শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা
শৈলজানন্দ রায় এর গুচ্ছ কবিতা
শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা
শৈলজানন্দ রায় এর কবিতা
বিসর্জন
একটি নতমুখ বিমর্ষ দিনের অনাহারী সূত্রের বিতর্কের মুখোমুখী– সেই সূত্রের সূত্রে পিতাপুত্রের অংকের মিহিন আনুপাতিক সম্পর্কের কথা যেতে যেতে মূর্ছিত প্রায়– তন্দ্রামুখী!
সংখ্যার ভীড়ে ‘শূন্য’ আর ‘ইনফিনিটি’র মতো অবহেলিত অংক-উপাখ্যান… আর যা-যা অন্তর্গত সমস্যায় পড়ে তা অংকের গিঁটে আটকানো চিকন প্যাঁচালো সুতোয় দোদুল্যমান– সামান্য বাতাসে নড়ে!
ভোরের কুটনৈতিক আলোকে অতিক্রম করে সেই ঝড়ের রাতের কথাই অস্ফুট– জীবনচক্রের সমস্ত খোলস ছেড়ে যে রাত্রে একটি অনুচ্চারিত রঙমনস্ক প্রজাপতির জন্ম হয়েছিল–
প্রজাপতিটি অন্ধকারের বাতাসে সমস্ত রঙ উড়িয়ে দিয়েছিল– আজ সেই মনোরম ত্যাগ এক বিস্তৃত অংক।
ভগ্নাংশ
অতসীর সাথে যে চুলচেরা গাণিতিক সম্পর্ক তার একের দুই অংশ উষ্ণ ঝগড়ার, একের চার অংশ মারপিটের, একের চার অংশ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার ! আর প্রশস্ত বাকি অংশ ভ্রম! তা কেউ বলতেই পারে সম্পূর্ণ ভালোবাসা এক… ছল–
এই ভগ্নাংশবিধুর সম্পর্ক ভেঙে এমন গুঁড়োগুঁড়ো পরিণতির উপক্রম যে, ঢাকাপড়া চন্দ্রের আহত জোছনার প্রশ্রয়ে ম্লান, অথবা প্রথম বসন্তের মতো মাতাল হাওয়ায় উড়ে যাওয়া ঝরা পাতাদের দল!
ভাঙা আয়নার শরীর মরীচিকাপ্রবণ… এখানেই অন্তর্গত মৃদু প্রপঞ্চ– যে কেহ মর্মাহত! যে পাথরের নিয়তিই ভগ্নতা তাকে পাথর না বলে নির্মল মৃত্তিকা বলা শ্রেয়। কারণ, যে নদীর জল গভীর অতল সেও কদাপি সমুদ্র হয়ে উঠতে পারে ঢেউয়ের উন্মাদনায়।
তবে, জগতে এমন কিছু ভেরিয়েবল আছে, যেগুলো ভেঙে গেলে পুনশ্চ জোড়া লাগানো ঠিক নয়!
উৎস
যেখানে ঝড় থেমে গিয়েছিল– মধ্যরাত, সেই রাতের কিনারা থেকেই অরণ্যের শুরু। জীবনভোর ভ‚মি গবেষণার পরও তার গভীরতা নির্ণয় করা গেল না… স্রোতস্বিনী! এখানে একক নিয়ে সংশয় থাকলেও থাকতে পারে! আবহাওয়া নিয়ে কোনো ভুল প্রোপাগান্ডা… যেহেতু গবেষণার বিপরীতে এরর থাকাটা অবশ্যম্ভাবী। অধিকন্তু অতীতের নিভৃত জনপদ এখন জলবায়ু-বিতৃষ্ণ আর শ্বাপদসংকুল… জন্তু আর মানুষের বহুব্রীহি প্রভেদ ক্রমশ অবলুপ্তির পথে! এখন দাপটের সাথে ডাঙায় কুমির আর বাঘ জলে।
দু’কুল ভাঙা তমসা নদীর স্রোতে কী আছে জমা, কী আছে অবশিষ্ট দণ্ডনীয় অপরাধের ক্ষমা। এখানে অনুতাপের প্রশ্ন– অপেক্ষা একটি পবিত্র ক্রিয়াপদ হলে!
ভোরের উৎসাহ নিয়ে যে রাত্রি ছুটে চলে, নিমজ্জিত অন্ধকারে থেকেও সে শুধু আলোর কথাই বলে। সেই রাত্রির অপেক্ষায় যেখানে প্রচ্ছন্ন হলেও দুর্বিনীত আলোক বর্তিকা নিয়ে জোনাকী জ্বলে।