শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা
গল্প
কাঠফাটা রোদ
আনোয়ার রশীদ সাগর
গল্প
কাঠফাটা রোদ
আনোয়ার রশীদ সাগর
বিষন্ন দুপুরে উপুড় হয়ে সূর্যালো তার সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে, রৌদ্রময় করে তোলে শস্যময় উঠান। ঘুঘু বিরহ গাঁথা সঙ্গীত গেয়ে এগাছে– ওগাছে নেচে বেড়ায়, সঙ্গিনীর পিছু নিয়ে নিয়ে । ঘামঘন শরীরের গন্ধ ছড়িয়ে কৃষাণী, চিটেধানের চিটে ঝেড়ে ফেলে– ভিতরের দানাদার কিছু চাল খুঁজে খুঁজে ভারি ধানগুলো নিতে থাকে।
ঘামে ভেজা গামছা চিপতে চিপতে আসে আকরম। মাজা খাড়া করে ঘাড় পরিমাণমতো নিচু করে খোলার শক্ত মাটির কাছে ঠোঁট এনে জোরে ফুঁ দেয়। মাটির সাথে মিশে থাকা ধুলো ও ধানের কুটোগুলো সরে যায়। ঘামে ভেজা লুঙ্গি গুছিয়ে হাটুর উপর তুলে দু‘দাবনার মধ্যে চেপে ধরে বসে পড়ে চমনআরার পাশে। অনেকটা ন্যাংটিপরা সাগরপাড়ের বিদেশিদের মতো, পা থেকে উরু পর্যন্ত আলগা শুকনো ঠ্যাং দেখা যায় আকরমের। যে ঠ্যাঙে পরিমাণ মতো রক্ত নেই। ময়লা ও সাদাটে ধরণের রঙ।
চমনআরা কুলায় ধানঝাড়ার কটাশ কটাশ শব্দ করে, টুকা দিতে দিতে চোখের পলক কুলার ধানের উপর রেখে বলে,মিন্সী আর বসার জা‘গা পাইলু না। দূরো, সরে বস নানে।
আকরম বলে, ক্যারে নাকে গন্ধ বেশি লাগে?
– হ। গন্ধ ঘামের না,পরপুরুষের। ঘাম তো আমাগের জানের দরদ; ঘাম না ঝরলি দানাওয়ালা ধান পাবি কনে? গাঙের পানিত্ ভাইসি আসপিনি!
–তাহলি সইরি বসতি বলচিস ক্যারে? বলে আকরম চমনআরার গাঘেষে বসতে চেষ্টা করে।
চমনআরা আবারও দু‘হাত সরে গিয়ে কুলোর ধানের দিকে নজর দেয়।
ধানের খোলার পোয়াল গাদার আড়ালে বসতে চেষ্টা করে। এবারও আকরম সরে যায় চমনআরার দিকে।
চমনআরা গলা খেকিয়ে ওঠে,
–আরে মিন্সী গায়ের মদ্যি বসলি লোকে কি বুলবিনি?
আকরম ঘর্মাক্ত শরীরে চমনআরারে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে বলে,আমার জানে–রে আমি জড়িয়ে ধইরবু, তাতে কে কি বুইললু যায় আসে না–রে,যায় আসে না?
