অণুগল্প: ভরসার বিচার- এহছানুল মালিকী

Spread the love

শব্দকুঞ্জ কাশবন সংখ্যা

অণুগল্প: ভরসার বিচার
এহছানুল মালিকী

অণুগল্প

ভরসার বিচার

এহছানুল মালিকী

 

লাল কাপড়ে পেঁচানো মূল রায়টি জেলারের হাতে পৌছে গেছে। বাকি শুধু ফাঁসির কার্যকারিতা। এরই মধ্যে জিসানকে জানানো হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার রাত ১২.০১ মিনিটে তোমার ফাঁসি কার্যকর হবে। শুনামাত্রই জিসানের মুখে মৃদ্যু হাসি। জেলার আশ্চার্য হলেন। জিজ্ঞাস করলেন আজও তুমি চুপ করে থাকবে? এই সাত বছরে তোমাকে যতদিন দেখতে আসলাম, ততবারই দেখলাম, হয় তুমি কোরআন পরছো, নয়তো নামাজরত। খুনের কারণটা জিজ্ঞাস করলেই নিশ্চুপ থাকো, নয়তো মাথা নত করে একইভাবে হাসো। আমরা সকলেই জানি তুমি তোমার গ্রামের চ্যায়ারমেনকে প্রক্যাশে খুন করেছো। কিন্তু তোমার কথাবর্তা ও চোখ দুটো বড়ই নিষ্পাপ। এতোদিনের ব্যাবহার ও তোমাকে দেখেতো কোনো ভাবেই আমার সাথে সকল কয়েদির মনে হয় না তুমি সেই ভয়ঙ্কর খুনি। আজতো কম পক্ষে আমাদের সত্যটা জানাতে তো পারো।

 

জিসানের চোখ বেয়ে অশ্রæ বইতে থাকে। দু’হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলি দিয়ে চোখ দুটো মুছে বলতে লাগেলো, আমি গ্রামের একজন খেটে খাওয়া মানুষ। জিবিকার তাগিদে প্রতিদিন যা উপার্জন করি তা আমার অন্ধ মা, স্ত্রী ও দু কন্যা সন্তানের আহারের ব্যবস্থা হয়। মাথা গুজার দুচালার ভিটি বাড়ি ছাড়া আমার আর কিছুই নেই।

 

জেলার- আচ্ছা তাহলে তুমি এই খুনের মধ্যে জড়ালে কিভাবে?

 

জিসান- খুনেরদিন দুপুরবেলা চেয়ারম্যানের ফসলি ধান উঠানে নিয়ে যেতেই দেখি তার চাচাতো ভাই দা দিয়ে কুপিয়ে তাকে খুন করে। সেও চেয়ারম্যানের মতোই প্রভাবশালী। একমাত্র আমি সাক্ষী থাকায় আমার মতো দূর্বল মানুষটিকে সে পুলিশে সোপার্দ করে, এতেও সে ক্ষান্ত ছিল না, কোর্টে দৌড়াদৌরিতে রত ছিল কতক্ষনে আমার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সে নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকবে। তার সম্পদের কাছে আমি অসহায়। অবশেষে বিচার, কোর্ট, আদালত, সমাজ, সংবাদ এসব আমার মতো দূর্বলের পক্ষে রায় দেয়নি। কিন্তু আমি উচ্চ আদালতে পিটিশন দায়ের করেছি। আমার উচ্চ আদালত হলো- আমার আল্লাহ্। উনি সবচেয়ে উত্তম পরিকল্পনাকারী।

 

বৃহস্পতিবার দিন সেই খুনি চাচাতো ভাই স্ত্রী সন্তানসহ স্পীট বোডে আনন্দ ভ্রমনে বের হয়। হঠাৎ বড় একটা জাহাজের সাথে ধাক্কা লেগে বোর্ডটি চূর্ণ বিচূর্ন হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই স্ত্রী, সন্তান মারা যায়। আহত অবস্থায় দ্রæত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। কয়েক ঘন্টা পর তার জ্ঞান ফিরে আসলে সে জানতে পারে- দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী সন্তান মারা গেছে। সেও বুঝতে পারে, তারও জীবন দ্রæত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এই ধন-দৌলত, ঘর-বাড়ি, ক্ষমতা কোনো কিছুই তার আর কাজে লাগবেনা। যে কোনো সময় সে মারা যাবে। সারাদিন বিছানায় চিন্তিতিত থাকে, নিজে খুন করে আরেকজনকে খুনের মামলায় ফাঁসিয়ে সে আল্লাহর কাছে এতো বড় পাপ নিয়ে কি ভাবে যাবে? মৃত্যু শয্যায় শুয়ে সে চীৎকার করে বলতে থাকে- জিসান  নির্দোষ। আর আমিই সেই খুনি।

 

জেলার সংবাদটি কোর্টের কাছে পৌছানোর পর কিছুদিনের মধ্যেই কোর্ট জিসানকে বেখুসুর খালাস দেন। জেল থেকে জিসান বের হয়ে হাসিমুখে তার পরিবারের সাথে চলে যাচ্ছে। জেলার তা দেখেন আর ভাবেন, দুনিয়ার আদালত শেষে নয়, তারপরেও একটা আদালত আছে।  

এহছানুল মালিকী। জন্ম ঢাকার মুগদাপাড়া। পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ বেতারে সংবাদ উপস্থাপনার পাশাপাশি তিনি ‘বাংলাদেশ প্রতিবেদনের’ একজন সিনিয়র সাংবাদিক। এছাড়াও এহছানুল মালিকী দৈনিক পত্রিকা, মাসিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখছেন।

প্রকাশিত উপন্যাস       : ভালোবাসার পাঞ্চক্লিপ।

ছোটগল্প                 : শক্তমাংস, ছায়াশত্রæ, গরম ভাত।

শিশুতোষ গল্প           : চকলেট আংকেল

প্রবন্ধ                   : ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।

 

অনুবাদ গ্রন্থ             : মুনশি প্রেমচাঁদের নির্বাচিত গল্প, মুনশি প্রেমচাঁদের ১০টি নির্বাচিত গল্প।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top