You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪। গল্প: বই ডাকাত- দ্বিপ্রহর

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪। গল্প: বই ডাকাত- দ্বিপ্রহর

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪

অণুগল্প: বই ডাকাত
দিব্প্রহর

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪

অণুগল্প

বই ডাকাত

দ্বিপ্রহর

 

 

   সামনে আলমডাঙ্গা স্টেশন। এখানেই আমার গন্তব্য। ঘড়ির কাটায় রাত দুটো বাজে। ঢাকা থেকে বহন করে নিয়ে আসা বই ভর্তি ব্যাগদুটো বের করে রাখলাম সিটের সামনে। ট্রেন স্টেশনে থামলো। আমাদের বগির আর কেউ এখানে নামবে না। আমি ব্যাগ দুটো নিয়ে একাই নেমে পড়লাম। প্লাটফর্মে নেমে মনে হলো কোনো একটা ভুল হচ্ছে। প্লাটফর্মে যেখানে সেখানে বিষ্ঠা মেখে আছে প্রচুর। মনে হচ্ছে, এই প্লাটফর্মে হাঁস-মুরগি ওঠানামা করে। মানুষের প্লাটফর্ম হয়তো আলাদা। কিন্তু ট্রেন তো এখানেই থামলো। অগত্যা নেমে পড়লাম হাঁস-মুরগির প্লাটফর্মে। আলমডাঙ্গায় এই প্রথমবার এলাম। এখন গিয়ে খালুবাড়ি উঠবো। কাল বিকালে বইগুলো নিয়ে বাড়ি চলে যাবো। ট্রেন থেকে নেমে এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। স্টেশনের কোনো দিক-অবস্থান ঠাওর করতে পারছি না। এমন সময় উপর থেকে সাদা রঙের তরল আইসক্রিম জাতীয় কী যেন পড়লো ঘাড়ের উপর। চোখ ঘুরিয়ে তাকালাম। বুঝলাম না, কী হতে পারে এটা! এরপর তাকালাম উপরের দিকে। সেদিকে তাকিয়েই আমার চোখ ছানাবড়া! উপরে লোহার তৈরি মাচায় বসে আছে ঝাঁক ঝাঁক কবুতর। ওরাই তাহলে স্টেশন এতো নোংরা করে রেখেছে। আর আমার পাঞ্জাবির উপর পুচুক করে নিক্ষেপ করেছে এক কতরা বিষ্ঠা! ওয়াক থু…

   সামনের বাজারের নাম বণ্ডবিল। ওখানে আমার খালুবাড়ি। এখান থেকে ভ্যানে পাঁচ টাকা ভাড়া। সব কিছু জেনে নিয়েছি খালুর থেকে। অথচ ভ্যান ওয়ালারা দুইশ টাকা চাচ্ছে। সাথে আরো লোক নিয়ে যাবে। রাত-দুপুরে ডাকাতি! এতটুকু পথ আমি দুইশ টাকা দিয়ে যেতে রাজি নই। ফোন দিলাম খালুর কাছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরছেন না। ফোন ধরলে বলবো, যেভাবে হোক আমাকে উদ্ধার করতে। ঘুমে মাথা ঠনঠন করছে। 

   খালু হয়তো ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমাচ্ছেন। হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, আমি রাত দুটোর সময় এসে তাকে জ্বালাবো। তাই আগ থেকে ফোনটা সাইলেন্ট করে ঘুমাচ্ছেন। 

   নিরুপায় হয়ে দুহাতে ব্যাগ দুটো নিয়ে বণ্ডবিলের দিকে হাটা শুরু করলাম। পেছন থেকে এক ভ্যানওয়ালা ডাক দিয়ে বললো, ভাইজান, সাবধানে যাইয়েন। সামনে কিন্তু ডাকাত আছে!

   কথাটা শুনে গলায় ঢোক এঁটে গেলো। ঘুরে তাদের দিকে তাকালাম। লোকটা কি সত্য বললো নাকি মিথ্যা, বুঝতে পারলাম না। সম্ভবত দুইশ টাকা হাতানোর ধান্দায় আমাকে ডাকাতের ভয় দেখানো হচ্ছে।তাকে বললাম, ভাই, আপনারাই তো ডাকাত!

