শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা। গল্প: এক্সপ্লোরার ট্রাভেল- সৌমেন দেবনাথ

Spread the love

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা

গল্প
এক্সপ্লোরার ট্রাভেল
সৌমেন দেবনাথ

এক্সপ্লোরার ট্রাভেল

সৌমেন দেবনাথ 

 

নিজ গণ্ডিতে বাস করতে করতে মন দেয়ালে শেওলার দাগ জমে। প্রাত্যহিক জীবনে নেমে আসা অবসন্নতা দূর করতে ওরা নিয়মিত জেলা সে জেলা ঘুরে বেড়ায়। ভ্রমণপিয়াসী মন ক্ষ্যান্ত থাকে না। অজানার সাথে পরিচিত হতে ভ্রমণের নেশা ওদের পেয়ে বসেছে। মন বিহঙ্গের পাখনা মেললেই ওরা অজানা ঠিকানায় উড়াল দেয়। অজানাকে জানা আর অদেখাকে দেখার বুভুক্ষু, তৃষ্ণার্ত মন অবসর সময় পেলেই ছুটে চলে।

 

খোলা প্রান্তর থেকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখে বিস্মিত হওয়া যায়, ভরদুপুরে কোকিলের কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়া সুললিত মিষ্টি ডাক শুনে আপ্লুত হওয়া যায়, কিন্তু টেলিভিশনের স্ক্রিনে পাহাড় থেকে ঝরে পড়া ঝরনা দেখে তৃপ্ত হওয়া যায় না। ঐতিহ্যের প্রতি আবেগ চিরন্তন। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার কারুকার্যখচিত নান্দনিক নির্মাণশৈলী দেখতে ওরা সবাই সময়সুযোগ পেলেই ঘর থেকে বের হয়ে পড়ে। বয়লার মুরগির মতো ঘরকুনো যারা নয়, তারা ঘুরে বেড়াতেই পছন্দ করে। পরিবার থেকে নানা নিষেধের দেয়াল তারা ভেঙে একত্র হয়েই ভ্রমণে বের হয়ে পড়ে। ভ্রামণিক মন ভ্রমণে না গেলে শান্তি পায় না। প্রতি মন ভ্রমণ পূজারি, ভ্রমণ পিপাসাকাতর সবাই। 

 

কিন্তু ঘুরতে গেলে বেশ খরচ পড়ে। তারা সবাই পড়াশোনা করছে বলে খরচটা ভ্রমণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সৈকত একদিন একটি ফেসবুক পেজের খোঁজ দিলো। পেজের নাম এক্সপ্লোরার ট্রাভেল। পেজে নিয়মিত ঘোষণা থাকে সারা দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থান ভ্রমণের, হাওড়বাওড়, পাহাড়পর্বত, সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের। যাওয়াআসা, খাওয়া প্যাকেজ মূল্য দেখে শৌণক বিস্মিত হলেও আব্বাস বিশ্বাসই করতে চাইলো না। চোখ বিস্ময়ে কপালে উঠলো। তারপর পেজটি ঘুরে ঘুরে দেখার পর বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো। কারণ ট্রাভেলটি দীর্ঘদিন সার্ভিস দিয়ে আসছে তার অসংখ্য ছবি আছে। ছবির নিচের কমেন্টসও অনুকূলের।

 

সামনের দিকের সিটগুলো পেয়ে কাদের, রণৌত যারপরনাই খুশি। কিন্তু পিছনের সিটগুলোতে নারীপুরুষ জোড়ায় জোড়ায়। স্বামীস্ত্রী কিংবা জুটিরা এই ট্রাভেলের মাধ্যমে এত ভ্রমণ করে ভেবে দেখে রিয়েল ভীষণ আশ্চর্য হলো। দুই একজনকে দেখে মনে হলো নববিবাহিতা, লজ্জা মাখা মুখ, যেন কত কালের অপরিচিত একে অপরের, হানিমনে যাচ্ছে। রিয়েলদের মতো দল বেঁধে কেউ যাচ্ছে না, প্রিয় সঙ্গীকে নিয়েই অধিকাংশ যাচ্ছে, কারণ সবাই একে অপরের কাঁধে মাথা রেখে গল্প করছে। কেউ কাউকে ডাকছেও না, বিরক্তও করছে না, রিয়েলরা যেটা করছে। অন্তরের গভীরের যত ভালোবাসা একে অপরকে ঢেলে দিচ্ছে। মনে মনে আক্ষেপ প্রকাশ করে রিয়েল ভাবে, আকাশ ভরা এত তারা, অথচ একটি তারার দেখা আজও পেলাম না!

