You are currently viewing শব্দকুঞ্জ বৈশাখী সংখ্যা। ছোটগল্প: একটি অসমাপ্ত কাহিনীর শেষ পৃষ্ঠা-অনন্ত পৃথ্বীরাজ

শব্দকুঞ্জ বৈশাখী সংখ্যা। ছোটগল্প: একটি অসমাপ্ত কাহিনীর শেষ পৃষ্ঠা-অনন্ত পৃথ্বীরাজ

শব্দকুঞ্জ বৈশাখী সংখ্যা

গল্প:
একটি অসমাপ্ত কাহিনীর শেষপৃষ্ঠা
অনন্ত পৃথ্বীরাজ

ছোটগল্প :

একটি অসমাপ্ত কাহিনির শেষ পৃষ্ঠা

অনন্ত পৃথ্বীরাজ

এক.

তার কথা মনে হলেই শরীরটা কেমন শিরশির করে ওঠে। গ্রীষ্মকালের গরমেও মনে হয় প্রচণ্ড শীতে গা  ঠকঠক করে কাঁপছে। রক্ত হিম হয়ে যায়। কিছুতেই স্বাভাবিক থাকা যায় না। কেন এমন হয় ? তবে এমন পরিস্থিতি নিত্য নয়। মাঝে মাঝে এমন অনুভূতি আসে তমালের। প্রায় চার বছর ধরে এ রকম একটা যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাকে। বার কয়েক ডাক্তারও দেখিয়েছে। তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। প্রতি বারই ডাক্তার নার্ভ পরীক্ষা করে বলেছে, ‘এভরি থিংস্ আর ওকে- তমার সাহেব। ইউ আর কম্পিলিটলি ফিট। আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। অযথা টেনসন করবেন না।’ কিন্তু তমাল জানে কিছুই ওকে নেই। ডাক্তার একটা বড় গাধা। সব কিছু ওকে থাকলে তার এমন হওয়ার কারণ কী ? তমাল নিজেকে সুস্থ ভাবতে পারে না। কোনো একটা সমস্যা তো আছেই। সময় করে একবার মনোচিকিৎসকের সাথে কথা বলতে হবে; তমাল ভাবে। তবে সে ভাবনার তল-অতল নেই। দিন চলে যায়। সময়ে সাথে পাল্লা দিয়ে চলে শহরের যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা। বেঁচে থাকাই যেন এখানে বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও সবাইকে বেঁচে থাকতে হয়। ভালো থাকার পাতানো খেলা অবিরাম চলতে থাকে। ডাক্তারের কাছে তমালের আর যাওয়া হয় না।

দুই.

     তমাল চাকরি করে। আসলে নামমাত্র চাকরি। এই সামান্য কাজকে কোনো চাকরি বলা চলে না। সে প্রচ্ছন্ন বেকার। বেকার শব্দটা শুনতে শুনতে ওর কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। তাই জীবন থেকে একটি অপবাদ ঘোচানোর জন্যেই বোধ হয় মাস ছয়েক হল একটি অফিসে আসা-যাওয়া করছে। মাত্র ছয় মাস। খুব অল্প সময়। মহাকালের গর্ভে এই সময়টা ছেড়ে দিলে হয়তো আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই তমালের জীবনে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। মানুষ কত সহজে বদলে যায়। ছায়াচিত্রের দৃশ্যের মত একটার পর একটা দৃশ্যপট। এই ছয় মাসে তমাল নিজের মধ্যে নতুন করে মেকাপ লাগিয়েছে। লম্বা চুল, জিন্স আর ট্রি শার্টের বদলে একদম অফিসিয়াল গেটআপ। মনও হয়তো পরিবর্তিত হয়েছে প্রাকৃতিক নিয়মে। চাকরি প্রথম দিকে এতসব নিয়ম কানুন ওর একদম ভালো লাগেনি। নতুন জায়গা । অচেনা পরিবেশ। সবই তার চরিত্রের বিপরীত। ব্যক্তি স্বাধীনতার চরম অবনতি। ধ্যাৎ, এর কোনো মানে হয়। তার কাছে এটাকে রীতিমত জুলুম বলে মনে হয়েছে। আমরা কি এখনও পরাধীন ?

