You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। কবিতার প্রহর-১

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। কবিতার প্রহর-১

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪

কবিতার প্রহর-১

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

কবিতার প্রহর-১

ভাঙনের রাত

বাবুল আনোয়ার

 

বন্ধ হয়নি কোনো অন্ধ রাতের গান

বয়স বাড়েনি কোনো বিকেলের

কোথাও না কোথাও  মিশে গেছে আলো 

নূয়ে পড়া নদী বিবর্ণ বালুচর

দূর আবাহনে জোছনার সংগীত

ধ্রুপদী সুরে গেয়ে ওঠে খন্ড বাতাসে

সুদূর নায়িকার মুখ ভেসে ওঠে

বিস্ময়ে জেগে থাকে ভাঙ্গনের রাতে। 

 

(রামপুরা, ঢাকা)

 

কী দেখেছি গ্রামে আমি, কী দেখেছি নগরে
রানা জামান

হেঁটে যাচ্ছি গ্রাম থেকে গ্রাম হয়ে
কখনোবা কোনো শহরে,
পথ থেকে পথে দেখে যাচ্ছি বহু
যোগ হচ্ছে বিজ্ঞতার বহরে।

দেখেছি নদীকে শুষ্ক হয়ে যেতে
খাদকের লোভী পকেটে,
ক্ষমতাহীনের অগণিত দীর্ঘশ্বাস
বসেছে ওদের লকেটে।

শূয়রের থাবা সত্বেও গ্রামের রগে
প্রশান্তির ধারা বইছে অনন্ত,
পড়শী রাখে পড়শীর খবর প্রত্যেহ
সম্পর্ক অনেক বেশি ফলন্ত।

প্রখর রোদ্দুরে শিমূল তলায় মৃদু বায়ু
ঘর্মাক্ত শরীর দেয় জুড়ায়ে,
কত যে তৃপ্তির ঢেউ বৈশাখের ঝড়ে
কাঁচাপাকা ক’টি আম কুড়ায়ে।

ছয় ঋতু জুড়ে প্রতুল বৈচিত্র্য দেখি
গ্রামের শরীরে অনিবার,
কোনো কমতি নেই ঝর্ণার প্রবাহমান
সোম বুধ কিংবা শনিবার।

কী দেখি শহরে কাণাগলি ঘুরে অহোরাত্র
পাষাণের তপ্ত শ্বাসে দেহ পুড়িয়ে,
প্রতিবেশী দূরে থাক রক্তের নিবিড় সম্পর্ক
অনেক আগেই গেছে পুরো গুড়িয়ে।

অরুণ কোথায় ওঠে অস্তমিত যায় কোন্
প্রান্তে নাগরিকের থাকে না খবরে,
অনেক মানুষ বেওয়ারিশ থেকে প্রতিদিন
গাড়ির তলায় পড়ে, যাচ্ছে কবরে।

বৃক্ষের ছায়ার খোঁজে পরিশ্রান্ত পান্থ পথে
বসে কুকুরের মতো থাকে হাঁপাতে,
অঘ্রাণের পরে আসে না শীতের আপতন
কারো দেহ ভীষণ রকম কাঁপাতে।

অনেক ঋতুর মেলে না দর্শন নগরের শক্ত
শরীরের কোনো প্রান্তে ছিটেফোঁটাও,
দেখি না মৌসুম কোনোরূপ ফসল তোলার
ঋতু, উঠে গেছে কোনো ঋতু গোটাও।

বাজের জীবন যেনো নগরের চারিধারে
খাদ্য অন্বেষণে ছুটে রাত-দিন,
ইব্লিশেরা কানে কানে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে
নিঃসংকোচে: ওর জেবে হাত দিন।

তুলনায় বুঝে গেছি গ্রাম আর শহরের মাঝে
গ্রাম অত্যাধিক সুখের বহর, চমৎকার।
ঘাসের ডগায় শিশির যেমন নিবিড় সম্পর্কে
গ্রামেও তেমন আছে আজো, তাতে অমত কার?