 

কাদের আর রণৌত বি ওয়ান বি টুতে বসেছে, আব্বাস আর রিয়েল বসেছে সি থ্রি সি ফোরে। রণৌত আব্বাসের সাথে কথা বলতে গেলেই বি থ্রি বি ফোরে বসা জুটির দিকে নজর চলে যাচ্ছে। প্রিয় সঙ্গিনী প্রিয় সঙ্গীর কাঁধে ভর দিয়ে আদুরে কণ্ঠে কথা বলছে। ভালোবাসা এমনি, দেখতেও ভালো লাগে। শত মানুষের ভিড়ে একটি মানুষ অন্য একটি মানুষেই মুগ্ধ, দেখতেও দারুণ লাগে। প্রিয় মানুষ একে অপরকে কতই না গুরুত্ব দিচ্ছে, দিচ্ছে সময়; আর কিছুই লাগে না এই দুই পেলে। ভালোবাসার মানুষটাকে দেওয়া উপহারের মধ্যে সবচেয়ে দামি উপহার হলো তো এই সময় আর গুরুত্ব।

 

ওদিকে শৌণক আর সৈকত বসেছে ডি ওয়ান ডি টুতে। আব্বাস সৈকতের সাথে কথা বলতে গেলেই আব্বাসের চোখে পড়ে সি ওয়ান সি টুয়ের জুটির প্রেমালাপের দৃশ্য। জড়িয়ে বসেছে। ভালোবাসা কত নিখুঁত, একটুও বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পর্ক তো এমনই, ভিন্ন থাকার প্রশ্নই আসে না। মুখাবয়ব, কথাবার্তা আচরণ দেখে মনে হচ্ছে ভদ্র ঘরের সন্তান, কিন্তু বাসের ভেতর এত ভালোবাসা দেখানোকে আব্বাস মাত্রাতিরিক্ত মনে করলো। এত এত ভালোবাসা প্রদর্শনকে আব্বাস আখ্যা দিলো, একে অপরকে পাওয়ার জন্য অহেতুক বিবেক লয় বলে। 

 

সৈকতের নজর মাঝে মধ্যে ডি থ্রি কিংবা থ্রির ছেলে দুটোর দিকেও যাচ্ছে। তাদের রসালাপ দেখে মনে হলো এটা যেন বাস নয়, ভালেবাসার কারখানা। প্রিয়জনকে খুশি করার জন্য উভয়ই উভয়ের জন্য খোলা হাওয়ার মতো দিল খোলা, পাহাড়ের মতো মৌন। ভালোবাসা কখনোই নিঃস্বার্থ নয়, ভালোবাসার বিনিময় কেবল ভালোবাসাই হয়। একে অপরের অতিরিক্ত ভালোবাসার মাখামাখি দেখলে মনে হয় কোনো স্বার্থ দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়েই একে অপরকে জয় করেছে। 

 

রাত বাড়তেই রণৌত আবিষ্কার করলো, বি থ্রির ছেলেটি ভীষণ কামুক। লাম্পট্যে মাত্রা ছাড়া। আর বি ফোরের মেয়েটিও ভীষণ হালকা চরিত্রের। কোনো বাধা দিচ্ছে না, নিজেকে ছাড়িয়েও নিচ্ছে না। প্রিয় মানুষটি যা করছে তাতেই সদিচ্ছা তার। প্রিয়জনকে রাঙানোর জন্য কোনো লজ্জায় নেই তার। দৃশ্য দেখার মতো না, এসব দৃশ্য দেখার জন্য কেউ প্রস্তুতও থাকে না।