   কথাটা বলে আবার হাঁটা শুরু করলাম। খানিক দূরে গিয়ে দেখি রাস্তার পাশে বসে আছে আট-দশজন মানুষ। শপাং করে মনে পড়লো ভ্যানওয়ালাদের কথা। ডাকাতদের হাতে ধরা খেয়ে গেলাম মনে হচ্ছে। মানুষ যেন জনমানবশূন্য ভেবে এদিকে আসা থেকে বিরত না থাকে, সম্ভবত সেজন্য ওরা দল বেঁধে বসে আছে। কোনো ভাবে ডাকাতদের হাতে ধরা পড়া যাবে না। ধরা পড়লেই ওরা সবকিছুর সাথে আমার মোবাইলটাও নিয়ে যাবে। আমি হাত-পা ভেঙে যাওয়ার চেয়ে মোবাইল ভেঙে যাওয়ার বেশি ভয় করি। কারণ হাত-পা ভেঙে গেলে আব্বা চিকিৎসা করাবে। কিন্তু মোবাইল ভেঙে গেলে আমার পকেটের টাকা দিয়ে আমাকেই চিকিৎসা করাতে হবে। কারণ আব্বা মোবাইলের ঘোর বিরোধী। যদি জানতে পারে আমার ফোনটা ডাকাতে নিয়ে গেছে, তাহলে আব্বা দাদার পাঁচশো দানার তাসবিহটা বের করে দুই খতম ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়বে।

   কয়েকজন ডাকাত রাস্তার উপরে উঠে এসেছে। একজন আমাকে ডাক দিয়ে কী যেন বললো। মনে হলো চাইনা ভাষায় ‘চাংচুংচিং’ বলছে। এটা কি ওদের কোনো সাংকেতিক শব্দ? কী জানি, এসব ভাবার এখন সময় নেই। এতো ভারী দুটো ব্যাগ নিয়ে দৌড়ালে নির্ঘাত ওদের হাতে ধরা পড়ে যাবো। ব্যাগের ভারে দ্রুত দৌড়ানো সম্ভব হবে না। ধীর ধীরে ব্যাগ দুটো মাটিতে রাখলাম। তারপর পেছন দিকে ভোঁ দৌড়। এক দৌড়ে স্টেশনে।

   হাঁপাতে হাঁপাতে খালুকে ফোন করলাম। তিপ্পান্ন নম্বর ফোনটা খালু রিসিভ করলেন। তাকে ফোন করতে করতে ফোনের চার্জ প্রায় শেষের দিকে। খালু জিজ্ঞেস করলো, কী অবস্থা? কোথায় তুই?

   —খালু, দ্রুত আসেন। ডাকাতরা আমার প্রায় পনেরো হাজার টাকার বই নিয়ে গেছে। 

   —তুই বেঁচে আছিস, এই তো বেশি। এখন তুই কোথায়?

   — আলমডাঙ্গা স্টেশনে। 

   —আচ্ছা, দাঁড়া ওখানে। আমি আসতেছি।

   ফোনটা কেটে দিয়ে পকেটে রাখলাম। ঘামে জবজব করছে শরীর। পকেট থেকে রুমালটা বের করে ঘাম মুছতে মুছতে ভাবছি, টাকা জমিয়ে কেনা এত্তোগুলো বই! কখনো কি ফিরে পাবো আর! ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। মনকে প্রবোধ দিলাম, বইগুলো পড়ে যদি ডাকাতরা সুপথে ফিরে আসে, তাহলে তো আমার ইতিহাস গড়ে যাবে।

 

 

 

 

 —দ্বিপ্রহর

প্রাবন্ধিক, কথাশিল্পী, কবি

সদর,খুলনা।

শিক্ষার্থী

মাস্টার্স, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর। 

 

deprahar@gmail.com

Leave a Reply