শব্দকুঞ্জ স্মৃতিময় আষাঢ় সংখ্যা। ওবায়েদ আকাশ এর একগুচ্ছ কবিতা

Spread the love

শব্দকুঞ্জ স্মৃতিময় আষাঢ় সংখ্যা

ওবায়েদ আকাশ এর একগুচ্ছ কবিতা

ওবায়েদ আকাশের একগুচ্ছ বর্ষার কবিতা

হাঁসের দেবতা ও বর্ষার লাশ

হাঁসের দেবতা; এবার মন্দিরের গহ্বর থেকে টেনে তুলছে

ভরা বর্ষার অক্ষত লাশ

শ্যাওলার ওম থেকে ঘাড় তুলে বড় হচ্ছে প্রাচীন জলাশয়

তার জলে ধোয়া দেহ

ভরা বর্ষার লাশের আড়ালে চাপা পড়ে আছে

হাঁসের দেবতা; হিমালয়ের মৃত বিষ খেয়ে

মন্দিরের বিশ্বাসের ভেতর আপাত ঘুমিয়ে পড়েছেন

তাকে ডাক পাঠিয়েছে বয়োবৃদ্ধ শ্মশানের মাছি

তাকে ডাক পাঠিয়েছে কম্পমান জলের মস্করা

হাঁসের দেবতা; তাকে টেনে তুলছে দুর্ধর্ষ মরাল সমিতি 

 

অভাব্য খরতায়

একলা আমার সময় ফুরিয়ে এলো

এবার দুজন হবো

আমার রচনাবলি এবার জানালার পাশে

মিহিনীল পর্দার ফাঁকে ভিজে যাবে আষাঢ়ের ঢলে

বৃষ্টি ও একা

আমরাই তারা, যারা যারা জীবনের অনেক গল্প করি

পরস্পর জেনে যাই দুজনের একলা ঘটনাবলি

বৃষ্টির প্রেসে উঠে ফি-সালায় জন্ম নেয়

পৃথিবীতে অজস্র নতুন কবিতা

আমরাই তারা একজন বৃষ্টি ও আরজন অভাব্য খরতা

প্রবল বর্ষণকালে দেখা হয় কবিতার নিঃসঙ্গ সভায় 

বৃষ্টি ও একা এবার দুজন হলে

শালবন ভরে যাবে একাকী জীবনের কত গল্পের চারায়

বৃষ্টির জনপদ

বৃষ্টির জনপদে শীতল বাতাসের শাড়ি, উড়ছে। ঝঞ্ঝা প্রতারিত মেঘ

রাত্রির প্রসন্নতর ঘুমে, স্পর্শের গহনতা হতে খড়ের চালার

ঔরসে ঝরে।… বৃষ্টির জনপদ

শিশু বয়সের ঘনার্দ্র নিশ্বাসের অধিক, সবুজাভ…

শালবন মুখরিত তালে বৃষ্টি। সায়াহ্ন শীতের অনুযোগগুলো বাঁশবন চুয়ে

শরাহত সৃষ্টির অতলে জড়ো হয়। বেদনাসম্মত মন

সাংসারিক বিশ্বস্ত জ্বরে, প্রিয়তম কান্নার দিকে ঝুঁকছে

উড়ে যাচ্ছে ধবধবে বৃষ্টিস্নাত শাড়ি…

পরিত্যক্ত পড়ে আছে শঠিক্ষেত। উচ্ছ্বসিত যুবতীকে

ভিজেচুল বৃষ্টির ভেতর উষ্ণতার রসদ সন্ধানে দেখা যায়

রবাহূত রাখালেরা বিদ্যুতাভ মেঘে অনর্থ বিমর্ষ ঝড়ে কম্পমান

বৃষ্টির জনপদ আরোগ্যের সমারোহে উজ্জ্বল

অথৈ শুশ্রুষায় সুমসাম অভিবাস ঝুমঝুম বর্ষণমুখর

পরিচয় হারিয়ে গেলে

গগনে তোমার দেখা

এসেছি উল্টেপাল্টে দেখবো চাঁদ, মৌন ব্যাকুলতা

হাঁড়ির গভীরে লুক্কায়িত ওমে ঘনঘোর বর্ষার মূর্ছনা নাই

অথচ অলকানন্দায় ভেসে

একদিন দ্বিধান্বিত তটে কলসিতে ভর দিয়ে ডুবসাঁতার

করেছি গণনা!