চমনআরা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সামনা সামনি দাঁড়িয়ে, মুখে শাড়ির ময়লা আঁচল দিয়ে ঢেকে বলে,মিন্সীর একটুও শরম নি।
আকরম রাগ দেখিয়ে বলে,তুই থাক তোর শরম নিয়ি।ঘাড় বাকা করে দক্ষিণে গাঙের দিকে চলে যায়।
চমনআরা আকরমের পিঠের উপর চোখের পলক রেখে, চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে। আকরম ধীরে ধীরে গাঙের গড়ানে নামতে থাকে। প্রথমে চওড়া পিঠ হারিয়ে যায়; তারপর খাড়াচুল ভরা মাথাও গাঙের ধারের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যায়। খাখা রৌদ্রের ঝিলিক চমনআরার চোখে জিকজাক খেলায় মেতে ওঠে।–
মিন্সিডা ভালুই। তো কাজ ভাতাইরি। শক্ত কাজ দেকলি পালায় আর পাছাভরা রাগ। একা একাই চমনআরা কথাগুলো বলতে থাকে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। গুমসো গরম। একটু আলোর ফুলকি দেখলেই উঁই পোকাগুলো উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে আত্মাহুতি দিচ্ছে।
ল্যাম্পের আলোয় আলোকিত করে লুকোচুরি খেলতে খেলতে পাখা ভেঙে ভেঙে পড়ছে আর উড়তে পারছে না। পাখাভাঙা উঁইপোকা গুলো মাটিতে বুক রেখে লাল পিপড়ার মতো দ্রুত এদিকেওদিক ছুটাছুটি করতে থাকে।
সারাদিন খাটাখাটুনির পর ওই রুইপোকার মতন আমাগের শরীলে আর জোর থাকে না। তকুন খিদেপেটে দৌড়ি বেড়ায় মাটেঘাটে। চমনআরার উঠানে দাঁড়িয়ে আকরম আলি এই কথাগুলো বলে। একটু গলায় জোর বাঁধিয়েই বলে। কারণ চমনআরার বাপ রুমজান আলি গত দুইমাস ধরে বিছানায় পড়ে রয়েছে। তবে বৃদ্ধের গলার জোর আছে,তেজও আছে শরীরে। আকরম আলিকে দেখলেই তেজ দেখায়,আমাগের চমনআরাগ দেকলি তোর আসতি মন চায়,স্যাটাভরা রাগ বাদদিগা, দুমুটো ভাত জোগাড় করগা,একখান ঘর তুলগা; তারপর আমার মেয়িকে বিয়ি করতি আসিস।
আজ সন্ধায় আকরমের জোরগলায় কথা বলার কারণ হচ্ছে, সে আজ বিকেলেই একখান দু‘চালা টিনের ঘর বানিয়েছে। সেই সাথে একখান চৌকিও বানিয়েছে ঘরটাও সুন্দর করে চাটাই–এর বেড়া দিয়ে ঘিরেছে। তাই আকরমের আনন্দ এবং বিশ্বাস এখন চমনআরার বাপজান বিয়েতে রাজি হবে।
( ২)
চমনআরা ও আকরম আলির বিয়ের দিন ঠিক হয়। আগামী শুক্রবার সন্ধ্যার পর তাদের বিয়ে হবে। আজ মঙ্গলবার। ভাদ্রের গরম ছাড়িয়ে মাঝে মাঝে আশ্বিনের হাওয়া বইছে,আশ্বিনের ঝাপটের ভয়ও রয়েছে। সে রকমই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রকৃতিও বেশ নিষ্ঠুর সাঝে সেঝেছে। বুধবার বিকেল থেকেই গুমসো গরম। গুড়ুম গুড়ুম মেঘ ডাকছে। ঝড়ো কোণায় মেঘ জমেছে। মেঘের নিচে বাঁকা রেখাটায় ধুলোবালির রঙে ফাটল ধরেছে। ঝড়োকোণা বলতে সকলেই পশ্চিম এবং উত্তর কোণাকে বোঝায়। সময় যত পার হচ্ছে তত ফাঁকা হচ্ছে নিচের দিকে। অনেকেই বলছে দুধে মেঘে ঝড়বৃষ্টি হয়। এখনই শুরু হয়ে যেতে পারে।