 

( কিশোরগঞ্জ, বাংলাদেশ)

 

ফ্লাইওভার

সমাজ বসু

 

শহর জুড়ে ফ্লাইওভার —

মানুষ চলাচল নিষিদ্ধ,তবু কি অসম্ভব 

দ্রুত গন্তব্যে ছুটে যায় মানুষ।

অথচ এখানেই ছিল বাঁশের সাঁকো —

নিতাই বোষ্টমীর গান—

সাইকেল বিনুনি আর হাওয়াই শার্টৈর ভালবাসা। 

সাঁকো জুড়ে কুশল বিনিময়— কাঁসার বাসন বিক্রেতা আর বিকেলের রোদ ফুরোতেই

অন্ধকারেও ছিল 

বিশ্বাসের এপার ওপার নিরাপত্তা। 

 

এইসব অন্তরঙ্গ দৃশ্য মুছে—

এখন শহর জুড়ে অতি দ্রুত ফ্লাইওভার।

(গড়িয়া, কোলকাতা, ভারত)

 

স্বীকারোক্তি 

গোবিন্দ মোদক

 

সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে দেখতে বেশ লাগে। 

কিন্তু জীবনের সব ছন্দই কি সুরে বাজে 

অথবা সব সুর জুড়ে যথার্থ ছন্দময়তা? 

না! প্রগলভ হবো না।

বরং মেঘলা-ভাঙা রোদ্দুরে জড়িয়ে থাকে যে মায়া 

তার টানটান উপত্যকা জুড়ে বিষণ্ণতা আঁকবো

দ্যুতিহীন চোখে আঁকবো মায়াকাজল 

আর বন্দরে জাহাজ এসে পৌঁছালে 

অপেক্ষা করবো পাটাতন নেমে যাওয়ার শব্দের।

কারণ পাটাতন-সিঁড়ি না নামালে 

জাহাজ থেকে নেমে আসা যায় না,

যেমন যায় না ফেরারী রোদ্দুর থেকে মুখ ফিরিয়ে

জীবনের গ্রামোফোনে রেকর্ড বাজানো। 

অতএব আজ আর মিছে কথা নয় 

জ্বলজ্বল করুক শেষ স্বীকারোক্তি এই যে —

ভালোবাসাতে কিছু ভান ছিল 

কিন্তু প্রেমে কোনও কথকতা ছিল না।

(কৃষ্ণনগর, নদিয়া ,ভারত)

 

সবুজ পথের সন্ধানে

গৌতম তালুকদার 

 

দু হাতে আমার আছে যতো

কয়লার ভান্ডার,যা কিনা চোখের জলে- 

ভাসিয়ে দিয়েছে সমাজ সংস্কৃতি

সে সব আর্বজনা ধুয়ে মুছে দেবো 

এই অঙ্গিকার বর্ষা বাদলে তোমরাও থেকো।

 

অশুভ শক্তি আর কোনো মতেই

মাথা চাড়া দিতে পারবে না

সাজানো ফুল মালার রঙ্গমঞ্চ নিজের হাতে 

পুড়িয়ে দেবো বিবেক চেতনার আগুনে,

বন্ধুরা পাশে থেকো,ক্ষমা করে।

 

নক্ষত্রের কাছে জানতে চেয়েছিলাম

আমার অবস্থান কোথায় ?

ওরা দীক্ষা দিতে কানে কানে বললো

আমার আমি কে যদি মাটির প্রলেপে মেখে

সূর্যের কাছে দাঁড়াতে পারি তবেই……..

পথে নেমেছি সবুজ পথের সন্ধানে,

তোমার এসো বন্ধু এক সাথে চলি।

 

(কোলকাতা, ভারত)

 

হৃদয়ের দিন

আলম মাহবুব

             

অতলান্তিকে রক্তের শ্লোগান — 

হৃদয়ের দিন ঘুরে যায়

পায়ের সঙ্কেতে ভোরের পুকুর দুলে ওঠে            

প্রেমিকের হাতে নতুন শহর।

 

বর্শাফলার মতো চিকচিকে অনুভব,

মাঠের বিকেলে নড়ে ওঠে অনুপম সাঁকো

নরনারীরা  নিয়ন্ত্রিত পথে কুড়োয়

সকল সাধের আলোকের মানে।

 

আঁধারের নীরবতায় এখন স্নিগ্ধতা নেই

চারিদিকে অভিজ্ঞতার শব্দ, রক্তের, 

মৃত্যুর আর সংকল্পের।

 

সূত্রপাত জ্বালিয়ে দেয় আগুনের শিল্প

কারুকাজে মানুষের শীত অসারতা

অন্ধজগতের গভীর বাতাসে 

খেলা করে তবু সূর্যের উদ্দেশে।

(ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ)

 

রূপান্তর

তমসুর হোসেন

 

এই আমি কি সেই বিস্মৃত আমি?