   কয়েক দিনের মধ্যে মন স্থির করে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে তমাল। কলিগদের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে চায়। অনেক জানা বা শেখার আছে। সবাইকে বেশ হেল্পফুল বলেই মনে হয়েছে তমালের। কিন্তু ধানের মধ্যে চিটা থেকেই যায়। পৃথিবীতে যতদিন শ্রেণিবৈষম্য থাকবে; উচু নিচু ভেদাভেদ থাকবে ততোদিনই এক শ্রেণির মানুষ থেকে যাবে, যাদের দুই দিকে মুখ। রামায়ণে ঘরের শত্রু বিভীষণের কথা মনে পরে। বিভীষণ নিজের রক্তের সাথে প্রতারণা করে পুত্রতব্য মেঘনাদকে চিরশত্রæ লক্ষণের হাতে তুলে দেয়। উফ! কী নৃসংশ সেই হত্যাকাণ্ড । কিন্তু অফিসের রাজনীতি ভিন্ন। খুব সামান্য একটা ব্যাপার। হয়তো বসের কাছে একটু বাহবা পাওয়া  অথবা বসকে খুশি রেখে দুই একদিন ছুটি কাটানো, একটু বাড়তি সুবিধা আদায়এই আর কী ! কিন্তু এইটুকুর জন্য কাজের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। কানকথা, বাড়তি প্রশংসা, একে অন্যের খুঁত ধরা; নিজেদের মধ্যে তিক্ততা বাড়িয়ে দেয়। তমালের কাছে এই পলিটিক্স একদম অচেনা মনে হয়। তবু তাকে টিকে থাকতে হবে। স্থান করে নিতে হবে আপন যোগ্যতায়। পৃথিবী ফুলসজ্জা নয়। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হয়। তবে এই ছয় মাসে তমাল একটা জিনিস শিখেছে যে, কোনো কাজই ছোট নয়। কিন্তু নিজেকে এই পরিবেশে একদম বেমানান মনে হয় তমালের।

এক এক করে দিনগুলো কেটে যায়। নতুন মাস শুরু হয়। জীবনের প্রথম পেমেন্ট পায় তমাল। খুব সামান্য। তবু আলাদা একটা প্রফুল্লতা তার মনকে ভরিয়ে দেয়। আজ যদি তার বাবা জীবিত থাকত। তবে কত খুশিই না হতেন তিনি। বাবা নেই। তমাল পেছনে ফেরে। হায় রে জীবন!  বাঁকে বাঁকে কত স্বপ্ন না লুকিয়ে ছিল। যখন স্কুলে পড়তো ক্লাশে টিচার এসে জিজ্ঞাসা করলেই স্যারকে বলত, বড় হয়ে জজ, ব্যারিস্টার হতে চাই। আজ কোথায় সেই স্বপ্ন ? আর কোথাই বা সেই জীবন। সবই যে কচুরি পানার মত ভেসে গেছে। সেদিনের সেই স্বপ্নের সাথে আজকের এই নিখাঁদ বাস্তবতার কোনো মিল নেই। খুব কষ্ট করেই পড়ালেখা শিখতে হয়েছে তমালেকে। ভার্সিটিতে ভর্তির পর ফাস্ট ইয়ার ডন্ট কেয়ার করতে করতেই শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। সবার জীবনেই একেক সময়, এক এক ভাবে আসে।

তিন.

      তখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার এত বেশি ছিল না। সীমকার্ড অপারেটর কোম্পানিগুলো রীতিমত ডাকাতি করত। প্রতি মিনিট দশ টাকা করে কেটে নিত। আবার এক সেকেন্ড বেশি হলেও পুরো মিনিটের টাকাই কেটে রাখত। পালস ছিল না। সেই সময় তমাল শখের বসে নোকিয়া ১২০০ মডেলের একটি মোবাইল কেনে। দিনে এক আধটা ফোন আসে, কোনো দিন আবার আসেও না। নিকট আত্মীয় ছাড়া কেউ কল দেয় না। তমাল সারাদিন এ কাজ ও কাজ শেষ করে রাতে নিñিদ্র অবসরে ফোনে সেভ করা নাম্বারগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। হঠাৎ হঠাৎ কোনো নাম্বারে মিসকলড চলে যায়। সে বকা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকে। কালেভদ্রে দুই একটা কল হয়তো ব্যাক আসে। তমাল তা রিসিভ করতে সাহস করে না। কিন্তু তমালের এই খড়ার দিন শেষ হতে বেশি সময় লাগে না। অল্পদিনের মধ্যেই মোবাইল অপারেটর কোম্পানি তাদের গ্রাহক বাড়ানোর জন্য রাত বারটার পর প্রথম মিনিটের পর পুরো ঘণ্টা ফ্রি কথা বলার সুযোগ করে দেয়। অন্য বন্ধুদের কথা জানি না। তবে তমালের জন্য এ অফারটিও সুখকর হয় না। রাত বারটার পর খুব প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ফোন করা যায় না। আর গেলেও দু’চার মিনিটের বেশি নয়।

চার.

      তমালের একটি গুণ ছিল। সে যা কল্পনা করতো তা সব লিখে রাখত। শব্দ আর ছন্দের উপরও বেশ দখল ছিল তার। কখনও কবিতা আবার কখনও বা গল্প লিখত। আমাদের জানা মতে, সে কবিতাই বেশি লিখত। পত্রিকার পাতায় যে তার দু’চারটি কবিতা ছাপা হতো না এমন নয়। এই খবরটা অন্য কেউ জানত না। প্রতিবার লেখা পাঠানোর সময় খামের গায়ে প্রেরকের নাম ঠিকানার সাথে নিজের ফোন নম্বরটাও লিখে দিত। যদি লেখা ছাপানোর ব্যাপারে সম্পাদকের যোগাযোগের দরকার পড়ে।

একদিনের ঘটনা। তমাল তখন অনার্স পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র। ভার্সিটিতে ক্লাস করছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। ক্লাস চলাকালে  ফোন রিসিভ করা যায় না। তড়িঘড়ি করে সে কলটি কেটে দিল। অপরিচিত নাম্বার। নিজের সুরক্ষার জন্য ফোন সাইলেন্ট করে ক্লাসে মনোযোগ দিল। ক্লাস শেষ করে বাইরে এসে ফোনটা বের করে তমাল অবাক না হয়ে পারল না। একশ বায়ান্নটা মিসড কল। একই নাম্বার। তমাল ফোন ব্যাক করতে যাবে-এমন সময় আবার কল। সে ফোনটা রিসিভ করল।

এই যে, সেই কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি রিসিভ করছেন না কেন ?

আপনি কে ?

আমার পরিচয় পরে দেবো। আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।

একটু বিজি ছিলাম। তাছাড়া অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলে আমি সাধারণত রিসিভ করি না।

কেন ? এটা কেমন কথা। আমি না হয়ে আপনার কোনো আপনজনও হতে পারত। যে বিপদে পড়ছে। আপনার সাথে ইমিডিয়েটলি কথা বলা দরকার। সে হয়তো কোনো দোকান থেকে ফোন করল। তখন?

সব সময় বিজি থাকি না। আমি ক্লাসে ছিলাম বলে আপনার ফোন রিসিভ করতে পারিনি। স্যার খুব কড়া। একদম সোজা ক্লাস থেকে বের করে দেন। সো সরি। এখন বলুন তো আপনি কে ? কেন ফোন করেছেন?

কেন ? আমি যে-ই হই, আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না বুঝি !

আজব তো। ভালো লাগা না লাগার কী আছে। কেন ফোন করেছেন বলুন।

আমি দিপা। পুরো নাম দিপান্বিতা সরকার। ইডেন কলেজ থেকে বলছি। গতকাল রাতে মাসিক বিনোদন পত্রিকায় আপনার ‘নীলশাড়ি’ গল্পটি পড়লাম। আমার অসম্ভব ভালো লাগেছে। অসাধারণ একটি গল্প।

ও আচ্ছা। কিন্তু নাম্বার পেলেন কোথায় ?

