You are currently viewing শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪। স্বপঞ্জয় চৌধুরী’র গুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪। স্বপঞ্জয় চৌধুরী’র গুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪

স্বপঞ্জয় চৌধুরী’র গুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪

স্বপঞ্জয় চৌধুরী’র গুচ্ছ কবিতা

নিস্বার্থ একটি বৃক্ষ ও কতগুলো স্বার্থপর প্রজাপতি

বসন্তকালের একটি বৃক্ষ, 

রঙিন পুষ্পসমৃদ্ধ হয়ে হাওয়ায় দুলছে।

লুটেরা মৌমাছি ফুল থেকে মধু শুষে নিচ্ছে,

প্রজাপতি নিচ্ছে ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ,

অথচ বসন্ত শেষ হলে তাবৎ দেহ থেকে

ক্ষয়ে যায় ফুল, ঝরে যায় পাতা

পড়ে থাকে নিষ্কন্টক কাঠ।

পত্রহীন বৃক্ষের কাছে কেউ আসেনা

না আসো তুমি, না আসে প্রজাপতি

মৌ ও মৌমাছি।

জন্মপথিক যে সে জানে বৃক্ষের এই রুগ্নতা

আজীবনের নয়।

আবারও আসবে বসন্ত, ফুটবে ফুল, নাচবে বৃক্ষপল্লব

বৃষ্টির তালে তালে।

অতঃপর স্বার্থপর প্রজাপতি ও মৌমাছিগণ

আবারও আসবে, মধু নেবে

গণিকার মতো চক্ষুলজ্জা ভুলে

বৃক্ষের কাছে শুধু চাইতেই থাকবে

দাও আরও দাও, উদোর ভরে দাও

মৃত্যু অবদি দাও

লজ্জা ও লালসার দরজায় ক্রমাগত

কড়া নাড়তেই থাকবে

কড়া নাড়তেই থাকবে।

 

বালিকার হাতে সিগ্রেট

 

পৃথিবীর নাভিমূলে ঘুরছে ক্ষুধা,

বাতাসের সাথে সাথে বাড়ছে বয়স

দারিদ্র্য সূচককে তোয়াক্কা না করে

একদল বালিকা ফুকছে সিগ্রেট।

বালিকার হাতে সিগ্রেট আরসব

ফতোয়া, বাহাস, ছবক পিছে মারিয়ে

বালিকা উড়াচ্ছে বেলফুলের গন্ধ

কেতাবি ফেমিনিজমকে কেউ কেউ

ভাবছে আগ্রাসী, বালকদের তফনের গিট

হালকা হতে চললো বলে।

ফিলিস্তিন মরে, ইয়েমেন, ইসরাইল মরে

তাতে কি আসে যায়, দ্রব্যমূল্য সূচক,

রেমিট্যান্স ভেঙে পড়ে, শেয়ারের দেউলিয়াত্ব

তাতে কিছুই আসে যায়না,

বালিকা নারী হতে চায়

ফেমিনিন জেন্ডার, হাসতে চায়, উড়তে চায়।

একদল শিশু স্তনচূত্য হয়ে মা মা করে

এগিয়ে আসছে, বালিকা লুকিয়ে থাকে

পুজির জানালায় উঁকি মেরে দেখে

ক্ষুধা, কান্না, দারিদ্র্য, হাড়ির ঝনঝন

একজন নারীর কাঁধে হাতুড়ি, ঝোলায় ভাত সালুন

আর আঁচলে মোড়া ঘুমন্ত শিশু

দিয়াশলাইয়ে ঘষা দিয়ে সে আগুন জ্বালায়

কানের ডগা থেকে নিয়ে সিগ্রেট ধরায়

সিগ্রেট ফুঁকতে ফুঁকতে সে সামনে এগিয়ে যায়

এ আগুন নেভাবার সাধ্য কারো নেই

বালিকারা একজন মানুষকে দেখতে পায়

তারপর লজ্জায় সিগ্রেটটি লুকিয়ে ফেলে

আসলে সিগ্রেটটি তাঁর হাতেই যে মানায়

সিগ্রেটের তীব্র গন্ধে ঢেকে যাচ্ছে ফেমিনিজম

ক্রমশই জেগে উঠছে হিউম্যানিজম।

 

