You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪। গল্প: মায়াজানালা- তাপস রায়

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪। গল্প: মায়াজানালা- তাপস রায়

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪

গল্প: মায়াজানালা
তাপস রায়

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪

মায়াজানালা

তাপস রায়

 

পুব দিক হলেও এই ঘুপচি  জানালায় যে রোদ বসে তাইই জানত না।  তালে আজ হঠাৎ যে রোদ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে! রাতে ঘুম হয় না বাতের শরীর জুড়ে এখানে ব্যথা, সেখানে ব্যথা সারা রাত উঃ আঃ করতে করতেই ফুরিয়ে যায় ভোরের দিকে যখন অন্ধকার নরম, তখন একটু ব্যথার দপদপানি থামে। একটু চোখে টান ধরে কিন্তু সে আর কতক্ষণ! দশ পনেরো মিনিট হলেই মনে হয় জম্পেশ ঘুম হয়েছে

এর মধ্যেই দোতলার ডাক্তার দিদিমণি হয়ত হাঁক পাড়বে, “ ননীমাধব, সিঁড়ির দরোজা খুলেছ?”

তখন ধড়ফড় করে উঠে পড়তে হয় মশারি গুটিয়ে ঘুম চোখে সিঁড়ির মুখের তালা খুলে দিতে হয়। তিনি গাড়ি নিয়ে বেরোন ঠিক সাড়ে ছ’টায় ছটা চল্লিশে গার্ডেনরিচের জল  ঢোকে নীচের ট্যাঙ্কে দশ মিনিটের ভেতর পাম্প না চালালে ছ’তলার উপরের এই হাউসিং এর ট্যাংক ভর্তি হবে না অল্প সময়ের ভেতর ওই জল খরচ শুরু হয়ে যাবে স্কুলকলেজ, আপিস, মায় গৃহিনীদের স্নান আটকে যাবে সে হুলুস্থুলু ব্যাপার তবে রবিবারে এই তাড়নাটা কম

            ননীমাধব রবিবারের আলস্যটা বেশি করে মাখছিল বিছানায় শুয়ে অভ্যাস মতো সাড়ে পাঁচটায় ঘুম ভেঙে গেছে কিন্তু এই ফ্ল্যাটের বাবুদের মতো তারও রবিবারে বাবুগিরি করতে ইচ্ছে করে দড়ির খাটিয়ায় ঝুলে থেকে তার শরীর একটু এদিক ওদিক করে চিৎ হয়ে বড় করে একটা হাই তুলে বাঁদিকে মোড়া মারতেই আজ এই অবাক কাণ্ড থমথমে জানালাটা যেন ঝলমলে লাগছে!

            ননীমাধব চোখ পিটপিট করে বিড়বিড় করে, “ স্বপন নয়তো!” স্বপ্ন দেখার রোগ তার অনেকদিন হলো ভেগেছে সেসব একসময় ছিল কাঁচাবয়সে সবার যেমন থাকে তারও ছিল তখন মাঝে মাঝেই স্বপ্ন দেখত, জুড়নের বউরে ভাগিয়ে নিয়ে সে মালাচন্দন করে নিচ্ছে।  

তাদের গাঁয়ের জুড়ন বৈরাগীর বঊ বেমক্কা সুন্দরী ছিল ওই কাঠিকাঠি শরীরের জুড়ন বাউলের আছে কি! একমাথা চুল বাদ দিলে আর সব হাড়গোড় হ্যাঁ তার গলায় সুর আছে বাউল গান ধরলে মনসাগাছতলায় ভিড় হয়  তাতে দুদশটাকা জমাও পড়ে কিন্তু ওই মানুষটার শরীর বলে তো কোনো পদার্থ নাই একটা সুন্দরী যুবতী মেয়ে কদ্দিন আর ওই গলা ধুয়ে জল খাবে! ওই কাঠি শরীল দে সোমত্ত মেয়ের শরীরের তাপ জুড়তি পারবে না কি!

