শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪। অণুগল্প: অফিস- কাশফিয়া নাহিয়ান

Spread the love

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪

অণুগল্প: অফিস

কাশফিয়া নাহিয়ান

শব্দকুঞ্জ ঈদসংখ্যা-২০২৪

অফিস

কাশফিয়া নাহিয়ান

 

অবশেষে তুই চাকরিটা পেয়েই গেলি..

হ্যা… ঠিকই বলেছিস..সফল হলাম ফাইনালি…

এবার বার্গারের ট্রিট দিচ্ছিস মেনে নিলাম…পরের বার কিন্তু বড়সড় খাবারের ট্রিট দিতে হবে…

ওকে…কথা দিলাম..

ফাহমান হোসেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলোসফি থেকে অনার্স মাষ্টার্স করেছে। এতদিন সে একটা ভালো চাকরি খুঁজছিলো… শেষমেষ একটা টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি হলো তার।স্যালারি বেশ ভালো। বোনাস ও আছে।প্রমোশনেরও ভালো সুযোগ আছে।ফাহমানের সবচেয়ে ভালো লেগেছে জব এর টাইমিং টা… দুইটা থেকে দশটা… এমনিতেই সকালে দেরী করে ওঠার অভ্যাস তার…তাই এরকমই একটা জব খুঁজছিলো সে…আর যেহেতু সে মেসে থাকে কোনো সমস্যা হবে না…

তুই ঠিক আছিস তো বাবা?

আমি ঠিক আছি মা…চিন্তা করো না…

তুই খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করিস তো…একা একা থাকিস…কি করিস না করিস!

মা…আমি একদম ঠিক আছি… কোনো অসুবিধা নেই। তুমি ভালো থেকো। নতুন চাকরি তো তাই ছুটি নিতে পারবো না…যখন পারবো তখন দৌড়ে তোমার কাছে চলে আসবো…

ঠিক আছে বাবা ভালো থাকিস…

ওকে মা…বাই…

মা টা যে কেন এত চিন্তা করে বোঝে না ফাহমান..

দেখতে দেখতে চাকরিতে জয়েন করার তারিখ চলে এলো।ফাহমান প্রচণ্ড এক্সাইটেড তাই সে সময়ের একটু আগে ভাগেই অফিসে পৌঁছে গেলো।অফিসের পরিবেশ বেশ ভালোই লাগলো তার… সুন্দর সাজানো গোছানো যেরকম অফিস হয়… কিন্তু এ যেন তার চেয়েও সুন্দর…একদম ছবির মত।যেন শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা কোনো পোট্রেট…

এক্সকিউজ মি…আমি ফাহমান হোসেন..আজ আমার জয়েন করার কথা..

জ্বী… আপনি একটু বসুন…আপনাকে যথাসময়ে ডাকা হবে…

রিসেপশন থেকে ঘুরে এসে এক জায়গায় বসলো ফাহমান।চারপাশটা দেখতে লাগলো…সবাই যে যার মত কাজ করছে…দেখে মনে হচ্ছে কতগুলো রোবট অনন্তকাল ধরে কাজ করে যাচ্ছে…উফ!কি সব ভাবছে সে…

আপনার জয়েনিং লেটারটা প্লিজ…

রিসেপশনিস্ট এর আওয়াজে হুঁশ ফিরে এলো তার…

জ্বী..এই নিন…

আর দু কপি ফটো…

জ্বী…আমার কাছেই আছে…

জয়েনিং লেটার আর দুটো ফটো ফাইলে রেখে দিলো রিসেপশনিস্ট মেয়েটা।

ডান দিকের ঠিক সামনের কর্নারে আপনার ডেস্ক…ল্যাপটপে সব নির্দেশনা দেয়া আছে…

একটু অবাক হলো ফাহমান…অফিসে নতুন সে অথচ কেউ পরিচিত হতে এলো না… সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত…যেন কারো কিছু যায় আসে না কে অফিসে আসলো আর কে গেলো…ব্যপারটা খুব খটকা লাগলো ফাহমানের। ইমেইলে যেভাবে তাকে নির্দেশ করা আছে সব কাজ সেভাবেই করলো সে… শুধু কাগজগুলো স্টেপলিং করার সময় অসাবধানতা বশত আঙ্গুলটা কেটে যায় তার….

হঠাৎ তার দিকে সবাই একসাথে তাকালো…চমকে গেলো ফাহমান…সবার ঠোঁটে এক ক্রুর হাসি…কিছুই বুঝলো না সে… এখানকার সবকিছু কেমন যেন অদ্ভুত! আঙ্গুলের কাঁটা জায়গাটা অস্বাভাবিক ভাবে ব্যথা করতে লাগলো…

দুই মাস পর…

তুই তোর কথা রেখেছিস দোস্ত…হেটস অফ টু ইউ… চাকরির দুই মাস যেতে না যেতেই এত বড় খানা পিনা…ওয়াও…

তা তো দিতেই হবে… দুই মাস হতে না হতেই বোনাস প্রমোশন…একদম জ্যাকপট… খুব খুশী তাই না…

তোরা খুশী থাকলেই আমি খুশী…

কিছু খা ফাহমান… কিছুই তো খাচ্ছিস না…

এই তো খাচ্ছি…

চল সবাই মিলে সেলফি নেই।তোর তো আবার সেলফিতে এলার্জি…তাই তুই দূরেই থাক…

এক কাষ্ঠ হাসি হাসলো ফাহমান।

সবাই সেলফি নিতে ব্যস্ত…সোশ্যাল মিডিয়ায় ফটো আপলোড করতে ব্যস্ত। কেউ যদি খেয়াল করতো তাহলে বুঝতো সবার ফটো দেখা যাচ্ছে…শুধু ফাহমান ছাড়া…এই পৃথিবীতে তার কোনো অস্তিত্বই নেই… কেননা সে মৃত। অফিস তাকে সবকিছু দিয়েছে স্যালারি বোনাস প্রমোশন… শুধু ছিনিয়ে নিয়েছে তার মূল্যবান জীবন।

 

 

আমি কাশফিয়া নাহিয়ান। ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স মাস্টার্স। বর্তমানে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানীতে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত। লেখালেখি আমার প্যাশন। আমার স্বরচিত গল্প কবিতা বাংলাদেশী ও ভারতীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে
 ও সমাদৃত হয়েছে। “সাহিত্য পুরস্কার 

 

২০২৪”পুরষ্কারে ভূষিত। আমার ছোট গল্প “ফেরা” riyabutu.com ভারতীয় ওয়েবসাইট “ছোট গল্প প্রতিযোগিতা ২০২৩” হিসেবে নির্বাচিত।”ওমেন পাওয়ার এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৪” মনোনীত।”সেরা আবিষ্কার ২০২০” পুরষ্কারে ভূষিত। নিজেকে বিকশিত করে বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি আমার লক্ষ্য। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top