You are currently viewing কামরুল ইসলাম এর একগুচ্ছ কবিতা

কামরুল ইসলাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ কাশবন সংখ্যা

কামরুল ইসলাম
এর একগুচ্ছ কবিতা

কামরুল ইসলাম এর একগুচ্ছ কবিতা

 

স্পর্শ করি অমৃতের ফল

 

তীরে জল একা একা বিধ্বস্ত শরীরে

দূরের আলোর দিকে চেয়ে থাকি

কফিনের চারপাশে হাওয়া ও সন্ধ্যা। 

তখন মেলার সৌন্দর্য জেগে ওঠে ধূলি ও ঘাসে।

আকাশে ওড়ে বৃষ্টি ও মেঘের কোকিল,

চারদিকে সাধুদের স্মৃতি।

এসো কাঙালের মুখ, চলো জলের ওপারে যাই

স্পর্শ করি অমৃতের ফল। জলে ধুয়ে বাঁকা পথ

যদি সোজা হয়, তবে ভুলে যাবো পাথরের দিন।

বাজুক পরান নিপুণ বজ্রে, সংঘাতে ভেসে যাক নদী।

তীরে জল একা একা বিধ্বস্ত শরীরে

সাথে এক ঘুমখোর দার্শনিক মাছ…

ভেসে আসে দূর থেকে ডুমুরের গাছ

সাথে আছে ধ্রুপদী পাতারা, যেন কুলবতী

মাছের সংসার উথলে ওঠে অশান্ত ঢেউয়ে

 

চলে যাবার পথ বড়ো সহজ হয়ে গেছে

 

জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই,

জঙ্গলের ভেতর থেকে কে যেন বলে ওঠে, যাও–

চলে যাবার পথ বড়ো সহজ হয়ে গেছে

বেলগুলো পেকে গেছে গাছে

পাতাগুলো কেমন হলুদ

দিঘির ওপারে ঝোপঝাড়ে চৈত্রমাস

বাতাসের হুহু শুনে বুঝি

কোথাও মন্দিরা বাজে জগতের সহজ প্রণয়ে

মুমুদের শূন্য ভিটে

মাথার ভেতরে আড়ি পেতে বসে আছে

কালকেউটের মধুর হাসিতে লণ্ডভণ্ড বাতাস

জনশূন্য ঘাটের কিনারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবি

এ বেলা হলো না আর, বরং চলে যাই ওদিকে

জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই,

জঙ্গলের ভেতর থেকে কে যেন বলে ওঠে, যাও

চলে যাবার পথ বড়ো সহজ হয়ে গেছে

 

অনন্ত গৃহ জাগে দেহে ও মনে

 