অযত্মে রাখা ছেঁড়া পুস্তকের মতো অপঠিত

আমার ভেতর ফোটে নিরাশার কাব্য শতদল

জন্মে ব্যতিক্রমী, কল্পিত, অবাস্তব সব কিংবদন্তি।

 

মানুষ পুরনো হলে তার দেহ হতে কি মিশে যায়

সুদৃশ্য মুরলি আঁকা রঙিন মলাট?

সহসা অন্তর্হিত হয় ব্যক্তিত্বের সরব দাপট

ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসে গতির সীমা-পরিসীমা?

 

আমার ভেতর আমিত্বের নীরব রূপান্তর

বাল্য, কৈশর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব এবং বার্ধক্য

আমি তো কাউকেই হারাতে চাই না

কোনখানে বয়ে যায় অনাবৃত জীবনের নদী।

(কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ)

 

একটাই তো জীবন 

গোলাম রববানী 

 

একটাই তো জীবন 

বাঁচতে হবে, লড়তে হবে,বাঁচাতে হবে পৃথিবীটারে

চিন্তাঘিলু টক্সিক পেরেকঠোকা, রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন 

মরিয়া অননুমোদিত বাতাস শান্ত বায়ু থেকে বহুদূরে 

 

একটাই তো জীবন আলোকিত অন্ধকারে 

অন্ধকারেই জীবন শান্তি খোঁজে যেন আঁধার নিশ্বাসে 

অথচ আলো দেখিয়ে চলেছে আলেয়ার ঝলকানি

সাড়ম্বরে আড়ম্বরে অনুকম্পে, ওরে একটাই তো জীবন

 

কবিতা আজ জীবন লেখে, জীবনের বিতৃষ্ণা কবিতা

চোখে যেন মরুভূমির প্রখর তাপ হৃদয়ে ঝর্ণার জলপ্রপাত

হাইপারটেনশনে মগজ ফেটে যেন বের হয় হোমানল

অনলের সমর্পণ থেকে জেগে উঠে আজ দজ্ঞযজ্ঞ 

প্রেমের ভেতর প্রেম যেন মিশে থাকে বক্স জেলিফিশ হয়ে

আর ভালোবাসা যেন বহুরূপী ড্রাইভার পিঁপড়ের ঠোঁটে 

 

একটাই তো জীবন যেন উনুনের তপ্ত কড়াইয়ের মতো

কত সহজে ভাজে বঞ্চনা অবহেলা আর প্রতিহিংসা 

প্রতিহিংসার কবিতায় বিধ্বস্ত ফুলবাগান চিত হয়ে গেছে

নষ্ট ফুলেরা গন্ধ ছড়ায় না কখনও, সুরভিত সুদূর আকাশে

শরমের ঘটে যাওয়া ঘটনা মুখে নিয়ে লকলকে ইতিহাস

 

একটা-ই তো মানস জনম আমাদের 

এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে জীবনের সুপথ ধরে 

খামাকা ভাবছি সব, অযথা ছুটছি পথ, পথের বিমুখ প্রান্তরে..

 

(যশোর, বাংলাদেশ)

 

সিদ্ধি

চন্দন মিত্র

 

যেন দৃঢ় দণ্ডধর বজ্রযানী আমি
তপ্ত শলাকাটি ঠিক অগমে ডুবিয়ে  

তাপ মোচনের আগে যথাযথ থামি। 

 

তুলে এনে অনাহত তড়াগের পাড়ে   

ভাবি লাল অধিগম্য শালুকের ফুল     
সেধেও নিকটে তবু অনায়াসে ছাড়ে। 

 

তবু লব্ধ চিকনতা মেখে চোখেমুখে      

দেখি যত আয়োজন সবই বায়বীয়  

শূন্যতার জরায়ুতে ক্রমে যায় ঢুকে।    

 

তৃষাতুর ছেলে আমি কাকভোরে জেগে   

তলহীন জলভার যে রেখেছে ধরে  

তার প্রতি ক্ষুব্ধ হই তীব্র সংবেগে…

(দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, ভারত)

 

পর্ণমোচী অরণ্যে একা একা 

বিকাশ মন্ডল 

 

পাতা খসে, শব্দ নেই।  

 

ঝরাপাতা গাছটিকে কিছু বলে 

পাতাঝরা গাছটি ? 

