শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪
অণুগল্প: প্রস্থেটিক গোলাপ
আকাশ পাতর
শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪
প্রস্থেটিক গোলাপ
আকাশ পাতর
কলেজের ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরব বলে বাসস্টপে বসেছিলাম, হঠাৎ কিছুটা দূরে একটা আধভাঙা কংক্রিটের দেওয়ালের পাশে আমার এক পুরনো বন্ধু পলাশকে দেখতে পেলাম। দেখলাম পলাশের কাঁধে মাথা আর এক হাতের উপর হাত রেখে বসে আছে একটি মেয়ে, আর অন্য হাতে রয়েছে একটা প্রস্থেটিক গোলাপ।গভীর প্রেমালাপে আবদ্ধ যুগলের মুখে বারেবারে স্ফীত হয়ে উঠছিল সূর্যের প্রথম কিরণের মতো কোমল হাসি।তাদের দেখে মনে হচ্ছিল এই প্রণয় যেন বুনো মৌমাছির সংগৃহীত মধুর মতোই নিখাদ ও সুমিষ্ট। মিনিট দশেক এইভাবে চলার পর একসময় পলাশ মেয়েটির হাতে ফুলটি দিয়ে তার কাছথেকে বিদায় নিয়ে আমার কাছাকাছি আসতেই আমি পলাশকে ডাক দিলাম। ওর এখানে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করতেই পত্যুত্তরে পলাশ ওর স্বভাবসিদ্ধ ভাষায় বলল ডিউটি করতে এসেছি,খুব ব্যস্ত আজ আরো এক জায়গায় যেতে হবে ডিউটি করতে। আমি অবাক হয়ে কিসের ডিউটি জিজ্ঞাসা করায় সে মৃদু হেসে বলল আরে জানিস না!আজ তো ভ্যালেন্টাইনস ডে, তার ডিউটি।কথাটার অর্থ বোঝার কষ্টের চেয়েও বেশি কষ্ট হল একটু আগের দেখা ওই ঘটনাটার কথা ভেবে।হঠাৎ দেখলাম পলাশ চলে যাচ্ছে আর ওর প্যান্টের পকেট থেকে বেরিয়ে রয়েছে যেন সদ্য হত্যা হওয়া কয়েকটা গোলাপের পাপড়ি।এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরো একটা ঘটনা জীবনের সমস্ত সমীকরণকে ভিত্তিহীন করে দিল।দেখলাম পলাশের সেই প্রেমিকা এখন অন্য একটি ছেলের হাত ধরে,চুম্বক ও লোহার মধ্যে যে ঘনিষ্ঠতা সেইভাবে হেঁটে যাচ্ছে। প্রেমিক-প্রেমিকা যদি একে অপরের প্রতি প্রেম নিয়ে এত নিখুঁত অভিনয় করতে পারে তবে প্রেমের থেকে ভয়ংকর ও নৃশংস জিনিস পৃথিবীতে আর কিইবা থাকতে পারে?দেখতে দেখতে অস্পষ্ট হয়ে আসছে তাদের অস্তিত্ব, তারমধ্যেও দেখতে পেলাম ওই বেনামী ছেলেটির হাতে রয়েছে পলাশের দেওয়া সেই টুকটুকে লাল প্রস্থেটিক গোলাপটা।
আকাশ পাতর এর জন্ম ২৭ ডিসেম্বর ,২০০১ সালে বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত কাঁকড়াদাড়া গ্রামে।গ্রামের স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক সম্পুর্ণ করে বর্তমানে স্নাতকোত্তরে পাঠরত।একাধিক কবিতার পাশাপাশি প্রকাশিত দুটি গল্প হল–‘যবনিকা পতন’, ‘বন্ধু যখন সাপুড়ে’।