 

ওদিকে আব্বাসও ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো সি টুতে বসা ছেলের নির্লজ্জপনা দেখে। সে ভাবলো, এত মানুষের মধ্যেও যে এমন নির্লজ্জপনা করতে পারে, তার ভেতরের মানবিক বৃত্তিগুলো আর নেই। জন্তুর মতো মানুষও জন্তু? ভালোবাসা মানে কি দেহের আঁকাবাঁকা নদীর রঙিন ফোয়ারায় ইচ্ছাশীল সাঁতরানো

অকারণেই সৈকতের নজর ডি থ্রিতে গেলো। আহা, কী দৃশ্য! দুর্ধর্ষ শরীরবৃত্তীয় ইনিংস। প্রিয় সঙ্গিনীর শরীরের স্বাদগন্ধ লোপাটের দুর্দান্ত ক্রিয়াকলাপ। সঙ্গিনীও কম না, অধরকে ফণা করে ছোবল মারছে প্রিয় সঙ্গীকে। যেন একে অপর একে অপরের কাছ থেকে শরীর ইজারা নিয়েছে।

 

আব্বাসের পাশের সিটে রিয়েল যৌবনহীন মাঘের সাপের মতো ঘুমাচ্ছে। কিন্তু আব্বাসের ঘুম আসছে না। অকারণেই নজর চলে যাচ্ছে অপর পাশের কপোতকপোতীদের দিকে। অন্যের দৃষ্টি তাদের দিকে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের দুইজনের তাতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। তাদের মনোদৈহিক সম্পর্ক আব্বাসের চরমকে ছুঁয়ে গেলেও আব্বাস নিজেকে সামলে নিচ্ছে। অন্যদের উষ্ণ হওয়ার দৃশ্য দেখে আব্বাসের শরীরের রক্তও গরম হয়ে যাচ্ছে। এমন কামনাময়, কামগন্ধময় কাণ্ড চোখের সামনে ঘটতে থাকলে নিজেকেও সামলে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। পুরুষটির চোখে একবার আব্বাসের নজর পড়লো। তার লোলুপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চোখ দুটি অন্ধকারে হিংস্র শ্বাপদের মতো ঝকঝক করছে। পাশবিক ক্ষুধা নিয়ে বাসে উঠেছে যেন। 

 

ওদিকে রণৌত আর আব্বাসের দিকে তাকাচ্ছে না। ভ্রমণ পথের মজাটায় আজ মাটি হয়ে গেলো। ওদের মধ্যে সৈকত বেশি চটপটে। সে সিটে বসে থাকতে পছন্দ করে না। বাস থামলেই সামনে যায়। ইঞ্জিন কাভারে গিয়ে বসে৷ আজ একবার উঠার পর নিজ সিট থেকে আর উঠলোই না।

 

একটি রেস্তোরাঁ এলে আধা ঘণ্টার জন্য বাস যাত্রা বিরতি দিলো। সবাই নামছে। আলুথালু নিন্দ্রালু তন্দ্রালু দেহ নিয়ে কিছু নারী নামছে। স্বল্প আলোয় তাদের দেখে মনে হচ্ছে পেকে যাওয়া হলুদ কুঁচে মাছ।

 

বাস থেকে নামার পর রণৌত, আব্বাস আর সৈকত নিজেদের মধ্যে কথা বললো। আজকের যাত্রাটা অনেকের মতো তাদের তিনজনেরও খারাপ যাচ্ছে। এক কাপ করে চা খেয়ে আবার বাসে এসে উঠলো। কোনো কিছু না বলেই কাদের, শৌণক আর রিয়েলের সাথে ওরা তিনজন সিট পরিবর্তন করে বসলো। আশপাশে বসা মেয়েগুলো এরি মধ্যে পোশাক বদলে বাসে উঠেছে। রাত বাড়লো আর ওরা টিশার্ট পরে গাড়িতে উঠলো। স্বাস্থ্যল শরীরে প্রশ্নীল চোখে তাকিয়ে থাকলো কাদের। দাহ্য বস্তু না পেলে আগুন জ্বলে না। এমন উষ্ণ, উদগ্র নারীর দেখা পেয়ে কাদেরের কামোত্তেজনা জাগ্রত হলো। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলো বহুগুণে। কোন ঘরের সন্তান! ছি, ছি, বেহায়া! এসব ভাবতে ভাবতে কাদের নিজেকে সামলে নিলো। 