গোধূলির রঙহীন ঘনকালো সন্ধ্যা। কটাশে রঙের ফ্যাকাশে মেঘের তলা। সময় যত যেতে থাকে ততই নিকটে চলে আসে বাতাসের তীব্রতা। হঠাৎ ধূলো উড়িয়ে কয়েকটা পাক মেরে উধাও হচ্ছে বেয়াড়া বাতাস। তারপর কয়েক মিনিট নীরব হয়ে যায়। মেঘ ডাকতে থাকে জোরে জোরে। দড়বড়িয়ে বৃষ্টির ফোটা পড়তে থাকে। বৃষ্টি যত ঘন হয়ে আসে তত বাতাসের তীব্রতা বাড়তে থাকে। নীকষ আঁধারের মাঝে চলতে থাকে ঝড়ো বৃষ্টির আঘাত। এরমধ্যে কোনো ঘরে হয়তো ভয়ে কেউ আযান দিচ্ছে। আযানের শব্দ হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে থাকে।
প্রায়ই ঘণ্টা দুই পর নীরব হয়ে যায় আকাশ–বাতাস। শুধু মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চমকিয়ে আলোকিত করে তুলছে এলাকা।
সকালে গাঁয়ের মানুষের আহাজারি,কারো ঘর ভেঙেছে, কারো ফসল নষ্ট হয়েছে,কারো প্রিয়জন হারিয়েছে। ঝড়োমেঘের রাতে চমনআরাদের মাটির ঘরটি ভেঙে পড়েছে। সে ঘরের দেওয়ালের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে রুমজান আলি। চিৎকার করে কাঁদছে চমনআরা। গ্রামের মানুষের মন খারাপ। এরই মধ্যে দাফনের ব্যবস্থা করতে প্রতিবেশিরাসহ আকরম আলিও এগিয়ে আসে। আকরম আলির ছাপড়া ঘরটি উড়ে গেলেও তার তেমন কষ্ট ছিল না, তার কষ্ট চমনআরার জন্য। তার মনের কোণের আহাজারি তো শুধু আকরম আলিই বুঝতে পারে। পুরুষ মানুষের বুক ফাটে কথা বের হয় না,গুমরিয়ে মরে অথচ মেয়েরা চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে নিজেকে হালকা করে ফেলে।
খাটোয়ায় যখন লাশ তোলে তখন চমনআরা আকরম আলির ঘাড়ে মাথা রেখে জোরেশোরে কাঁদতে থাকে। প্রতিবেশি মেয়েরা চমনআরাকে ধরে, ঘরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আকরম আলি তার গামছায় নিজের চোখ মুছতে থাকে।
মানুষের মন বড়ো বিচিত্র। টুনটুনি পাখির মতো এডালে–ওডালে ছুটাছুটি করে। আগামী শুক্রবারে পশ্চিম পাড়ার সর্দারদের পাল্কিতে চড়ে , আঁহুউঁহু সুর করে, চমনআরা যেতো আকরম আলির বাড়িতে। এ রকমই কথাবার্তা হয়েছিল। অথচ সে পাল্কি যেন খাটুয়া হয়ে বাপজানের লাশ নিয়ে যাচ্ছে। চমনআরার মনও এরকম টুনটুনি পাখির মতো লাফালাফি করছে অথচ প্রকাশ্যে কান্না ও আহাজারিতে আশপাশের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।
(৩)
এক সময় গ্রামের মানুষ ও প্রতিবেশীরা মিলে খাটোয়াটা কাঁদে তোলে। সকলেরই মুখে সমস্বরে উচ্চারণ হতে থাকে লাইলাহা ইলাল্লাহু….. রাসুলুল্লাহ।
