শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪
অণুগল্প: প্রেমধর্ম
জুঁই ভট্টাচার্য
শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪
অণুগল্প
প্রেমধর্ম
জুঁই ভট্টাচার্য
— আম্মু! রাস্তায় রথ টানি চলো না!
— এবার ঘরেই টানো। এক্ষুণি জিলিপি নিয়ে বাবা ফিরবে।
— সে তো অনেক দেরী। আমরা তার আগেই ফিরে আসবো!
করোনাতঙ্কে কি করে বাইরে যাবে সে মেয়েকে নিয়ে? সুতনু থাকলে ঠিক ভুলিয়ে রাখত। অসম্ভব ধৈর্য মানুষটার। কান্না শুনে সালসাকে কোলে নিয়ে আদর করে ছোট্ট মুখে মাস্ক পরিয়ে নিজেও পরে আয়েশা। কাপড়ের বটুয়াটায় স্যানিটাইজার, ঘরের চাবি ভরে সাজানো রথ নিয়ে ফ্ল্যাটের বাইরে এসে টেনে দেয় দরজাটা।
কমপ্লেক্সের সবুজের ছোঁয়ায় আয়েশার গ্রামের কথা মনে পড়ে। লন পেরিয়ে পার্কে পৌঁছে খুশি মনে রথ টানে সালসা। কাঠের বেঞ্চিটায় বসা আয়েশার স্মৃতিতে তখন ছ’বছর আগের রথের দিন…..
বড় খালার ছেলে সিরাজের সাথে আয়েশার বিয়ে ঠিক ছোটবেলাতেই। অবাধ মেলামেশায় সালসা যখন গর্ভে, মোটা পণ দাবী করে সিরাজ ও তার পরিবার। অনন্যোপায় আয়েশা আত্মহত্যার পথ বাছে। রথের সন্ধ্যায় পাশের গ্রামে মেলা দেখার অছিলায় বেরিয়ে রেললাইনে ঝাঁপ দেবার মুহূর্তে একটা বলিষ্ঠ হাতের হ্যাঁচকা টান। তারপর সময়ের কাছে প্রেমধর্মে দীক্ষা দুজনার। সম্পর্কটা মেনে নেয়নি সুতনুর পরিবার এবং দুই ভিন্নধর্মী সমাজ। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে সেরে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সুতনু আয়েশাকে নিয়ে আসে এখানে।
কাঁধে সেই ভরসার স্পর্শ।
— বাড়ি লক দেখেই বুঝেছি তোমরা এখানে। চলো!
— “বাবা! বাবা!” ছুটে এসে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সালসা। তিনটি হাসি মুখ মাস্কে ঢাকা পড়লেও চোখগুলোয় আনন্দ চিকচিক করে।