 

রিয়েলও কাদেরকে ডেকে কথা বলতে গিয়ে থমকে গেলো। থেমে গেলো সে বাম পাশের পরস্পর পরস্পরের অধরের স্বাদ গ্রহণের দৃশ্য দেখে। প্রতিটি চুম্বনে সুখের ছোবল, যেন অমৃত। কী একটা বলতে যাচ্ছিলো, না বলে রিয়েল নিজেকে সংযত করলো। নজর উঠালেই দেখা যাচ্ছে, এক লম্পট সৌন্দর্য ফণা তুলে চোখ, ঠোঁট, নাক, কান, গালে দুলে দুলে ছোবল মারছে। আর নারীটিও নিজেকে বিলিয়ে দিতে এতটুকুও কার্পণ্য করছে না। শারীরিক ছলাকলার মাধ্যমে প্রিয় পুরুষ সঙ্গীটিকে মাতিয়ে রাখছে। আব্বাসের মতো রিয়েল আবার অত লজ্জাটে নয়, একটু পরপর নজর উন্মীলন করে বামে তাকাচ্ছে। একে অপরকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে, যেন কেউ এসে তাদের ভিন্ন না করে দেয়।

 

কাদের নিজের সিট পরিবর্তন করে নিলো শৌণকের সাথে। সে ভেবেছে পেছনটা নিরাপদ, আপত্তিকর দৃশ্য আর চোখে পড়বে না৷ কিন্তু ডি টুতে বসে সে আরও আপত্তিকর দৃশ্যের স্বাক্ষী হলো। ভীষণ নির্লজ্জদের নির্লজ্জপনা পেছনেও। পদ্মার বুকে জেগে উঠা বালুচরে যেন এক হৃদয় চাষা চাষ করছে। ভীষণ রকমের আপত্তিকর মুহূর্তের স্বাক্ষী হতে হলো তাকে। 

শৌণক রণৌতকে বললো, ছি! বাসে এসব কী হচ্ছে? ডি থ্রিতে যে অবস্থা বি থ্রিতেও একই অবস্থা। বাস, না বেশ্যাখানা এটি

রণৌত বললো, চোখ আছে, চোখ না মেললেই তো হলো!

শৌণক বললো, এটাতে যারা ভ্রমণে যাচ্ছে সব বন্ধুরাই তো!

রণৌত বললো, অপ্রিয় বন্ধুরা পাশাপাশি সিট নিয়ে যায় না। প্রিয় বন্ধুরা যাচ্ছে, বয়স ওদের আয়ত্তে। যা ইচ্ছে তাই করবে। দেখলে দেখ, তারা তো মানা করছে না। না দেখলে না দেখ, বলেছে যে দেখ?

 

ছয় বন্ধুই জেনে গেলো বাসের মধ্যে আজ কী কী ঘটছে। রিয়েল আব্বাসকে বললো, কেমন নারী, সঙ্গীর কাছে নিজেকে উজাড় করে সমর্পণ করেছে, বেশ্যারও তো বস্ত্র উন্মোচন করতে গেলে বাধা আসে। দেহবিলাসীরাও তো দৃশ্য দেখলে লজ্জা পাবে।

আব্বাস বললো, পুরুষ সঙ্গীটিও বা কেমন? ক্ষুধা তোর, তুই বাসে কেন? হোটেলে যা। সবার মাঝে লজ্জাহীন হওয়া মানুষের কাজ না। পুরুষ বা মহিলা যে কেউ কামনার স্বাদ উন্মুক্ত পরিবেশে নেবে কেন? উন্মুক্ত স্থানে পুরুষের বা মহিলার শরীর উত্তপ্ত হবে কেন? সব এক একটা খোজা পুরুষ, আর বন্ধ্যা নারী।