চমনআরাদের বাড়ি থেকে একদেড় কিলোমিটার দূরে গোরস্থান। পুরাতন গোরস্থান বলে বড়ো বড়ো গাছ এবং জঙ্গল রয়েছে এখানে। বেশির ভাগ কবরই বাঁশের কাবারি দিয়ে ঘেরা। দুএকটা কবর ইটসিমেন্ট বালি দিয়ে বেঁধে রেখেছে স্বজনেরা। তবে পুরাতন কবর বলে রঙ করা নেই। এ কবরস্থানে এলে অনুমান করা যায় সাড়ে চার হাজার গ্রামবাসীর মধ্যে গুটি কয়েক পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো। গ্রামের কৃষিজীবী মানুষের আর্থিক অবস্থা আরো খারাপ। দীর্ঘসময় বন্যায় ডুবে ছিল মাঠ–ঘাট। এরপরপরই খরা চলছিল। মাঠেঘাটে ডুবে ফসলাদি শেষ হয়ে গেছে। শেষ হয়ে গেছে ডুবানালাগুলোও,বেঁধে থাকা পানি পচে দুর্গন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ আশ্বিনের ঝাপটে আবারো গাছগাছালি ও কাঁচাপাকা বাড়িঘর ভেঙে নিঃস্ব করে দিয়েছে কৃষকদের। যারা জনখাটা তাদের অবস্থা চিরদিনই খারাপ। তবে বর্তমানে সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত অপরের বাড়ি কাজ শেষে, ঘণ্টাখানিক বিশ্রাম নিয়ে, বিকেলে পাখিভ্যান অথবা নসিমন–করিমন নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। রাত নয়টা–দশটা পর্যন্ত গাড়ি ভাড়ায় যা পায় তাতে ভালোই চলে শ্রমজীবীদের। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদেরই সমস্যা বেশি। তারা না পারে জনখাটতে না পারে রাস্তায় ভাড়ায় গাড়ি চালাতে। একধরনের মানসম্মান বোধ অথবা অহংকার তাদের মধ্যে কাজ করে। আর এ কারণে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়ছে এ ধরণের জনগোষ্ঠী।
গ্রামের মহিলাদের মধ্যে যখন কান্নায় ভেঙে পড়ছিল চমনআরা তখন চমনআরার মা কিরণবালা এসে, ‘আমার চমন–রে চমন‘ বলে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরে
কাঁদতে থাকে। আর একবার কান্নার স্বর জোরে উচ্চারিত হতে থাকে। যে সব মহিলারা একটুআধটু থেমে এদিকওদিক তাকিয়ে নিজ বাড়ির দিকে যাচ্ছিল তারা জোরে কান্নার স্বর শুনে আবারো ফিরে আসতে থাকে মরাবাড়ির দিকে। কানাঘুষা চলতে থাকে ‘ ও আল্লাহ এতো সেই কিরণবালা,চমনআরার মা ‘!
(৪)
রুমজান আলি যৌবনে খুব তেজি ও সুপুরুষ ছিলো। খুলনার নাঙ্গলবন্দে মুটের কাজ করতে গিয়ে নিয়ে এসেছিল কিরণবালাকে। কিরণবালা ছিল লাঙ্গলবন্দের মুটে সর্দারের মেয়ে। যে সর্দারের অধীনে কাজ করতো তার মেয়ে নিয়ে পালিয়ে আসার কারণে রুমজান আলি আর খুলনাতে কাজে যায়নি। গ্রামের মাতুব্বরদের সহযোগিতায় ধুমধাম করে, গ্রামবাসীদের খাওয়াদাওয়ায়ে, নিজ বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান করেছিল। গ্রামের মানুষের মনের মতো সাজসজ্জাও করেছিল। ব্যাপক দাপুটে রুমজান আলির নামডাক ভালোই হয়ে যায়। গ্রাম সংলগ্ন বাজারে ব্যবসা শুরু করে। সংসারও ভালোই চলছিল বেশ।
কিছুদিন যেতে না যেতেই কিরণবালার পেটে আসে চমনআরা। সন্তান আসার শুভসংবাদে খাসি জবাই করে গ্রামের এলিট শ্রেণীর মানুষদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে নামডাকের সাথে যোগ হয় খানদানি রুমজান আলি।
ফাগুনের এক জ্যোৎস্নারাতে পৃথিবীর মুখ দেখেছিল চমনআরা।
