You are currently viewing শাহ্ কামাল এর একগুচ্ছ কবিতা

শাহ্ কামাল এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ কাশবন সংখ্যা

শাহ্ কামাল এর একগুচ্ছ কবিতা

শাহ্ কামাল এর এক গুচ্ছ কবিতা

 

একরঙা রঙিনছবি

কবি,
গভীরে যেতে যেতে—
যেতে যেতে সরন্দীপে একটু দাঁড়াই
দেখি— কবি
জেদ্দা
এডন এ্যাপল বন

লিলিথকে দেখতে পেয়েছো কবি?
ক্লিওপেট্রা হেলেন জুলেখা গৌরি সবাইকে দেখতে পেয়েছি কবি!
দেখিছি এক রঙে রঙিন মাটির দেউর, জোনাকসন্ধ্যা
এক রঙে রঙিন ঝরনা, পাহাড়, সাগর, সমুদ্র, তরুলতা, মরূদ্যান

সরল অঙ্কের যোগ বিয়োগ গুন ভাগ করেছি বারবার —
দেখলাম—কবি
সব কিছুর সারকথা ঐ এক কথা সারস কিংবা পানকৌড়ি

কবি—পৃথিবীর পথে কনফুসিয়াসের সাথে একবার দেখা
দুবার পেয়েছি কপিলাবস্তুর দর্শন
শুনেছি গৌধূলীসন্ধ্যায় ডেবিডের রাগমিশ্রিত সবগুলো সংগীত
এনেছি কফিন নীলনদ থেকে কুড়িয়ে জেরুজালেম
বেথেলহাম থেকে দেখেছি গতজীবীরা উড়ে যাচ্ছে দূরে…

কবি,
আমি তো দেখেছি সব রঙীন ছবি—
এক রঙেই আঁকা
কোথায় কবি— লাল নীল হলুদের নির্যাস?

কবি— একবার ডুব দিয়ে দ্যাখো আমার মতো!



২৯ শে অক্টোবর ২০২৪, ফতুল্লা

 

তৌরাৎ

একটি মেয়ের প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছিলো
ভীষণ ইচ্ছে করছিলো
কিন্তু মেয়েটির প্রেমে পড়া হলো না
প্রেমে পড়ে গেলাম মেয়েটির পোষা টিয়েপাখির প্রতি
কী সুন্দর আমাকে সম্মোধন করে
কবি
একটি কবিতা লিখো—
তোতারাও কথা বলে
প্রেম খুঁজে
শুদ্ধ মন খোঁজে

আমার এই তোতাপাখিটি নীড় খোঁজে পাহাড়ের খোপড়ি বুকে—
খুত নয়, বৃষ্টি নয়—
ওরা প্রতিদিন গুলি খেয়ে বাঁচে
আর আমাদের মৃত বলে ঘোষণা করে…

প্রেম আমার সে কবেই শহীদ হয়ে গিয়েছে
এখন আমি তোতাদের জন্য একটি খোলা আকাশ গুনি…

ড্রোন চোখে দেখি হায় তৌরাৎ কোথাও খোলা আকাশ নেই

তবু খুঁজি
তবু খুঁজি
তবু খুঁজি


২৭ শে অক্টোবর ২০২৪, ফতুল্লা

 

হোয়াংহো

কবিকে দেখলাম হোয়াংহো নদীর তীর ধরে হেঁটে যেতে
ঝাউগাছের সারি ডানে রেখে
নির্জন ধার
কাছে দূরে কেউ নেই
কবি নির্মগ্ন চেয়ে আছে ফেলে আসা কূল কান্দির পাড়ের দিকে
এই নদীর তীরই তাজমহল
প্রেমের আলোকবর্তিকা
তবে কি কারন কবি হোয়াংহো নদীর তীরে?