            ননীমাধব স্বপ্ন দেখত সেই ছিপছিপে সুন্দরীরে সাইকেলে বসায়ে নদীর পাড়ের রাস্তা দিয়ে সে দুপুরের হাওয়া কাটতি কাটতি অনেক দূরি যাচ্ছে তারপর ঘুরে এসে বসেছে রূপনারাণের পাড়ে রূপনারাণের ঠান্ডা হাওয়া খাচ্ছে আর প্রাণ জুড়নো গল্প করছে

            ননীমাধব সে স্বপ্ন প্রায় সত্যি করে ফেলেছিল জুড়ন বৈরাগী মাঝে মধ্যে ট্রেনে চেপে গান গেয়ে মাধুকরী করে তাতে ইনকাম একটু বেশি হয় ননীমাধব বেশ কতক দিন ধরে নজরে রেখেছিল এমনকি একদিন জুড়নের পিছু পিছু স্টেশনে গিয়ে দেখেছিল সে বিশ্বভারতী এক্সপ্রেসে উঠেছে আর ফেরাটা নজর করতে গিয়ে ননীমাধব সেদিন দোকানে বেশি বেশি কাজ করছিল মালিক দোকান বন্ধ করতে বললেও দোকান বন্ধ করছিল না  জুড়ন কখন ভ্যানরিক্সায় বাড়ি ফিরবে তা সে জানতে চায়

            পরের দিন  দুপুরবেলায় দোকানের মালিক বাড়িতে খেতে গেলে একটা সাইকেল নিয়ে ঝপ্‌ করে চলে এসেছিল ননীমাধব হাতের বিশাল  তরমুজ মাটির দাওয়ায় নামিয়ে রেখে সাইকেলে ক্রিং ক্রিং দিলে সেই বাউলসুন্দরী ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসে কিছুটা তো ঘাবড়ে গিয়েছিলই

            ননীমাধব কথা ফেলে, “ বৌঠান, দুপুরে বাড়ি আসতিছিলাম পথে ভালো তরমুজ পালাম তাই নিয়ে আলাম কিন্তু এসব কেটেকুটে কে দেবেনে ভাবতি ভাবতি আপনার দোরে

           

                                                                       

বাউলসুন্দরী যে ননীমাধবকে নতুন দেখছে তা নয় তার পাকের ঘরের জানালার উল্টোদিকেই তো ননীমাধবের জানালা দুই জানালার মাঝখানে দূরত্বও বেশি নয় মেরেকেটে পাঁচ ফুট ননীমাধব মাঝেমধ্যেই টের পায় উল্টোদিকের জানালা যেন ফিসফিস করে কথা বলছে। ননীমাধব নিজের জানালায় দাঁড়াতেই একখানা লম্বা হাওয়া সরে যায়। দু’দিকের জানালাই সবসময় খোলা থাকে তবে ননী মাধবের জানালাই বেশি উসখুস করে

 তরমুজ কেটেকুটে সুন্দর করে থালায় সাজিয়ে নিয়ে এসে বাউলসুন্দরী বলে, “ খান গো বৈরাগী।” তারপর  একটু চোখ মটকায় ওই চোখের ইশারায় ননীমাধবের যা তা অবস্থা তার মাথায় একটু ঘুরঘুট্টি ঘোর লাগে সেই ঘোরের ভেতর বসে থেকেই দেখে তার সাইকেল গ্যারেজের মালিক শানবাবু বাইক থেকে নেমে দাওয়ার কোণে বসা ননীমাধবের দিকে না তাকিয়ে সোজা বাউলসুন্দরীর ঘরে গিয়ে দোর দিল তখন ননীমাধবের সামনে রাখা থালার লাল তরমুজের  কালো কালো দাঁত ফিক্‌ফিক্‌ করতে লেগেছে। ননীমাধব কী করবে!নিজের বাড়িতে তো আর ফিরতে পারবে না। বাড়িতে গেলেই সেই খোলা জানালা হাঁকরে তার দিকে তেড়ে আসবে।  পারলে কালো দাঁত বের করে ভেঙচি কাটতেও পারে।

“নিকুচি করেছে ঘর-দোরের!”

সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিয়ে ননীমাধব ভাবে উধাও হয়ে যাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। গ্যারেজে সাইকেল রেখে ট্রেনে চেপে সোজা হাওড়া। সেখানে ট্রেন থেকে নেমে তো আর এক গেরো। ‘এই কুলি, এই কুলি’করতে করতে মোটা মোটা তিনজন মানুষ তাকে পাকড়াও করে। আর তার মাথায় চাপিয়ে দেয় তাদের বাক্স-প্যাটরা। ব্যাস, দিন কতক কুলিগিরির কাজ করে মনের ব্যারাম মেটায় ননীমাধব।

            কুলিতে কুলিতে ঝগড়া যেমন আছে, ভাব-ভালোবাসাও আছে। ননীমাধবের গলার কণ্ঠি দেখে এক কুলি ভাব করে ফেলেছে তার সাথে। ননীমাধবের যুবক শরীরে একটা আলগা শ্রী আছে। চোখ-মুখ কেমন মায়ালাগা। কুলির ঘরে কুলি থাকবে তা এমন বড় কথা কি! তো সেই সর্দার কুলি ননীমাধবকে নিয়ে যায় নিজের বাড়ি। রামরাজাতলায়। তার তো মনে উদ্দেশ্য আছে। নিজের কালোকুলো মেয়ে সেয়ানা হয়েছে। তারে যদি ননীমাধবের  কোচ্ছে গছান যায়  খরচাপাতি নাই বৈষ্ণবের মালাচন্দন করতে কী আর খরচ!

হরেরামকুলি যত তার সতেরো বছরের মেয়েকে ননীমাধবের দিকে ঠেলে দেয়, ননীমাধব তত এগিয়ে যায়  পঁয়ত্রিশ বছরের কুলির বউ, বোষ্টমীর দিকে। ননীমাধব নিজের ঘরের জানালায় উঁকিমেরে দেখে সে বোষ্টমী উবু হয়ে রাস্তায় বসে কয়লার উনুন ধরাচ্ছে। তার চোখ চলে যায় কুলির বঊ-এর আঁচল খসা রসাল বুকে।  সে বোষ্টমী মনে হয় টের পায়। সে ইচ্ছে করেই আঁচল খসায়। মাঝেমধ্যে চা-বিস্কুট দিতে এসে কুলির বউ নিচু হয়ে দেখায় বুকের সম্পদ। আর অকারণে হাসে। ননীমাধব ওই বোষ্টমীর কথা ভাবতে ভাবতে হাওড়া স্টেশনে মাল টানে। আর ভাবে এই বোষ্টমীকে নিয়ে পালিয়ে সে কোথায় যেতে পারে! বোষ্টমীর হাভভাব দেখে তো মনে হয়, রাজি হয়ে যাবে

            কিন্তু হরেরাম  সুযোগ দিতে রাজি নয়। এক সকালে সে নতুন এক বিহারী ছেলেকে ঘরে ঢুকিয়ে ননীমাধবের বাসন-কোসন বাইরে ছুঁড়ে দিয়ে বলে, “ এবার বিদেয় হও বাবাজি। এমুখো আর এসো না। ”

হরেরামের দোষ নেই। তার মেয়েকে পাত্তা দেয়া দূরে থাক, ননীমাধব এই মাস ছয়েকের ভেতর একবারও মুখ তুলে দেখেনি। মেয়ে নিশ্চই বাবাকে নালিশ করেছে তা। কুলিসর্দার বসে থাকার মানুষ নয়। নতুন হবুজামাই ধরে এনেছে।

            ননীমাধব কী করবে! থাক পড়ে হাঁড়িকুঁড়ি। একবার বোষ্টমীর মুখটা দেখতে চেয়েছিল যাবার সময়। তা সে  ঘর থেকে বেরই হল না। তবে কি সে ননীমাধবকে পছন্দ করে না! নাকি ননীমাধব কোনো কাণ্ড ঘটাতে পারে ভেবে সে ভয় পেয়েছে! সে বোষ্টমী তো এতকাল তাকে উসকেছে!

