You are currently viewing শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ কাশবন সংখ্যা

শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

নিস্তব্ধতায় বাস

তুমি যেতে চেয়েছো, যাও –

তোমার ইচ্ছে মতো, মন যেতে চায় যেখানে;

ডুবে থেকো সেথায় শত বৈভবে,

ঢেকে দিও তোমার দেহবল্লবী শত মণিহারে,

সুখ সুধায় ডানা মেলো মুক্ত বিহঙ্গের মতো

সাত সমুদ্রের পাড়ে;

কিংবা হাত রেখে কারো হাতে, ঘুরে বেড়াও

মিসিসিপি, রাইন কিংবা টেমস্ এর ধারে।

 

কিন্তু আমি রয়ে যাবো এখানে-

নীল আকাশ আর সাদা মেঘের মাঝে,

নদীর কল কল শব্দের সাথে- যেথায় কাশফুলেরা দোলে,

যেখানে প্রজাপতি আর পাখি এক সাথে খেলা করে;

সারি সারি গাছের সাথে,

সবুজ শ্যামল ছায়ায় পা ছুঁয়াতে সবুজ ঘাসে,

দোয়েল, শ্যামা, ডাহুকের গানে সুর মিলাতে,

ডুবে র’বো বসন্তের নতুন পাতার গন্ধে

ঝিঁঝিঁর গুঞ্জনের মাঝে;

কিংবা নিস্তব্ধ নিরবতার মাঝে পড়ে র’বো একা,

পদ্মা, মেঘনা কিংবা ঘোড়াউত্রার পাড়ে।

               

ক্লান্তি

মাঝে মাঝে মনে হয় ঢের হাঁটা হয়ে গেছে বুঝি

এই পৃথিবীর বুকে; সেই প্রাগৈতাহাসিক যুগ থেকে শুরু করে

অদ্যাবধি, তথাকথিত সভ্যতার আলোর মাঝে হেঁটে হেঁটে

হঠাৎ আবিষ্কার করি, জাল দীপ্তির স্পর্শের আড়ালে

চারিপাশে আমাকে ঘিরে থাকা শুধুই আঁধার।

তাই ইচ্ছে জাগে না এখন, এমন আঁধারের মাঝে

ভ্রান্ত বিলাসে আর পা বাড়াবার।

একদা যে পথ ডাকিলে মোরে,

দু’হাত বাড়িয়ে দিতে হতো সাড়া,

আজি নতুন কোন পথ টানে না মোরে আর,

নতুন কোন ভাবনা গন্তব্য খুঁজে নিতে

ক্লান্ত মন দেয় না আর তাড়া!

 

কত দিন হয় না দেখা চোখ মেলে,

বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ, বয়ে চলা নদী,

কিংবা ঐ দূর আকাশ;

যেখানে কন কনে মাঘের শীতে, কুঁয়াশার বুক চিরে

আদমসুরত আকাশ দাপিয়ে খেলা করে।

কোন তারা খসে গেলো, কোন তারা চলে গেলো

কোন তারার টানে, হয় না দেখা গুণে

চেয়ে দূর পানে;

ক্লান্ত-শ্রান্ত মনে, যখন চোখ পড়ে দূর অম্বরে,

মনে হয় সবই অচেনা হয়ে গেছে এক এক করে;

আর নিঃসঙ্গ শুকতারাও আমাকে দেখে

যেন চেয়ে রয় আজ উপহাস ভরে।।

 

মস্তিষ্কে পোকার বাস

ঘুমাতে পারি না আর এখন কোন ভাবে;

যত বার চাই ঘুমাতে, দু’চোখ বন্ধ করে

ডুবে যেতে ভাবনাহীন ঘুমের সাগরে,

মস্তিষ্কের সেরেব্রামে কে যেন কড়া নাড়ে।

আমার নেত্রপল্লব আর কর্ণিয়ার মাঝে

কে যেন এসে বিশাল পর্দা মেলে ধরে,

সুতীব্র চিৎকারে অবিরাম বলে চলে –

চেয়ে দেখো এই আমাকে,

এক অতৃপ্ত, উপেক্ষিত আত্মা আমি;