 

গাছ ও পাতাদের কথা এতো নীচুস্বরে,

এতো কম ডেসবেলে….

 

আনমনা হতে মনে হ’ল, 

পাতা বলে : মনে রেখো

গাছ বলে : ফিরে এসো

 

পাতা খসে, শব্দ নেই 

আমি তবু অনুবাদ করি

তাহাদের অনুক্ত সংলাপ…. 

(হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)

 

অন্য বসন্ত

সৌমেন কর্মকার

 

দূরে কাহাদের ওই পৃথিবী, রঙে-কোলাহলে অধীর,

আঙুলে ছোঁয়া, বুকে মাথা, জোড়ায় জোড়ায় ভিড়।

কানে উঁকি গোপন কথা, ছন্নছাড়া প্রেমের মরশুম,

বন্দী হয়ে আপন ঘরে, আমার একলা থাকার গুম।

 

রঙ দেখলেই, এখন বিষণ্ণতা ঘেরা, লাগে অরুচিময়,

চোখের পলক আঘাত ঠিক বুঝে, দিব্যি যেমন সয়।

শাড়ির আঁচল, পাঞ্জাবির ওপরে, জ্বলজ্বল রাঙা মুখ,

পাবে না জেনেও দেখাই সার, ভিখারীর অলীক সুখ।

 

ইচ্ছে তো ছিল আমারও, কেউ একজন তুমি পেলে,

প্রেম সহজে আসে না, উত্তর দখিনা হাওয়ায় মেলে।

ক্লান্ত দিন, প্রতিবারে, ভাবিয়ে মন ধূসর ক্ষত-বিক্ষত,

কেউ আসবে কি? জানালায়, দরজায় অপেক্ষা যত।

 

ফাগুনের বার্তা খালিখালি শুনি, অলক্ষ্য পাশে-দূরে,

ঝরা পাতার পথিক সেজেছি, শুকনো পথটা জুড়ে।

একুশটা বছর কিছু তো অভাব, বসন্ত আসলে মানি,

সঙ্গী নিয়ে হেঁটে ঘোরা, হাতে-হাত, ওখানে ইর্ষাখানি।

 

পোড়া স্বপ্নের গন্ধ, শিরীষ বনে,গাছের ছায়া বিরূপ,

ফুরোনো বেলায়, নত অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকি চুপ।

দিন কেটে গেলে, আসবে ফের, দগদগে শূন্যতা এই,

তোমাদের বসন্ত আমার উদাস দুপুর, শুধু তুমি নেই।

( উত্তর চব্বিশ পরগনা, ভারত)

 

নষ্ট জীবন

সুপর্ণা আচার্য্য চক্রবর্ত্তী 

 

রাতের পর রাত জ্বলে থাকা ল্যাম্পপোস্টের ওই বাতিগুলি

যখন নিভে যায় মনে হয় ভোরের সন্ধিক্ষণ,

নিভে যাওয়া বাতিগুলি বহন করে ধূসরতা মালিনতা পরিপূর্ণ জীবনের।

 

আয়নার ভাঙা কাঁচগুলো গভীর আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায় ,

বহন করে সে ক্ষত বিক্ষত মনের ;

যেখানে ঠাঁই পায় না

গভীর ভালোবাসাও।

 

ডাস্টবিনের সেই নোংরা আবর্জনার স্তূপ

যা বহন করে বোঝাযুক্ত সম্পর্কের।

মরচে ধরা লোহা প্রমাণ দেয়

সম্পর্কের অবনতির।

জ্বলন্ত সিগারেটের উড়ন্ত ধোঁয়া উড়িয়ে নিয়ে যায় উন্মত্ত নেশায় ,

 

মুখের মধ্যে মুখোশ পরিহিত সভ্য ব্যক্তি সকল

কখনও যে চার দেওয়ালের গণ্ডিতে হয়ে ওঠে নররূপী রাক্ষস।

তার বলা প্রত্যেকটি বাক্য যেন সেই জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়,

হুল ফুটিয়ে যায় শরীরের প্রত্যেকটি বিন্দুতে;

আস্টেপিষ্ঠে বেঁধে থাকা সম্পর্কের ভিত কেমন যেন আলগা হয়ে যায়।

 

নারী মানেই কি অবহেলিত?