প্রতিদিনই কবিতার মতো কোনোকিছু জাগিয়ে রাখে আমাকে,

প্রত্যুষের মোরগ বাকের অপূর্ব সন্ত্রাসে প্রতিদিন কোনো না কোনো

কবরের নিজস্ব সংগীত ভেসে আসে কানে

আমার এ সরল সাঁতার জালে বিঁধে ধরা পড়ে কখন, সেই ভয়ে

কাঁঠাল তলার মাচালে শুয়ে চৈত্রদিনের গান শুনি

ঘুমের পাখায় চড়ে পাড়ি দিই কৃষ্ণ মেঘের কাপালিক নদী

আমার দুপাশে দুটো পাইথন জেগে থাকে স্বরাজের নেশায়।

সবিনয়ে সকল কষ্ট ভাসিয়ে দিলাম ঝেঁপে আসা বৃষ্টির জলে,

তখন এক পাহাড়ি মেয়ে অরণ্যের শোকের বয়ান সাথে

সামনে এসে দাঁড়ায়, পাহাড়ের চুড়োয় উঠে সে-ও দেখি

উড়ে যায় অকাল শূন্যে

আমাদের ছোটাছুটি গাছেদের শোক নিয়ে ঝরে পড়ে

হাড়ের অন্তর চুঁইয়ে অনন্ত গৃহ জাগে দেহে ও মনে

অবিনশ্বর পালক ও প্রেম

নিভৃতে যে পড়শির বসত

কচি বাঁশপাতার হৃদয়ের মতো যার বয়স, তার ছায়ার আড়ালে

আমি বসে থাকি আদিম ভিখেরি

দুপুরের নিমগাছ তলে পড়ে আছে অকল বেদনার ছেঁড়া পাল,

কুয়াশায় মিলিয়ে গেছে ছোট্ট ডিঙিটা, ধ্বস্ত মাস্তুলে

তোমার মুখের প্রতিকৃতি দুলছে মৃদু হাওয়ায়

শেয়াল ডাকা ধানখেতের স্মৃতি বেয়ে

প্রাচীন কবরের দিকে তাকাই, দেখি

বিকেলের বাতাসে মটরশুঁটির কচি ফলগুলো

তোমার নোলক পরা নাকের মতো কাঁপছে তির তির

আমি পাখিদের গানের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকি

দিনভর, ভাঙাচোরা পুরনো বাসার খড়কুটোয়

লেগে আছে অবিনশ্বর পালক ও প্রেম

তোমার স্মৃতির আলপথে দেখি সেই

ধ্বস্ত মাস্তুল, ক্লান্ত কুয়াশায়, মৃদু হাওয়ায়

রের জানালায় ফুটে আছে অন্তরঙ্গ বুনোফুল

যেখানে যাবার রাস্তা নৈঃশব্দ্যে ঢাকা

নিদ্রাহীন সমুদ্রকাহিনি

এত খেলা পার করে যেখানে এলাম

সবই অন্যের কাহিনি, রঙে ও আঙ্গিকে

কিছুটা শীতের ইশারায় প্রকম্পিত এই বন

থেকে ঝরে পড়ছে সেই পাতারা যারা একদিন

পুরনো দিনের বৈঠকখানার বিবিধ গল্পের

দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উড়ে গিয়েছিল সহি সালামতে

কান পেতে রাখি গুহাবাসী গিরগিটির গানে,

সুলভে প্রাপ্ত এই সাদা গোলাপের চারা থেকে

আহরিত অন্ধকার রাজমিস্ত্রীর উষ্ণ চেতনায়

ভোরের আখ্যান নিয়ে সাঁই সাঁই ছোটে

আর্দ্রতা নিয়ে যে কাঁকড়ার সন্তানেরা সমুদ্র

তীরের বালির গর্ত থেকে বের হয়ে বিকেলের

রঙের মধ্যে ডুবে যায়, তারাই আমার

পরিমিত দুগ্ধস্নান, মায়াবী সাঁকোর দুলুনি

হৃদয়ের গোপন ইশারায় তুমি অস্থির দোযখ

পেরিয়ে লীলাময় রক্তের ভেতরে ঘুমুতে যাও,

আমি শুদ্ধ জ্বরের ঘোর নিয়ে যে কুয়াশা পড়ি

তা যে তোমারই রচিত নিদ্রাহীন সমুদ্রকাহিনি…

পরিমিত বিহঙ্গের সন্ধ্যা

অগুনতি বিহঙ্গের ডাকে যখন সূর্য ডুবলো

থমথমে বনপথে আলো জ্বলে উঠলো,

গোরস্থানের ফুলগুলোর শরীরে সান্ধ্য রঙ

ভেসে এলো বাতাসে নিরস্ত্র আনন্দের দিন

কোনো রসিক কাঠুরে আজ বুঝে যাবে

কুঠারের অনিশ্চিত যৌবনের দিকে

মৃদু আলোর গুঞ্জনে ফুটে উঠছে মেঘ

পরিমিত বিহঙ্গের সন্ধ্যা, ওপারে প্রবীণ

জনতার ভিড় ঠেলে কুটিরের আলো

সারিবদ্ধ সংকেতে চোখে এসে লাগছে

আমি কি এরকম কোনো নিঃসঙ্গ দেবতার

ঘাড় থেকে নেমে আসা সেই অন্ধ পাখি,

যে কেবল ঘনীভূত অন্ধকারে একবার শুধু

ডাকে আর মগডালে বসে পৃথিবীটা দ্যাখে?

কামরুল ইসলাম

জন্ম : কুষ্টিয়া জেলার ফিলিপনগর গ্রামে। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। সর্বশেষ রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিশেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন দ্বিভাষিক কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও ছোটগল্পকার। নব্বইয়ের দশকে চূড়ান্তভাবে কবিতার জগতে প্রবেশ। এ পর্যন্ত ১৩ টি কবিতার, ৬টি প্রবন্ধের ও ১টি ছোটগল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। তার কবিতা দেশ-বিদেশের নানা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং এ পর্যন্ত ২৫ টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বকবিতায় অবদানের জন্য বেশকিছু অ্যাওয়ার্ডস ও সম্মাননা পেয়েছেন।

 

কাব্যগ্রন্থ: দ্বিধাান্বিত সুখে আছি যমজ পিরিতে (১৯৯৯), ঘাসবেলাকার কথা (২০০১), যৌথ খামারের গালগল্প ( ২০০৬ ), সেইসব ঝড়ের মন্দিরা (২০০৮ ), চারদিকে শব্দের লীলা (২০১০), অবগাহনের নতুন কৌশল(২০১১), মন্ত্রপড়া সুতোর দিকে হাওয়া(২০১৪), দীর্ঘশ্বাসের সারগাম (২০১৬), বিহঙ্গখচিত লন্ঠন (২০১৭), নির্বাচিত কবিতা (২০১৯), কিছুটা ভোর, বাতাসের গদ্যসহ (২০২০, কোলকাতা), আগাছার ইন্দ্রজাল (২০২১), গোপাল সাঁইয়ের কবিতা ( ২০২৩)

ছোটগল্প: বিনির্মিত ভাসান , জল থেকে জলে ( ২০২০)

 প্রবন্ধগ্রন্থ:  কবিতার বিনির্মাণ ও অন্যান্য(২০০৯)

রবীন্দ্রনাথ: বিচিত্রের দূত (২০১৩)

কবিতার স্বদেশ ও বিশ্ব (২০১৫)

কবি ও কবিতা: কবিতার আলো ও আঁধার (২০১৮)

রবীন্দ্রনাথ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ (২০২১)

কবিতার রংরক্ত নিমগ্ন করতল (২০২৪)

Edited book : Green Fogs : A Collection

 

of Contemporary Bangla Poetry (2017)

কামরুল ইসলাম
প্রাবন্ধিক

Leave a Reply