 বিস্ময় আর ব্যথা নিয়ে  ননীমাধব পায়ে পায়ে চলে আসে গঙ্গার পাড়ে। কী করবে! কী করতে পারে সে! যা পারে আপাতত, চারটাকা দিয়ে ফেরির টিকিট কেটে এই পাড়কে পরিত্যাগ করতে

                                                                        

                                                                       

 

দুই

প্রাণগোপাল দেখল তার ট্রলির ভেতর কুঁকড়ে-মুকড়ে একটা মানুষ ঘুমিয়ে আছে। তার মাথায় গরম চড়ে যায়। কিন্তু ঝপ্‌ করে একখানা মায়ামাখা গঙ্গার হাওয়া মুখের উপর ঝাপট মারতেই সে রাগ ধুয়ে গেল  কতদিন তো রাস্তার কুকুর এসে শুয়ে থাকে,তখন তো কিছু বলে না! মানুষ শুয়ে থাকলে এত গায়ে লাগবে কেন! প্রাণগোপাল মনে মনে ক্ষমা চেয়ে নিল বাঁকেবিহারীর কাছে

রাস্তায় ইলেকট্রিক পোস্টের সাথে ট্রলি চেন আর তালা দিয়ে রেখে প্রাণগোপাল বড়বাজারের পগেয়াপট্টিতে একটা চুন-সুড়কি ঝরা বাড়ির তিনতলায় থাকে। থাকে আরো জনা পাঁচেকের সাথে। সেখানে মেঝেতে বস্তা পেতে শোয়া। এক ঘুমে রাত কাবার। ভোরে উঠে সরকারি শৌচালয়ে কাজকম্ম সেরে গঙ্গায় চান। বড়বাজার জাগতে জাগতে বেলা আটটা। প্রাণগোপালেরা তার মধ্যে স্নানাদি সেরে দুপুরের রান্নাও করে ফেলে। খেয়ে নেয় সারাদিনের জন্য। তারপর লড়ি থেকে মাল ট্রলিতে তুলে গদিতে পৌঁছানো, কখনো গদি থেকে পার্টির গাড়িতে তুলে দেয়া তাদের কাজ

            প্রাণগোপাল চান করতে যাচ্ছিল। তখনই নিজের ট্রলির উপরে ওরকম ঘুমন্ত মানুষকে দেখে রাগ করে ফেলেছিল। প্রাণগোপালের চোখ ঘুমন্ত মানুষটার মুখের উপর পড়তেই কেমন মায়া হল। এই মুখে শহরের জটিলতার ছাপ নেই যেন। চান করে ফিরে এসে প্রাণগোপাল লোকটিকে আস্তে করে ডাকল, “ এই যে শুনছেন, বেলা হয়েছে, এবার ঘুম থেকে উঠে পড়ুন।”

            প্রাণ গোপালের মনে হলো লোকটি হয়ত ক্ষিদের চোটেই ঘুমিয়ে পড়েছে। যা হয় হবে, নিজের ভাগের ছটা রুটি থেকে তিনটে একে খাওয়াবে। সে আবার ডাকল ঘুমন্ত লোকটিকে। “ এই যে শুনছেন? উঠে পড়ুন কী যে মায়াভরা ডাক! ননীগোপালের মনে হলো মা ঘুম থেকে ডেকে তুলছে 

            প্রাণগোপালের কথায় কলাকার স্ট্রিটের সাহাবাবুর কাপড়ের গদিতে কাজ জুটে গেল। ননীমাধবের কোয়ালিফিকেশন হল সে বৈষ্ণব। আর তার সার্টিফিকেট গলায় ঝোলানো তুলসির মালা।  প্রাণগোপালের দু-তিনটি বাঁধা গদি আছে, তার একটা এই সাহাবাবুর। বৃটিশ আমল থেকেই বংশ পরম্পরায় কাপড়ের গদি চালায় এরা। সাহাবাবুরা বৈষ্ণব। আর তার গদির সব কর্মচারীও বৈষ্ণব। মাল নামিয়ে নিয়ে আসার জন্য একজন পুরুষ আর পার্টিকে কাপড় দেখানোর জন্য দু’জন মেয়ে আছে কাজের যা চাপ পুরুষ কর্মচারীর দরকার ছিল।  প্রাণগোপালের কথায় সাহাবাবু  ননীমাধবকে রেখে দিলেন