নাম্বার যোগার করা কী খুব কঠিন কাজ ? পত্রিকা অফিসে ফোন করে একটু মিষ্টি করে রিকোয়েস্ট করলাম। ব্যাস, পেয়ে গেলাম।

আপনি দেখছি খুব চালাক। তবে, এই সংখ্যাটি এখনও আমি হাতে পাইনি।

সে কী ? আপনি সংগ্রহ করেন না ?

সংগ্রহ করি। তবে অনিয়মিত লেখক কী না, তাই সব সময় খোঁজ রাখতে পারি না।

ও আচ্ছা। তাই বুঝি। আচ্ছা এখন রাখছি।

পাঁচ.

 

     এভাবেই দিপা আর তমালের প্রথম পরিচয়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। কথার মালায় রাতের প্রহর কেটে যায়। নতুন দিন আসে। মাস যায়। নতুন বছর শুরু হয়। ঈদ, ভেলেন্টাইন, নববর্ষআরও কত উৎসব কেটে যায়। তমাল যখন থার্ড ইয়ারে দিপা তখন প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিল। দিপা খুব চঞ্চল আর বুদ্ধিমতি  মেয়ে। ছাত্রী হিসেবেও মন্দ নয়। হিসেব বিজ্ঞানে অনার্স করছে। ওর চুলগুলো কোঁকড়া কোঁকড়া। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। হালকা পাতলা, বাঙালি মেয়েদের মত বেশি লম্বা নয়। মুখমণ্ডল গোলাকার। কাঁচা বয়স। টানাটানা নক্ষত্রের মত দুটো চোখ আর কুচ কালো ভ্রু। প্রথম দেখায় যে কোনো পুরুষকেই আকর্ষণ করবে। তবে লাল রঙের ড্রেস পড়লে তাকে আরও অপূর্ব লাগে। দিপার গ্রামের বাড়ি নাটোর। নাটোরের কথা উঠলেই বনলতা সেনের কথা মনে পড়ে যায়। এখন তমালের কাছে বনলতা মানে দিপা। সব স্বপ্নের মত লাগে তমালের কাছে। সে দিপাকে চিনতো না। এখন আপনের চেয়েও আপন মনে হয়। নৌকার পেছনের হালের মত। একটা সময় তমালের কাছে নারীকে জীবনপথে অযথা ঝামেলা মনে হতো। এখন সে জীবনের পদে পদে নারীর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে। নারী ছাড়া জীবন যেন অসম্পূর্ণ, অর্থহীন। দিপাকে ছাড়া তমাল এখন একটি দিনও কল্পনা করতে পারে না। সুখ আর স্বপ্নের মেলবন্ধন রচনা করে কল্পনায় তারা আঁকে রঙিন জীবনের ছবি। পাতানো সংসার। সেখানে তমাল আর দিপা দু’জনই আলাদা। তবে একটা কমন পরিচয়Ñ তারা তখন কথা আর কাব্যের বাবা মা। তমাল দিপাকে কাব্যে মা বলে ডাকে আর দিপা তমালকে কথার আব্বু বলে সম্বোধন করে। সব যেন রঙিন ফানুসের মত।

ছয়.

     মানুষের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে ব্যবধান চিরকালীন। সাধ অথবা সাধ্য বলে একটা কথা আছে। আকাশে চাঁদ মাটিতে নেমে এলে সবাই চাঁদকে ধরতে পারে না। হয়তো চাঁদটাকে একটু ছুঁয়ে দিতে সাধ হয়, কিন্তু সাধ্য থাকে কার? তমালের ক্ষেত্রেও কথাগুলো সমানভাবে প্রযোজ্য। দিপা আর তমালের মাঝে পাহাড় সমান বাধা। ফেমিলি স্ট্যাটাস, বংশ মর্যাদা, আর আর্থিক অবস্থার দিক দিয়ে  দিপার সাথে তমালের কিছুতেই যায় না। কিন্তু ফুল ফুটলে তার ঘ্রাণ কী আটকে রাখা যায় ? দিপাকে দেখতে আসে। অপছন্দ করার কিছু নেই। দিপা নিজেকে সামলায়। বাবা মায়ের কাছে সব কথা বলতে পারে না। তমালকেও না। কারণ তমালের ওপর নির্ভর করার সময় আসেনি। সে বেকার। সবে পাশ করে বের হয়েছে। কিছু একটা করবে। সে বার বার তাগাদা দেয়। তবে তমাল আর দিপার সম্পর্কের কথা বেশি দিন গোপন থাকে না। বিয়ে দেওয়ার জন্য দিপার বাবা-মা আরও মরিয়া হয়ে ওঠেন। পাত্র পক্ষ আসেদিপা অসুস্থ আচরণ করে। তারা চলে যায়। বাবার রাগ বাড়ে। সম্মানহানী হয়।