কিরণবালার ভোর হতো চমনআরাকে নিয়ে, আর রাত হতো রুমজান খানদানিকে নিয়ে। যৌনচাহিদায় ছিলো রুমজান আলির রাতের সঙ্গী। কোথায় যেন মিলিয়ে যেতে থাকে দু‘জনের ভালোবাসার আকাশ। মাঠের খরার মতো কাঠখোট্টা জীবন হতে থাকে। সকালে বের হয় আর রাতে বাড়ি ফিরেই কোলের মধ্যে চায় কিরণবালাকে। সদ্য সন্তান প্রসব করা ষোল সতেরো বছেরের কিরণবালা হাফিয়ে উঠতে থাকে। এদিকে সারাটাদিন কিরণবালা তার মেয়ে চমনআরাকে নিয়ে কাটিয়ে দেয় সময়। সময়ের মাঝেও সময় থাকে। সেই সময়ের একটু ফাঁকে আসে মকিত আলি। মকিত রুমজানের আলির খালাতো ভাই।
রুমজান যখন খুলনায় থাকতো তখন মকিতের কাছ থেকে একলাখ টাকা নিয়েছিলো, খুলনায় চাকুরী দেওয়ার কথা বলে। সে টাকাও দেওয়া হয়নি আবার চাকুরীও দিতে পারেনি। রুমজান আলির সর্দার সে টাকা মেরে দিয়েছে। সর্দারের মেয়ে নিয়ে আসার কারণে,সে টাকা চাওয়ার দুঃসাহস আর হয়নি।
এদিকে পাওনা টাকা নিতে আসার ছলে প্রতিদিনই আসতে থাকে মকিত। শুরু হয় কিরণবালার সাথে মকিতের মিষ্টিমধূর সম্পর্ক।
একপর্যায়ে চমনআরার বয়স যখন চার বছর তখন মকিত কিরণবালাকে নিয়ে চলে যায়। বাড়ি একা পড়ে থাকে চমনআরা। রাগ–ক্ষোভে ও দুঃখে রুমজান আলি আর বিয়ের পিড়িতে বসে না। গ্রাম ও বাজার ঘাটের মানুষের কাছে মুখ দেখাতে কষ্ট হয় রুমজান আলির। এতো শখের ও আদরের বউকে না পেয়ে, বাজারের পাশে তালের রসের তৈরি গ্রাম্য তাড়ি খেয়ে নেশায় ভুর হয়ে থাকে। চোখমুখ লাল হয়ে থাকে। কেউ কিছু বললেই ধমক দিয়ে ওঠে,চিৎকার করে। এভাবে রুমজান আলির ব্যবসাও লাটে ওঠে। তবে দরাজ কণ্ঠের হুংকার কমে না। ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষ ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সে।
আর্থিক অবস্থা ভেঙে পড়ায় এগারো বারো বছরে চমনআরা বেঁচে থাকার জন্য অন্যের বাড়ি কাজ করতে থাকে। ধানের খোলা,আখের খোলা ও গৃহস্থ বাড়িতে তার কাজ শুরু হয়। দূএকটা ছাগলও পালে। কিন্তু ছাগল বড়ো হলে তার বাবা রুমজান আলি বিক্রি করে দেয়। ওই টাকা দিয়ে মদ আর তাড়ির নেশা মেটায়।এভাবে চলতে চলতে একদিন স্ট্রোক করে রুমজান আলি। পড়ে থাকে বিছানায়।
( ৫)
শুরু হয় খরা ও বন্যার বছর। বন্যায় ডুবে পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আবার মাঠঘাট শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। রুমজান আলির চিরবিদায়ের কথা ভুলতে থাকে মেয়ে চমনআরা, ভুলতে থাকে গ্রামের মানুষও।
অভাব অনটন গ্রামের মানুষের মধ্যে। তারপরও বিয়ে বলে কথা। আকরম আলি তার বাড়ি সংলগ্ন মরা কাঁঠাল গাছটি বিক্রি করে লাল শাড়ি ও চুরিমালা কিনে আনে।
কিরণবালা শুকনো খড়ি কাকায় করে আসে মেয়ের বাড়ি এবং বাকে করে ধামায় চাল–ডাল নিয়ে হাজির হয় মকিতও।