আমি তোমাদের বায়ান্ন, আমি ঊনসত্তর,

আমি একাত্তর; আমি সাঁজোয়া যানে নিষ্পেষিত

আশি কিংবা নব্বইয়ের দশক,

আমি ভুল করে প্রাণ দেওয়া তোমাদের স্বার্থের সিঁড়ি।।

 

আমার এ চোখ বুজে থাকে, অন্ধের মতো

কিছুই না দেখার ভান করে, তবু মুক্তি মেলে না তার;

বায়ান্নো এসে উপহাস করে সম্মুখে দাঁড়ায় আমার।

চিৎকার করে বলে বার বার, চেয়ে দেখো-

আমি প্রথম প্রভাতে বুদ্ধি-ব্যবসায়ীদের নোংরা পায়ে দলিত

রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার;

যাদের পদ ভারে কেঁপে উঠেছিলো রাজপথ,

যাদের শ্লোগানে প্রতিধ্বনি তুলেছিল এ বাংলার আকাশ;

যাদের রক্তের কাছে হার মেনে ছিল

নরপশুদের রাইফেলের ট্রিগার!

চেয়ে দেখো আজ তাদের আত্মজরা ঘাম ঝরায়

রিক্সার প্যাডেলে, কিংবা এক মুঠো অন্নের তরে,

থালা হাতে ঘুরে তোমাদের দ্বারে দ্বারে!!

 

আমি চোখ বুজি একটু প্রশান্তির আশায়,

হায়! ঘৃণা ভরা চোখে রক্তাক্ত জামা হাতে –

বেঈমান, বেঈমান রবে সম্মুখে এসে দাঁড়ায়

উত্তেজিত আসাদ;

আমি কান চেপে ধরি, যেন শুনিতে না পাই এ চিৎকার।

অন্ত কর্ণের মাঝে, শোঁ শোঁ শব্দ বাজে,

যেন স্বেচ্ছায় বধির প্রায়,

তবু একাত্তরের শহীদের দল, প্রচন্ড ঘৃণা আর আক্রোশে

আমাকে কি যেন শুনাতে চায়।

 

আমি বাকহীন চেয়ে রই, চোখের সম্মুখে ভেসে উঠে

দেলোয়ার, বসুনিয়া, নূর হোসেনের ঝাঁঝরা বুকে

উদ্দীপ্ত প্রতিবাদী হাত;

কানে ভাসে টিটোর শত মাইল পাড়ি দেওয়া সাইকেলের শব্দ,

আর ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ বলে জগত কাঁপানো শ্লোগান;

যাদের থামাতে পারেনি হায়েনাদের কোন স্টেনগান।

 

মনে হয় চারিশাশে শুধুই অন্ধকার, দু’চোখ মেলে

দেখিতে পাই না কিছু আর,

অদৃশ্য ইথারে ভেসে ভেসে শুধুই কানে বাজে

আশাহত শহীদের বেদনার দীর্ঘশ্বাস;

শুভ বোধ আর চিন্তা যত, সেরেব্রাল কর্টেক্সের দেয়ালে

মাথা ঠুকে ঠুকে তারা প্রায় মৃত,

দেখাতে পারে না আজ স্বরুপ তার;

দখল হয়ে গেছে যেন সব শুভ চিন্তার ভমি,

পরাধীন মস্তিষ্কে আজ শৃঙ্খলিত তুমি, আমি,

শুভ ভাবনার টুঁটি চেপে ধরেছে আজ অদৃশ্য লুটেরার হাত;

নিকষ তিমিরে ছেয়ে গেছে আমাদের চারিপাশ,

সুবোধের মুক্তির তরে, শুভ চিন্তারা তবু পথ খুঁজে ফিরে,

হায়! পায় না সে পথ খুঁজে আর,

বুদ্ধি-ব্যবসায়ীদের পদভারে রুদ্ধ আজ মুক্তির দ্বার;

চেয়ে দেখি শ্বাপদেরা ফেলেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস

যে দিকে তাকাই, মানুষ পাই না খুঁজে আজ,

যেন সব মস্তিষ্ক বিহীন লাশ;

হতাশ হৃদয়ে অনুভব করি-

 

মস্তিষ্কের ভিতর এখন শুধুই পোকার বাস!!

Leave a Reply