ক্লান্ত পায়ে কবি একটু বসলেন
দুঃখ কুড়াতে কুড়াতে কবি গোলাপী শাড়ির ভাঁজে লাল নীল সবুজ দুঃখ রাখলেন
পিছনে হাজার বছর পুরোনো মন্দির
মন্দিরের টেরাকোটায় কবি দেখলেন নিজের মুখ
দেখলেন বুদ্ধ তান্ত্রিক প্রেমের নিশীথ কাব্য
পীত নদীর ছায়া কবির মুখে—
কতকাল কবি নির্ঘুম
উপকূলীয় ঝড়ে এলোমেলো মানুষের মতো

কবি এই প্রাচীর কেন?
এই মহাপ্রাচীর?
আমি তো দেখেছি কবির আঁচল জুড়ে বিস্তীর্ণ মরুভূমি

বলো কবি—
কবিতায় কার বা ভালো লাগে হোয়াংহো নদী!
দেখেছি কবির বিক্ষুব্ধ পঙক্তিমালা— সুউচ্চ মালভূমি
দেখেছি কবির চোখে প্রশস্ত সমভূমি— উর্বর মাঠ
আমরা দেখতে চাই—
কবির কবিতায় আসুক নিপ্পন দ্বীপের গল্প
আমরা শুনতে চাই—
কবির কবিতায় এসেছে নিশীথ সূর্যের দেশ

কবি, তোমাকে সোনারগাঁয়ের সোনাবিবির কসম
কবি, তোমাকে সতীবেঁহুলার কসম
তুমি চলে এসো এই রাধাকৃষ্ণের প্রেমযমুনার কূলে—
কবি, তোমাকে কমলা সুন্দরীর কসম
কবি, তোমাকে দেওয়ানা মদিনার কসম
আর হবে না এ জনম কন্ঠীবদল এই চুরাশিকোটি মানবজনম

এসো কবি বটের ছায়ায় —
এসো কবি অগ্রহায়ণ মাঠে—
এসো কবি শিমুল বনে—
তোমার চোখে এঁকে দেবো শিল্পীর তুলিতে কদমফুলের হাসি
তোমার হৃদয় ভরে দেবো পথের প্যাঁচালীর কাশফুলে…

কবি, তুমি শুধু প্রেমের কবিতা লিখবে…


২৬ই অক্টোবর ২০২৪, ফতুল্লা

শালদুধের কীর্তন

একটা জলের ফোঁটার ওপর আরেকটা জলের ফোঁটা রাখলাম —
দেখতে চাইলাম কি করে জল গর্ভবতী হয়;
কি করে জল মহাসমুদ্র হয়।

একবার গ্রীষ্মকালে—
ছেলে ছোকড়ার দল যখন উপোস হয়ে থাকে প্রচন্ড চৌচির দহনে;
বাজী ধরে কাঁটতে গিয়েছি জল।

ধান কাঁটায় শান দেওয়া কাঁচি দিয়ে কেঁটে কেঁটে জল—
এক বালতি এক বালতি করে তুলছি;
ভেজাবসনে আঁধখোলা হরিণীদেহের কাঁখে চড়ে জল—
জলাঙ্গী ঢেউ চরণে চরণ কলসির ভেতর—
শালদুধের যৌবন।

শালদুধের কীর্তন গানে—
মেঘে মেঘে ঘর্ষণ
বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে জল
ডোবা খাল বিল হাওর বাওড়

কই মাছ লাফিয়ে ওঠে জল থেকে…
লাফাতে লাফাতে মহাসমুদ্রে গিয়ে পড়ে…

আবার জল…
আবার মেঘ…
আবার বৃষ্টি…
আবার মহাসমুদ্র…

শুধু কই মাছ আর লাফিয়ে ওঠে না জল থেকে…
জল থেকে…

৯ই অক্টোবর ২০২৪, ফতুল্লা

প্রতিটি কবিতা একই পান্ডুলিপি থেকে নেওয়া

যেতে যেতে ব্রোথেলের করিডোরে গিয়ে ফিরে দাঁড়ালো মেয়েটি—

কেন?

