You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪। অণুগল্প: হতবাক-শংকর ব্রহ্ম

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪। অণুগল্প: হতবাক-শংকর ব্রহ্ম

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪

অণুগল্প: হতবাক
শংকর ব্রহ্ম

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪

অণুগল্প

 

হতবাক

শংকর ব্রহ্ম

               একটা গল্প লিখব হবে বলে লেখার টেবিলে এসে বসেছি। এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠল। এই সময় কেউ এলে ভীষণ বিরক্ত লাগে। বিরক্তি নিয়ে উঠলাম। বাড়িতে কেউ নেই। আমাকে বাড়ির পাহারায় রেখে সকলেই গেছে একটা বিয়ে বাড়ির অনুষ্টানে। আমার জন্য ফ্রিজে বিরিয়ানী ও চিলিচিকেন রান্না করে রেখে গেছে, গরম করে নিতে হবে রাতে। বাড়ির সকলে ফিরবে কাল সকালে। দরজা খুলেই বিমূঢ় বিস্ময়ে হতবাক আমি।

    

           দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর আমার পুরনো প্রেমিকা তনয়া দরজায় দাঁড়িয়ে। যার জন্য আমি একসময় পাগল হয়ে উঠেছিলাম। ভেবেছিলাম তাকে না পেলে জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করব না, এমনও প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সেসময়। জোর করে একদিন ওর বাবা হঠাৎ বিয়ে দিয়ে দেয় ওর, এক স্কুল মাষ্টারের সঙ্গে। আমি তখন কাঠ বেকার। কোন কিছু করার উপায় ছিল না আমার। টিউশনি করে নিজের হাত খরচ চালাতাম কোনরকমে। তখন আমার পক্ষে তনয়াকে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না। বিয়ের পরও কিছুদিন চিঠিপত্রে যোগাযোগ ছিল ওর সঙ্গে। তখন মোবাইল প্রচলন এমনভাবে হয়নি।

একদিন একটা চিঠিতে ইনিয়ে বিনিয়ে কি সব লিখেছিলাম মনে নেই আজ আর। তবে তা’তে দু’টো লাইন লিখেছিলাম আজও মনে আছে 

“খুব বেশি দুঃখ পেলে চলে এসো আমার কাছে

তোমার জন্য বুকের মধ্যে এখনও আমার জায়গা

আছে।”

    সেই চিঠি লেখা খামখানা পড়েছিল ওর বরের হাতে। তারপর থেকেই ওর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সম্পর্কের ইতি টানে তনয়া। প্রায় ত্রিশ বছর আগেকার কথা।

তারপর এতবছর পর তার দেখা পেয়ে মনটা খুশি হয়ে উঠল।  কিন্তু এ কী চেহারা হয়েছে তনয়ার। চুলগুলো সাদা শনের নুড়ি, অনেকগুলো দাঁত পড়ে গিয়ে, গাল দু’টো চুপসে ভিতরে ঢুকে গেছে। কুৎসিৎ দেখতে লাগছিল। এর জন্যই আমি একসময় পাগল হয়ে উঠেছিলাম, ভেবে অবাক হলাম। তবুও পুরনো প্রেমিকা বলে কথা! 

আপ্যায়ণ করে ঘরে এনে বসালাম। আমার জন্য রাখা ফ্রিজের বিরিয়ানী চিলিচিকেন বের করে, মাইক্রো ওভেনে গরম করে খেতে দিলাম তাকে। তারপর ফ্রিজে রাখা দই মিষ্টি বের করে দিলাম। সে তৃপ্তি করে খাওয়ার পর, তাকে এনে বিছানায় বসালাম। 

তারপর প্রতিশোধ নেওয়ার মতন করে আমার অতৃপ্ত বাসানার পরিতৃপ্তির জন্য, তাকে বিছানায় ফেলে অপর্যাপ্ত ব্যবহার করলাম। মোটেই আপত্তি করল না তাতে সে। বরং তারিয়ে তারিয়ে যেন উপভোগ করল ব্যাপারটা।

আরও কিছুক্ষণ থাকার পর সে চলে গেল। যাওযার সময় আমি তাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বললাম, আবার এসো একদিন। মুচকি হেসে সে কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেল।



        পরদিন সকালে অবনী (তনয়ার পিসতুতো দাদা) ফোন করে জানাল, তনয়া কাল মারা গেছে, হার্ট অ্যাটাকে। অবনী আমার বন্ধু, সেই সূত্রেই তনয়ার সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। তনয়া ওর মামাতো বোন। আলাপের কিছুদিন পরেই আমরা পরস্পরের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। বছরখানেক প্রেম চলার পর তনয়ার বাড়ি থেকে সব জানতে পেরে আচমকা ওর বিয়ে দিয়ে দেয়।



আমি অবনীর কাছে জানতে চাইলাম, কবে, কখন ঘটল ঘটনাটা?

অবনী বলল, কাল সন্ধ্যা সাতটায়।

আমি তার কথা শুনে হতবাক হয়ে যাই ! 

তা কি করে সম্ভব? সেই সময়টাতেই তো তনয়া আমার কাছে এসেছিল কাল। আমি অবনীকে আর কিছু বলতে পারলাম না। শিরশির করে উঠল আমার ভিতরটা। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।


শঙ্কর ব্রহ্ম

জন্ম – ২ মার্চ, ১৯৫১

শিক্ষাগত যোগ্যতা – 1972 সালে (সাউথ সিটি কলেজ), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক।

জীবিকা- অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

লেখালেখি- পঞ্চাশ বছর ধরে।

তার কবিতা অনেক সম্মানের দাবি রাখে।

প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা – ছয় (6)

  তিনি “মহানগর”-এ লিখেছেন – সমরেশ বসু সম্পাদিত,

  তিনি লিখেছেন – শিবনারায়ণ রায় সম্পাদিত “জিজ্ঞাসা”,

পবিত্র মুখার্জী সম্পাদিত “কবিপত্র”-এ তিনি লিখেছেন,

তিনি “বাংলা স্টেটমেন্ট” দৈনিক নিউজ পেপারে লিখেছেন,

তিনি কলকাতা কর্পোরেশন ম্যাগাজিনের “পুরশ্রী” তে লিখেছেন,

 

এবং – শতাধিক “লিটল ম্যাগাজিন” এর লেখক।

Leave a Reply