You are currently viewing শব্দকুঞ্জ বৈশাখী সংখ্যা। শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ বৈশাখী সংখ্যা। শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ বৈশাখী সংখ্যা

শামীম ইমাম এর একগুচ্ছ কবিতা

শামীম ইমাম  এর একগুচ্ছ কবিতা

 

মেঘ বালিকা    

আকাশ পানে চেয়ে তোমার ভাসতে যদি ইচ্ছে করে-

মেঘের মতো, মেঘের সাথে;

একটু তখন ভেসে নিও।

বিশাল নীলের প্রান্ত ছুঁয়ে, দৃষ্টি সীমার অন্তে গিয়ে,

ইচ্ছে মতো উড়ে উড়ে-

কিছু দেখতে যদি ইচ্ছে করে;

তুমি তা দেখে নিও।

 

বসন্তের মাতাল হাওয়ায়, দুলতে থাকা সবুজ পাতায়,

মনের কোন গোপন কথা-

লিখতে যদি ইচ্ছে করে;

লিখে দিও। 

 

কি লিখেছো পাতার ’পরে,

আমিও না হয় সুযোগ করে,

দখিণ হাওয়ার পিঠে চড়ে-

একদিন তা পড়ে নিবো!

 

ইচ্ছে যদি না হয় তোমার

আসতে ফিরে এই ভমিতে,

নানান রঙের মেঘের ভেলায়

দূর অম্বরের বিশাল নীলে-

মন যদি চায় শুধু ভেসে যেতে,

তবে তুমি ভাসতেই থেকো;

মেঘ বালিকা,

সদা তোমার ইচ্ছে মতো-

যেথায় থাকো, তুমি ভাল থেকো।

 

ছায়াপথের যাত্রী

অনেক খুঁজেছি তাকে এই পৃথিবীর বুকে

পাইনি তো দেখা আর, যেন হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেছে

পৃথিবীর সমস্ত আলো বাতাস থেকে সরে, সব ছেড়ে

হারিয়ে গেছে অন্য কোন খানে, দূরে- বহুদূরে।

 

তারারা যেমন কখনো কখনো বিচ্ছিন্ন হয় আকাশের কাছ থেকে,

প্রচন্ড অভিমানে স্বেচ্ছায় হারাতে যায় কৃষ্ণ গহ্বরে,

কিংবা দল ছেড়ে ছুটে আসে পৃথিবীর টানে;

আকাশ করে না কোন প্রতিবাদ, কেন সে যায় তাকে ফেলে;

পৃথিবীরও নেই কোন ভ্রুক্ষেপ, সাদরে নেয় তারে বুকে টেনে;

তেমনি করে হয়তো সেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে,

অজানা কোন অভিমানে।

 

কিছু প্রেম, কিছু অবহেলা, কিছু তৃপ্তি, কিছু অপ্রাপ্তি,

কিছু হারাবার কিংবা কিছু না পাওয়ার বেদনার ভার বয়ে,

এমন আরও শত শত অনুক্ত, অদৃশ্য অনুভতির

হিসেব মিলানোর ব্যর্থ চেষ্টায়,

অবশেষে অদৃশ্যতাকে শ্রেয় ভেবে- যে গেছে চলে অন্তর্ধানে;

খুঁজে ফিরি তারে অহর্নিশ এই পৃথিবীর ’পরে,

পাই নাকো আর, নিযুত কোটি মানুষের ভীড়ে।

 

আমিও একদিন এমনি করে বিচ্ছিন্ন হবো সব থেকে,

পাড়ি দিতে ঐ দূর আকাশ পানে;

মাটির গন্ধ থেকে দূরে, ফুলের সুবাস থেকে দূরে,

নদীর কল কল শব্দ থেকে দূরে,

হেমন্তের শিশির আর ঘাসের আলিঙ্গন থেকে দূরে,

সব ছেড়ে, চলে যাবো একদিন দূরে, অন্তরালে-

তারাদের ভীড়ে।

 

সন্ধ্যা তারা থেকে ভোরের তারার মাঝে,

আকাশে যত তারা আছে, একে একে কথা হবে

সব তারাদের সাথে;

সহস্র ছায়াপথের অলিতে গলিতে হেঁটে হেঁটে,

খুঁজবো তারে; যে আকাশের তারা হতে চেয়েছিল একদিন,

এ পৃথিবীর যাত্রা শেষে।

 

বিস্তীর্ন জন-অরণ্য থেকে শুরু করে সমস্ত জনপথ, সমতট ঘুরে,

অবশেষে- আমার এ অভিযাত্রা তাই আজ মহাকাশের পানে-

সহস্র আলোকবর্ষ দূরে, অজস্র ছায়াপথের দিকে-

খুঁজিতে তাকে; হয়তো বা কোন তারা হয়ে

অপেক্ষায় আজও সে আছে জেগে, কোন ছায়া পথের মাঝে-

তারাদের সাথে।

 

বিদায়

হরিৎ ফাগুন আজ এসেছে ধরায়,

ঝিঁঝিঁর গুঞ্জনে এখন বিরাম নাই,

সবুজের গন্ধ মাখা দখিণা মলয়-

ঝির ঝির শব্দে গা ছুঁয়ে যায়,

দোয়েল, ফিঙে নাচে- সবুজ পল্লব শাখে,

ভ্রমরেরা উড়ে চলে- গায়ে তারা রেণু মেখে,

রাঙা পলাশের ডালে, জোড় শালিক নেচে নেচে

গেঁথে চলে মালা তারা অফুরান কথার;

কান পেতে শুনে যাই তাহাদের গান,

কি জানি কোন পরশে দোলে উঠে প্রাণ,

আমি শুধু চেয়ে দেখি, মনে শত ছবি আঁকি,

ফেলে যেতে হবে যে জগত আমার!

 

কোকিলের কুহু তানে, দোলা লাগে মোর মনে,

কথা বলি আনমনে পুরানো স্মৃতির সনে,

চেয়ে ঐ দূর পানে, শত কথা পড়ে মনে

আজি অবেলায়;

জানি যেতে হবে সব ছেড়ে, তবু কেন বারে বারে

ফেলে আসা স্মৃতিগুলো মোরে পিছু টানে হায়!

 

এমনি করে প্রতি বারে, ফাগুন আসবে ফিরে-

তোমাদের এ ধরণীতে,

ঝিঁঝিঁর গুঞ্জনের সাথে কোকিলও ডাকবে এসে

পাখিরা জুটবে সেথায়-  শোনাতে কলতান;

আমি শুধু হারিয়ে যাবো, ঝরা পাতার সাথী হবো,

কন্ঠরুদ্ধ হবে, চিরঘুমে মগ্ন র’বে-

আমার এ প্রাণ।

 

অনাগত কেউ এসে লিখে যাবে গান,

ভরে দিবে তোমাদের সবার প্রাণ,

খাতা কলম, চেয়ার-টেবিল পড়ে র’বে ঠাই,

চারিপাশে সবই র’বে, আমি শুধু নাই!

দাও যদি অবহেলে সব স্মৃতি মুছে ফেলে,

তবু জেনো- ঐ দূর থেকে, বসে আমি ওপারেতে,

আমি মগ্ন র’বো তব তরে- সদা শুভ কামনায়;

ভুল যদি হয়ে থাকে, দু’দিনের এ চলার পথে,

তার তরে তোমরা সবাই- ক্ষমিও আমায়;

সুখে থেকো বন্ধুরা, বিদায়! বিদায়!!

Leave a Reply