শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। গল্প: হাউসের মন- আতাউর রহমান মিলাদ

Spread the love

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

গল্প: হাউসের মন
আতাউর রহমান মিলাদ

গল্প

হাউসের মন

আতাউর রহমান মিলাদ

বাবা-মা’র দ্বন্ধ বিরহের ভেতর দিয়ে আমার বেড়ে উঠা। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই দেখছি বাবা মা’র অবস্থান সবসময়ই দুই মেরুতে। একজন ডানেতো অন্যজন বামে। এ যেন চিরকালীন দ্বন্ধ! তারপরও স্বামী স্ত্রী হিসেবে ওরা ত্রিশ বছর পাশাপাশি কি করে পার করেছেন এটা ভাবনার বিষয় এবংসেটা আমার কাছে এক বড় বিস্ময়ও বটে! 

বাবা, একেবারে সাদাসিধে গোবেচারা। আমাকে খুব ভালোবাসে,আমিও বাবাকে। আমার সব আব্দার বাবাই পূরণ করে। বাবাকে ঘিরেই  আমার পৃথিবী।

বৈবাহিক জীবনে, বাবাই আমার দেখা সবচেয়ে নিঃসঙ্গ পুরুষ! 

মা’কে আমি বুঝতে পারিনা।খুব কাছে থেকেও দুরের মনে হয়। বাবার সাদামাটা জীবনে মা সবসময়ই রঙীন। এই রঙীন  চাকচিক্যময় জীবনে বাস করেও মা ভেতরে ভেতরে ফাঁকা। মায়ের গোপন কান্না দেখেবুঝতে পারি তার শূন্যতা,অতৃপ্তি,কিন্তু সেটা ঠিক কী বুঝতে পারিনা!

আরিফ চাচা,বাবার বন্ধু। সেই প্রাইমারী স্কুল থেকেই খুব ঘনিষ্টতা। বাবার বন্ধু হওয়ায় বাড়িতে অবাধে আসা যাওয়া। সব পারিবারিক বিষয়াদিতে তার উপস্থিতি অনিবার্য। মা তার সাথেই কথা বলেন বাপরামর্শ নেন। বাবাও তার বন্ধুর কাঁধে সব বোঝা তুলে দেন নিশ্চিন্তে। নিজের সংসারে অন্যকে যুক্ত করার রহস্য বুঝতে পারিনা। রহস্য  বিস্ময়ের মধ্যে দেখি মা আমার, বাবার থেকে আরিফ চাচার দিকে ঝুলে থাকেন বেশী।

একদিন বিকেলে চায়ের আসরে মা’কে কৌতুহল নিবারণে প্রশ্ন করি,

‘মা,আমাদের সংসারে আরিফ চাচার এতো সম্পৃক্ততা কেন, বুঝতে পারিনা!’

‘শোন’ বলে আমার হাতটা তার হাতের মুঠোয় আদর করে টেনে নেন।

এবার গভীর নিঃশ্বাস ফেলে মা আমার, মোমের মতো গলতে শুরু করেন। আমি তার ভেতরের শুন্যতাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করি, কষ্টকে অনুভবের। মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন,

‘বিয়ে করলেই সংসার হয়নারে মা, তোর বাবা সংসারে থেকেও নেই। কাউকে না কাউকেতো হাল ধরতে হয়।’ 

আমি করুণ চোখে মায়ের মুখের দিকে চেয়ে থাকি, অপলক। এই প্রথম মায়ের দিকে মাথাটা ঝুকে পড়ে। তার হাতের মুঠোয় আমার হাতটা শান্ত হয়ে আটকে থাকে। ছাড়াবার তাড়া অনুভব করিনা। মায়ের কাঁধে মাথা রেখে দেই নির্ভরতায়। মা মমতায় বুকে টেনে নেন, আদরে।

আমি, বাবার ব্যর্থতার চিহ্ন ধরে হাঁটতে থাকি জন্মের উৎসের দিকে! 

 

ভাবি, সত্য মিথ্যার জীবনে সবকিছু জেনে কী হবে!

আতাউর রহমান মিলাদ কবি  গল্পকার। লিখছেন আশির দশক থেকে 

বর্তমানে বাংলাদেশ ওবিলেতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত বাংলা কাগজগুলোতে তার লেখা নিয়মিত ছাপা হয়।১৯৮৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী।প্রবাসে জীবন যাপন করলেও শেকড় স্বদেশেই প্রোথিত। 

 পর্যন্ত তার  টি কাব্যগ্রন্থ, টি গল্প গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ‘দুঃসময়ের চিৎকার‘ তার ১ম কাব্যগ্রন্থ ১৯৮৪সালে এবং ‘জলভরা জটিলতা‘ ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়।একুশে বইমেলায় ২০২১  প্রকাশিত হয়েছে কাব্যগ্রন্থ ‘স্মৃতির সেলাই

বর্তমানে সাহিত্য কাগজ ‘শব্দপাঠএর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। 

কবিতার জন্য পেয়েছেন সংহতি সাহিত্য পদক ২০০৮। কবিতার জন্য সম্মাননা পেয়েছন ‘আমরাকভেন্ট্রিবাসী‘ সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে। 

সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৭ সালে টিএসএফবি মিডিয়া কর্তৃক কমিউনিটি এপ্রিসিয়েশন পদক দেয়াহয়।

 

কাব্যগ্রন্থ:-

দুঃসময়ের চিৎকার,হৃদয়ের জানালা খুলে,আর যদি একটা গুলি চলে,কবিতার চেকবই

স্মৃতিহীন অচিন আঁধার,স্বরচিত অন্ধকার 

জলভরা জটিলতা,স্মৃতির সেলাই (যন্ত্রস্থ

 

গল্প গ্রন্থ:-

তোমার দেয়া দুঃখ,স্বপ্ন  ছায়া (যৌথ)

 

সম্পাদনা:-

ত্রৈমাসিক শাপলা,সাম্প্রতিক সাহিত্য ,ভালোবেসে অন্ধ হই,তৃতীয় বাংলার কবিতা

শব্দপাঠ (প্রধান সম্পাদক

Contact: milad1961@hotmail.com 

 

 

আতাউর রহমান মিলাদ
কবি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top