কাদের সৈকতকে বললো, কখনো ভেবেছিলি এমনও একটি জগৎ আছে? কতই না অজানা আমাদের কাছে! বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিতেগলিতে যা দেখি আজ পাশের সিটেই তা দেখি। আশেপাশে এত মানুষ, লাজলজ্জাও নেই।

সৈকত বললো, আমরা দেখি, আমাদের লজ্জা লাগে, কারণ আমাদের লজ্জা আছে। আমাদের বিবেক আছে। ওরা যা ইচ্ছে তাই করছে, কারণ ওদের লজ্জা নেই। ওদের বিবেক নেই। নষ্টদের জন্য, ভ্রষ্টদের জন্য আমাদের চোখ বন্ধ রাখতে হচ্ছে, কী দিন এলো!

 

সবাই ঘুমানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু মনের মধ্যে আশপাশের কীর্তিকলাপের দৃশ্য ভাসছে যা ঘুমকে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। স্রষ্টা যাদের সৌন্দর্য দিয়েছেন তারা কত জঘন্যভাবে সৌন্দর্যের অপব্যবহার করছে ভেবে ভেবে ওদের রাত কেটে গেলো। ভ্রমণ স্পট চলে এলো।

বাসভরা মানুষের কারও দিকে নজর যাচ্ছে না। ওরা ছয় বন্ধু মিলে তিন দু গুণে ছয়, ছয়জনের দিকেই বেশি নজর রাখছে। জোড়ায় জোড়ায় থাকছে, হাসছে, কথা বলছে। পদ্মের পাশে বনফুলকে মানায় না, মেয়েগুলো সুন্দর, সুন্দরের সংজ্ঞায় যদিও পড়ে না, তবে ছেলেগুলো খুব সুন্দর না। খুব প্রসন্ন তারা, প্রফুল্লতা চলাতে, ফেরাতে; চপলতাও দেখার মতো। পরস্পরকে জড়িয়ে হাঁটছে, যেন কেউ তাদের বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ওষ্ঠপ্রান্তে মায়াবী হাসি লেগেই আছে। অনন্য চোখের মৃদু আকর্ষণে যে কেউ থমকে যাবে, স্তম্ভিত হবে।

 

ওরা ছয়জন নাস্তা শেষ না করতেই দেখতে পেলো পরশসুন্দরী রাজকুমারীরা পোশাক বদলে ফেলেছে। তারাও নাস্তা করতে বসেছে। যৌবনপুষ্ট উন্নত বক্ষ শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে উঠানামা করছে। কখনো ডানপাশ থেকে, কখনো বামপাশ থেকে উড়না খসে খসে পড়ছে। ভীষণ লাজুক কিনা, তাই উড়না পূর্বাবস্থানে উঠাতে ন্যূনতমও দেরি করছে না। আশপাশের মানুষের নজরও একদিকে ধাবিত হচ্ছে। 

 

এর পরপরই সবাই ভ্রমণ স্পটে চলে গেলো। পাহাড়পর্বত, ঝরনাধারা, পাথর, শান্তস্নিগ্ধ পানির আর কী দেখবে তারা, বেলাল্লাপনাদের কীর্তিকলাপ দেখেই তুষ্ট। শৌণক তো বলেই ফেললো, হাজার পথ হেঁটেছি আমি, সুন্দরী নারী দেখবো বলে, দেখছি কেবল এমন এমন বেশ্যা।

এক নারীর নাভীদেশে মুখ রেখে ঘুমাচ্ছে এক ছন্নপুরুষ৷ আব্বাস বললো, ভালোবাসার অন্তরালে শরীরী খেলায় তো দেখি বেশি।

পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে রিয়েল বললো, পাহাড়ের চূড়াও হার মেনে যায় ফুটন্ত ভাতের মতো টগবগে তরুণীদের দিকে তাকালে। যৌবনাদের দেহে চটক আর চটক। নগ্ন পোশাক পরে উগ্র হাসির ফোয়ারা ছড়াচ্ছে। 

কাদের বললো, ওদের লজ্জাহীন প্রগলভ আচরণ কিন্তু মন্দ না। চোখের আরাম দেখে। আমাদের ভেতরের অনেক মৌনতাও সাড়ম্বরতা পেয়েছে ওদের ছিনালীপনায়।

 

সারাদিন দর্শনীয় স্থান দেখলো ওরা। অজস্র ছবি উঠিয়েছে। সন্ধ্যা নামতেই এক মধ্য বয়েসী লোক এলো ওদের সামনে। বৈজ্ঞানিক চোখ তার। মেয়েদের প্রতি অতি ঔৎসুক্য বুঝতে পেরেই কাছে এসেছে। তারপর বললো, নিয়মিতই কি আপনারা ভ্রমণ করেন?

কাদের বললো, হ্যাঁ, নিয়মিতই। তবে এবারই প্রথম কোনো ট্রাভেল গ্রুপের সাথে এলাম। 

বুদ্ধিদীপ্ত চোখে চেয়ে লোকটি বললো, আচ্ছা। যদি কিছু মনে না করেন আপনাদের মধ্যের যে কারোর মোবাইল নম্বরটা দিতে পারেন আমাকে?

রিয়েল বললো, কারণ কী?

লোকটি বললো, কারণ কিছুই না। একসাথে দুইরাত, একদিন থাকছি। বন্ধনটা আরও দীর্ঘস্থায়ী করা যায় যদি এমনই উদ্দেশ্য আমার। না দিলে নেবো না।

সৈকত তার মোবাইল নম্বরটা দিলো আর বললো, সুপারভাইজারের কেউ হয়তো হবেন আপনি। উনার কাছে আমার নম্বর আছেই।

 

এরপর লোকটি করমর্দন করে বাসে উঠে গেলো। সুপারভাইজারকে বলে বুঝিয়ে থ্রি ফোর আর বি এর চারটি সিট নিলো ওরা। যেন পিছনে ফিরে কারও কোনো কাণ্ডকীর্তি দেখতে না হয়। ওরা ওদের রসনার স্বাদ, অধরের স্বাদ মিটাক। স্বাদ মিটুক, স্বাধ মিটুক। তারা কেন তা দেখে দেখে মনের জ্বালা আর পাপের বোঝা বাড়াবে! রাত চলে গেলো এক ঘুমে। ওরা নেমে পড়লো যার যার সুবিধা মতো স্থানে।

 

এরপর থেকে ওরা ছয়জন একখানে হলেই ভ্রমণের বাসের ভেতর ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা উঠিয়ে যুব সমাজ ধ্বংসের গল্প করে। 

হঠাৎ একদিন সৈকতের মোবাইলে ফোন এলো। লোকটি তাঁর পরিচয় দিলেন, সৈকত তাকে চিনতে পারলো। সাজেক ভ্রমণে যাচ্ছে। সৈকত বললো, আমরা ছাত্র। প্রতি মাসেই ভ্রমণ করা সম্ভব না। তাছাড়া এক্সপ্লোরার ট্রাভেল পেজেও তো সাজেক যাওয়ার বিজ্ঞাপন দেখলাম না।

লোকটি বললো, আমরা স্পেশালভাবে যাচ্ছি। আপনারা আমাদের সাথে যেতে পারেন।

সৈকত বললো, না, আমরা শীতকাল এলে আবার ট্যুর দেবো। 

লোকটি বললো, আপনি যেতে পারেন। বন্ধুদের সাথে নিলে উপভোগ করতে পারবেন না। আমরা আপনাকে সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্রমণসাথি দেবো।

 

সৈকত এমন অফার পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য। তারপর সব দিক বিবেচনা করে রাজি হয়ে গেলো।

সৌমেন দেবনাথ
কবি ও গল্পকার

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top