উত্তরের খোঁজে বৈশালী গিয়েছি বুদ্ধের মতো—
আম্রপালি, তোমার নিমন্ত্রনে…

গিয়ে দেখি এখন শরৎকাল
কাশফুলের সমগ্র ভালোবাসা পৃথিবীকে উৎসর্গ করে
খোদিত হতে থাকে বিভূতির দূর্গা, তৃতীয় নয়ন—

অসুরের গল্প তবু—
ট্রেন হয়ে ছুটে যায় কাশফুলের সাদাকাশ ছিঁড়ে—
রেন ফরেস্ট বনে—

তোমার ঠোঁট রাঙ্গা স্ফটিকমুখ দেখেছি
বরফে আচ্ছাদিত ইলিশের মতো
পৃথিবীর প্রথম পূর্নিমা রাতে…

জোসনা ভাসে, জোসনা ভাসে মমির কফিন ছুঁয়ে…
নীলনদ, মিসিসিপি, ফোরাত,বহ্মপুত্র, হোয়াংহো

—-
৫ই অক্টোবর ২০২৪, ফতুল্লা

মাস্তুল

একদিন হয়তো শুনবে—
পাখিদের ডানা আর বাতাসে ভাসছে না
হয়তো শুনবে—
মাছেদের কান্না আর জলে মিশছে না

পাহাড়গুলো সব সমুদ্রে ডুব দিয়েছে ডুবুরির মতো

তখন কি—
আকাশের দিকে তাকিয়ে জোসনা খুঁজবো?
কিংবা মাটি খুঁড়ে অন্ধকার জোনাই?

কি হবে পান্ডুলিপি জমিয়ে—
ইতিহাসের ড্রয়ারে? ভূগোলের মানচিত্রে? পুরোনো প্রেমের চিরকুটে?
শতাব্দীর পর শতাব্দী
কাশফুল নিত্য শরৎ ফুটে থাকে তবু একটু হেঁটে যেতে পারে না বসন্ত বাতাসে

শাপলাপাতা তবু পারেনি পিছনে হেঁটে যেতে গ্রীষ্মের চৌচির শরীরে

বারবার মাস্তুল ভেঙে যায় গহীন অরণ্য সমুদ্রে —
সাঁতরাতে থাকে জলোরাশি
সাঁতরাতে থাকে ঢেউ
পাড়ের কিনার তবু খোঁজে পায় না কোনো সলিল সমাধি!

আকাশকে একরার উপুড় করে দেখতে বড় স্বাদ জাগে!

—-
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ফতুল্লা

জলরঙে আঁকা রুদ্রপ্রেমের ছবি

বউ তুই রাগ করোস
রাগ করিস না
এবার ঈদে যখন বোনাস পাবো
তোরে একটা নাকের বেশোর কিনে দিবো

তোরে নিয়ে সিঙ্গাপুর যাবো না সত্যি
দীঘাতে যাবো না সত্যি
তোরে নিয়া চর দেখতে যাবো
চর
বালারচর
সোনার ধান কি করে ফলাতে হয় দু’জনে কাচা দিয়ে শিখবো
শিখে দু’টো হাঁসের ছা নিয়ে আসবো
ধানখেতে দিবো
চর থেকে আসার পথে কুঁড়িয়ে আনা শামুক খেতে দিবো

একদিন আমাদের ছা দু’টো রাজহংস হবে

বউ তুই রাগ করোস
রাগ করিস না
এবার ঈদে যখন বাড়ি আসবো
তোর জন্য একটা কলাপাতা রঙ দেখে শাড়ি আনবো
গোলাপ রঙা একটা লিপিষ্টিক
আর আনবো একটা জলরঙে আঁকা রুদ্রপ্রেমের ছবি

“মোরা আর জনমে হংসমিথুন ছিলাম”

—-
১৪ই জুলাই ২০২৪, ফতুল্লা

শাহ্ কামাল
কবি

Leave a Reply