অনাবিষ্কৃত সীৎকার

 

বোতলবন্দি হয়ে আছে আমাদের কথাগুলো,

কী এক অদ্ভূত সীৎকারে মাছবন্দি হয়ে আছি দুজন,

মেঝের টাইলসে শুয়ে আছে খালি ওষুধের খোসা

মাতৃত্বের দাগ – তোমার উদোর

একটা আউট মডেলের ট্যাম্পু ভাঙা গ্যারেজে

কর্কশ আওয়াজ তুলছে-

ওগো আলাদিন থামাও তোমার রুটি রুটি নাচ

বাজারে উচ্চমূল্য, নকল পুষ্পে ঝড়ছে ফুসরৎ

ধোঁয়ার আব্রু থেকে বেরিয়ে আসছে আব্বুর হাত

বোতলের ছিপি খুলে দেখলাম

 

একটা সমুদ্র চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে।

স্বপঞ্জয় চৌধুরী। জন্ম ১৯৮৪ সালে ৬ জুন। বর্তমানে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সাউথ পয়েন্ট কলেজে কর্মরত আছেন। ইতিপূর্বে কাজ করেছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এ্যসিসট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর পদে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় খন্ডকালীণ সাংবাদিকতা ও সম্পাদনার কাজে বিভিন্ন সাপ্তাহিক ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। কবিতার পাশাপাশি গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া, চিত্রনাট্য,অনুবাদ, গানসহ সাহিত্যের সকল শাখায় রয়েছে তার পদচারণা। প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ : কাব্যগ্রন্থ : পতঙ্গ বিলাসী রাষ্ট্রপ্রেম(২০১১, সাহিত্যদেশ প্রকাশনী) গল্পগ্রন্থ : জলপিপিদের বসতবাড়ি(২০১৩, পূর্বা প্রকাশনী) কাব্যগ্রন্থ : কালযাত্রার স্নিগ্ধ ফসিল(২০১৬, শব্দসাঁকো, কলকাতা) কাব্যগ্রন্থ- একুশের ছড়া-কবিতা সংকলন(নালন্দা পাবলিকেসন্স-২০০৮, সম্পাদনা নাসের মাহমুদ) কাব্যগ্রন্থ- মুক্তিযুদ্ধের ছড়া-কবিতা((নালন্দা পাবলিকেসন্স-২০০৯, সম্পাদনা, আহসান মালেক) কাব্যগ্রন্থ-(রঙিন মেঘের দিন, সম্পাদনা বাদল সাহা শোভন, পূর্বা প্রকাশন-২০১২), কাব্যগ্রন্থ: দ্রোহ কিংবা পোড়ো নদীর স্রোত(২০১৮- চৈতন্য প্রকাশনী), কিশোর কাব্যগ্রন্থ-মায়ের মতো পরি( ২০২০,অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনী), প্রবন্ধ: নিগূঢ় শিল্পের কথাচিত্র্র(২০২১), কাব্যগ্রন্থ: জলাঙ্গি ও ভাটপুষ্পসমূহ (২০২২), কাব্যগ্রন্থ: গহীনে অরণ্য নদী (২০২১); প্রবন্ধ: শিল্প সাহিত্যের নিবিড় অনুসন্ধান- নিভৃত ভাবনার জলযান (২০২৪) লিখেছেন বিভিন্ন দেশী বিদেশী দৈনিক ও সাহিত্য পত্রিকায়।

স্বপঞ্জয় চৌধুরী
কবি, প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক

Leave a Reply