            এই গদিতে এসেও ননীমাধবের যা দোষ, তা লাগল  নিউব্যারাকপুর থেকে আসে, কপালে রসকলি আঁকা, ফর্সা চেহারার বউ অন্তরার সাথে ভাব হতে লাগল এক সপ্তাহ রোজই সে অন্তরাকে শেয়ালদা স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে আসে রাত আটটার পরে বড়বাজার থেকে দু’জনে হাঁটতে হাঁটতে যায় নটা পাঁচের বনগাঁ লোকাল ছেড়ে দিলে ননীমাধব আবার হেঁটেই ফিরে আসে পগেয়াপট্টির ডেরায় ননীমাধব মতলব করে অন্তরাকে ভাগাবে বলেও ফেলে, 

 যে বর বউকে খাতি দিতে পারে না, তার কাছে থাকা কেন?”

 সে মেয়ে চোখ নাচিয়ে বলে, “ দেখো মরণ! সেকেন্ড হ্যান্ড এই আমাকে নিয়ে কী করবা! তুমি জোয়ান ছেলে একটা কুমারী মেয়েকে পাবা না! ঠিক পেয়ে যাবাা

            ফ্ল্যাইওভারের নীচের দোকান থেকে একটা লেডিজ ব্যাগ কিনে অন্তরার হাতে দিয়েছে ট্রেনের জানালায় দাঁড়িয়ে ননীমাধব অন্তরার সেকথার উত্তর না দিয়ে পারল না বলল, “ না অন্য কাউকে চাই না আমি এই বৈষ্ণবীকেই চাই কবে পালাবে, ঠিক করো

           

                                                                       

সে সুন্দরী তার গজদাঁত বের করে ভুবনভোলানো একমুখ হাসি উপহার দিয়ে বলে, “ বৈরাগী, এখন তো জানালা ছাড়ো ট্রেন ছাড়ার ভোঁ পড়ে গেছে যাও, কাল কথা কবানে।।

 অন্তরা দাস আর ননীমাধবকে জড়িয়ে নানা কথা কানে আসছিল তাঁর সমস্যা জিইয়ে না রেখে তিনি সমস্যা নির্মূল করলেন কারো পেটে লাথি মারলেন না কৃষ্ণভক্ত সাহাবাবু শুধু ননীমাধবকে গদি থেকে তুলে নিয়ে এসে তাঁর সিকিউরিটি সার্ভিসের ব্যবসায় লাগিয়ে দিলেন না থাকবে বাঁশ, না বাজবে বাঁশরী

 ননীমাধব শুয়ে থেকেই টের পেল আজ তার জানালা যেন ফিসফিস করে কথা বলছে।  কিন্তু কী কথা ! ননীমাধব নিজেকে গুছিয়ে নিতে নিতে ছোট্ট মতো জানালাখানির কাছে এসে দেখল উল্টো দিক থেকে হলুদ রোদ এসে ঢুকছে এদিকে। সেই রোদই কথা বলছে। ননীমাধবের কানে গেল,  হ্যাঁ গো আমি, আমি আমি  তোমার বাউল সুন্দরী দেউলটি গাঁয়ের জুড়ন বৈরাগীর বঊ বাবুদের সাথে এই নতুন ফ্ল্যাটে আসতি না আসতিই আমি তোমারে দেখতি পাই সেই থে কথা কবার তাল করচি বাবুবিবিরা এখনও ঘুমের থে ওঠেনি বাসন মাজতি মাজতি তাইতো রান্নাঘরের জানালায় এয়েচি আমি দেখিচি তুমি এখানে শোও ভোরবেলায় ওঠো তাই তো জানালায় দাঁড়ালাম তোমারে একবার ভালো করে দ্যাখপো বলে

সেই কোন ছোটবেলা থেকে ননীমাধবের কানে জানালার ফিসফিস মায়া হাওয়া কাটে আজ যেন তা কণ্ঠ

 

পেয়েছে! ননীমাধব  হাঁকরে তাকিয়ে থাকে সে দেখতে পায় একখান ছিপছিপে রোদ প্রজাপতির মতো ডানা মেলতে মেলতে তার জানালার ভেতর ঢুকে এল

Leave a Reply