 

     দিপা নিজেকে বেশি দিন ধরে রাখতে পারে না। প্রায়ই অসুস্থ থাকে। জ্বর হয়। প্যারাসিটামল খায়। কিছুদিন সুস্থ। তারপর আবার জ্বর আসে। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। বাবাকে চেম্বারে ডেকে নিয়ে বলেন উন্নত চিকিৎসার জন্য পিজিতে দেখাতে। বাবা-মায়ে মুখের দিকে তাকানো যায় না। একমাত্র মেয়ে। দিপারা দুই ভাইবোন। দিপাকে পিজিতে দেখানো হয়। ডাক্তার মুচকি হেসে বলেন, ‘আরে কিছুই হয়নি। ভাইরাস জ্বর ঠিক হয়ে যাবে।’ ডাক্তারের মুচকি হাসির মধ্যে রহস্য লুকিয়ে থাকে। আরও আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। দিপার রক্তে ভাইরাসের অনুজীব পাওয়া যায়। যা রক্ত কণার সাথে মিশে আছে। সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ‘ডাক্তার, একমাত্র মেয়ে আমার! যে করেই হোক ওকে বাঁচাতে হবে। যত টাকা লাগুক আমি দেবো।’ ডাক্তার অভয় দেন। ‘ভয়ের কিছু নেই। নিয়মিত ঔষধ খেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে মাঝে মাঝে শরীরে রক্ত পাল্টানো লাগতে পারে। যা বেশ ব্যয় সাধ্য।’ বাবা সব ঠিক করে দিপাকে বাসায় নিয়ে আসেন। দিপা আর তমালের সাথে যোগাযোগ করে না। ফোন নম্বর পরিবর্তন করে তমালকেও যোগাযোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে রাখে।

সাত.

 

     কিছুদিন পর দিপার সাথে অন্য একটি ছেলের ধুমধাম করে বিয়ে হয়। ছেলেটি ব্যাংকার। উচ্চ বেতনে চাকরী করে। ঢাকায় সেটেল্ড। নিজের ফ্ল্যাটে থাকে। খুব হ্যাপি। হয়তো এমনি চেয়েছিল দিপা। সব যেন হাতের নাগালে। স্বামীও দিপাকে খুব গুরুত্ব দেয়। টোনাটুনির সংসার। অফিস থেকে ফেরার পথে সে দিপার জন্য প্রতিদিন একগুচ্ছ করে ফুল নিয়ে আসে। দিপার আরও ভালো লাগে। ছুটির দিনগুলোতে তারা বেড়াতে যায়। ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায় তারা। ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা শুরু হলে দুইজনে বই মেলায় যায়। বই দেখে। শখের বই খোঁজে। একটি বইয়ের দিকে বিশেষ নজর পড়ে। নাম ‘কাঠপোকা’। বইটি কিনে নেয়। মেলার বাইরের দিকে এক জায়গায় বেশ ভীড়। ব্যাপারটি দেখার জন্য দিপা একটু ঢু মারে। একজন লেখক অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। ভক্তরা কেউ কেউ যুগল ফটো তোলা দিয়ে ব্যস্ত। লেখক মাথা নিচু করে বইয়ে আশির্বাদ সূচক কথা লিখে সাইন করছেন। ভীড়ের কারণে দিপা মুখটি দেখতে পেল না। দিপার নিজেরও একটি অটোগ্রাফ নেওয়ার শখ হল। সে আলতো করে তার কেনা বইটি মেলে ধরল। লেখক পাশ ফিরে তাকালেন। চার বছর পর দিপা আর তমালের চোখাচোখি হল। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলতে পারল না।

Leave a Reply