নারী মানেই কি বঞ্চিত আজও এ সমাজে?

হয়তো সকল ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়,

প্রযোজ্য সেথা যেথায় সে অযোগ্য তার কর্মদক্ষতায়,সমকক্ষের দেনাপাওনায়।

 

কালো চশমার ফ্রেমে ঢাকা ঐ চোখ দুটিতে

কখন যে ভরিয়ে দিয়েছে চোখের কোণ,

তার ষাট বছর বয়স জীবন ইতিহাসের খাতার

প্রতিটি পাতা হৃদয় মর্মে যেন গাঁথা রয়েছে,

তাইতো আজও সেই নারীর ক্ষণিকের স্মৃতির পাতায়

সব জ্বল জ্বল করে ওঠে তারাভেজা নক্ষত্রদের মতো……*

 

(রাজপুর, কোলকাতা, ভারত)

 

না লেখা কবিতা

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী

 

চুরি যাওয়া ডায়েরির পাতায় শুধু

লেখা ছিল কথা কাটাকাটির কথা

কোথাও ছিল না তাতে বিচ্ছেদের পূর্বাভাস।

ছিল কিছু অবাস্তব স্বপ্নের কথা

মধ্য মেধার সাজানো তাকে ছিল

সদ্য পড়া কিছু মেটাফিজিক্যাল কবিতা।

 

সারা শহর জুড়ে তখন মখমলে বসন্তের দিন।

উদ্যানে উদ্যানে চোখ জুড়ানো রঙিন গালিচা।

সরু খিলানের নিচে তখনও অস্পষ্ট 

হয়ে আসা কোন প্রেমিকের প্রেমচিহ্ন আঁকা।

শালপাতায় এঁটো কুড়ানো পথ কুকুরের 

মতো ছিল সামান্য হাত খরচের চিন্তা।

 

এই মহার্ঘ প্রচেষ্টায় কখনও তাচ্ছিল্যের 

হাসি হেসে উঠতো সারা শহর।

ঝরা পাতার মর্মরে বেজে উঠতো 

হাজার শব্দের গোপনীয়তা।

 

দীর্ঘশ্বাস বেজে উঠতো অক্ষরে অক্ষরে

কয়েক দিনের মৌন ট্রাফিকে থেমে যেত ঝড়

আগুনের বৃষ্টি নামত ভিতরে ভিতরে।

ডায়েরির পাতায় পাতায় ছিল রেড সিগন্যাল।

হারিয়ে যাওয়ার পর ভেজা সন্ধ্যার 

রাজপথে আমি তখন হেঁটে যেতাম একা।

(হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)

নিমন্ত্রণ 

মুহাম্মদ শামীম 

 

ঘুম ভাঙার পরে জেনেছি,

আহত পাখি; কখনো ফিরবেনা নীড়ে।

 

আমাদের আলাদা হয়েছে পথ,

কিন্তু যতদূর চোখ যায়, যতদূর যায় না;

পুরোটাই ছোপ ছোপ দাগে

ছাপ রেখে গেছে হাজারো অনুরাগে। 

 

ফিরবেনা জেনেও পাখি

প্রতিনিয়ত করেছি সমর্পণ,

স্মৃতির দেয়ালজুড়ে আল্পনায়

পথভোলা পাখির নিমন্ত্রণ।

 

(বরিশাল, বাংলাদেশ)

 

শূন্য সংশয়

রহিত ঘোষাল

 

কেন বেঁচে থাকতে হয় জানো?

ফোঁটা ফোঁটা জল শরীর ছুঁয়ে দেবে,

অবিরাম,

ওয়াশপুরের এক মেয়ে তার ব্যক্তিগত

ডায়েরি

যেদিন আমার হাতে তুলে দিয়েছিল

সেদিনই একটা লক্ষ্মীপ্যাঁচা প্রথমবার

আমাদের ছাদে এসেছিল, 

ছমছমে অরণ্য নশ্বর দেবকন্যা হয়েছিল,

তার কপালের ছোট 

বিশ্রী সেলাইয়ের দাগ 

সমুদ্রের ফেনার মতো,

গালভর্তি শালুক হাসি,

কোকিলের পৃথিবী জন্ম 

হেমন্ত খামে আবছায়া,

ঘূর্ণ্যমান জীবনসঞ্চার ।

 

(কোলকাতা, ভারত)

Leave a Reply