আমি তাদের কবিতা নয় বারুদে ঠাসা ম্যাগজিন দিলেম

 

একদিন আমার কাছে নজরুল, সুকান্ত, আবুল হাসান, হেলাল হাফিজ এসে

বারুদে ঠাসা ম্যাগজিন চাইলো

আমি তাদের ম্যাগজিন নয় রক্ত টগবগ করা কবিতা দিলেম

 

একদিন একদল বারাঙ্গনা এসে আমার কাছে

আত্মহুতির পথ চাইলো

আমি তাদেরকে জীবনের গান শুনালাম

 

একদিন আমার কাছে একদল বীরঙ্গনা এসে

জীবনের গান শুনতে চাইলো

আমি তাদেরকে আত্মত্যাগের পথ দেখালাম

 

অথচ আমি না সূর্যসেন, না ক্ষুদিরাম, না তিতুমীর

না আমি নজরুল, সুকান্ত, আবুল হাসান, হেলাল হাফিজ

না বারাঙ্গনা, না বীরঙ্গনা

আমি কালের শনি আমি মহাকাল

 

২১ই মার্চ ২০২৪

ফতুল্লা

 

কফিন বৃত্তান্ত

একটি কবর খুঁজে পেয়েছি
সমগ্র পৃথিবীর সমান তার দৈর্ঘ্য
প্রস্থও তার সমান
অথচ এ মাপের কোনো কফিন খুঁজে পাইনি

কফিন ফ্যাক্টরীর ঠিকানাটা মুখস্ত আমার
ওরা আবলুস কাঠের কফিন তৈরি করে
নরম কোমল চন্দ্রশশীময় নারীর মতো করে
ফুলেরতোড়ায় সেজে থাকে কফিনের বহির্দেশ

কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি
জন্মসূত্রে
বুঝেছি কফিনের ব্যবসাও পৃথিবীতে অনেক লাভজনক
একটু কাঁধে করে নিলেই হয়…

২০ই মার্চ ২০২৪
ফতুল্লা

 

চমৎকার জোছনা

একবার মরে যেতে ইচ্ছে করে
মরে আবার জন্ম নিতে ইচ্ছে করে
যেমন চাঁদ মরে যায় আবার জেগে উঠে
যেমন চেঙ্গা মরে যায় আবার প্রজাপতি রূপে ফিরে আসে

আমি তো কোনো মানুষ নই
আয়নায় যতবার দেখেছি আমাকে
হায়েনার দাঁত বের হয়ে আসছে
দ্বিখণ্ডিত জিব বের হয়ে আসছে

শামুকের শাদা ডিম আমাকে অনেকবার ভাবিয়েছে
কাঁকড়ার লাল লাল পাগুলো ভাবিয়েছে বহুবার
দেখিছি লোহাগুলো পড়ে আছে
মাটিগুলোই ভেসে যায় কোনো বৃন্দাবন

আদিম পাথর ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিলাতি মাটি বনে যাচ্ছে অপার
শুধু বুঝেছি রাত হলেই বসন খুলে যায় চমৎকার জোছনার জোয়ার ভাটায়

৩রা মার্চ ২০২৪
ফতুল্লা

 

অতঃপর মহাসাগর থেকে মহাসাগরে

একদিন আমিও সুন্দর করে কথা বলতে পারতাম
আজ যেমন তুমি পারো
কেমন করে নিয়ে আসো জোড়া নয়নের হরিণ
তার চোখে সবুজ ঘাস আর ঘাস

আমি ঘাস হবো
ঘাস
তোমার সফেদ বুকের জমিনে
বাতাসে বাতাসে শিস দেবো

অতঃপর মিশে যাবো রক্তে
ঘামে রক্তে
মিশে যাবো সমুদ্রে সমুদ্রে
অতঃপর মহাসাগর থেকে মহাসাগরে

—-
২৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ফতুল্লা

 

আমার সকলের মতোই খুব সাধারণ দুটো চোখ

তুমি যেমন আকাশ দেখো
তুমি যেমন নদী দেখো
দেখো যেমন সবুজ অরণ্য

ঠিক ততটুকুই আমি দেখি।

আমার সকলের মতোই খুব সাধারণ দুটো চোখ

তবে কেন আমায় তোমরা আলাদা বলো?

আমি তো তোমাদের মতোই একই চন্দ্র সূর্যের নিচে
একই সবুজ ঘাসের গালিচার ওপর
তোমাদের মতোই স্বপ্ন এঁকেছি
একদিন সব দুখখের সমাধান হবে…

তারপর তোমরা
স্বপ্নের সোপান বেয়ে উঠে গেছো অনেক দূরে
ঘুড়ি যেমন ওড়ে যায়

তারপর একদিন
একদিন ইতিহাস হয়ে যায় পান্ডুলিপি
আমার কবিতার খাতায়।

০শে জানুয়ারী ২০২৪

ফতুল্লা

শাহ্ কামাল
কবি

Leave a Reply