এসেছি যে, অবাক টানা বর্ষণের রাতে আমরা তো

মুখোমুখি বিভাজিত ছায়া দেখা হোক

কী করে ফুরিয়ে যাই গগনমুদ্রায়

রূপের গরিমা ভেজা রাতে

পৃথিবীতে ফেলে যাই কদমের নিভৃতি ছুঁয়ে ঝুলে-থাকা

বাতাবি শৈশব

জীবাণু-নিবারক রোদে শুকাতে দিয়েছি সুখ

এ পুণ্ড্র নগরে কাঁদে শরাহত কামজ তানানা

এসেছি যে, বিধু সে জানে না কলা

মেঘের চাতুরি তাকে কতোটা শেখাতে পারে

দ্রাক্ষার্দ্র যক্ষপ্রিয়া বোধ, বিরহ বিদগ্ধ প্রেম

দেখা হোক দেখা হোক

গগনে তোমার দেখা

নদীগুলো কম্পমান রজস্বলা শেষে

এসেছি যে, পরিচয় হারিয়ে গেলে কী নামে খুঁজবো বলো

এ-সালের নাজুক-বর্ষায়!

দেখা হোক

বর্ষার যাত্রী

মেধাবী বৃষ্টিতে ভেজে

গাঁগঞ্জের তুখোড় ছাত্রী

গতজন্মে কাদামাটি মেখে

তুমি আমি আজ

তুমুল বর্ষার যাত্রী

সবুজ পত্রালি

সবুজ গাছটি বাসুদেব লাগিয়েছিল বিগত বরষায়

এবার বৃষ্টিতে তাতে অঢেল পত্রালি

শ্যামলকে বলেছিল: জল ঢেলে বুঝে নিবি নবীন হিসাব

শ্যামল তো জানে নদীগুলো ভরে গেছে উজানের ঢলে

তার নদী আঁকাবাঁকা, কিছুই বোঝে না ওই পাতাদের মানে

যখন বর্ষায় ফেরে বাসুদেব, সবুজ আঙিনা ঘেঁষে নদী বয়ে যায়

নদীর শরীরে এত বঙ্কিমতা আঁকা, পরাপাঠ ডাইনে ও বামে

সতেজ অধরে কিছু ঝুলে আছে পেঁপে-করমজল

যাবার সময় হলো বাসুদেব, রেখে যাবে এইসব অতুল সম্বল

আকাল বর্ষার দেশে এই মতো মায়াবিনী নদী

যদিবা শুকিয়ে থাকে ব্যাপক খরায়, কার কিবা এসে যায়

বাসুদেব? জানা যায়, রোপিত বৃক্ষের ডালে

হাহাকার ঝুলে আছে একালের বিস্ময় দ্বিধায়

ধীরেন্দ্র আর ভুশার নস্টালজিয়া

‘ধিরে, সুখ নাই।’

[ভুশার একমাত্র ঘোড়াটি গতরাতে চুরি হয়ে গেছে। কিংবা ধারণা করা যায়, এ মুষল বৃষ্টিতে ঘোড়াটির দুরন্ত শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়।]

‘কেন?’ বলল ধীরেন্দ্র।

আবার ধীরেন্দ্র কয়, ‘তোর থেকে ত্রি-দন্ত চতুর কেউ একজন ঘোড়াটির আজকাল খোঁজখবর নেয়।’

‘ধিরে, এখন কী করি?’

‘যত দূর জানা আছে, তার কিছু তথ্য বের করি।’

[তথ্যে বেরিয়ে পড়ে, এ ভরা শ্রাবণে, তিনিও ঘোড়ায় চেপে হঠাৎই ছুটছেন নাকি সোমত্ত কৈশোরের দিনে।]

‘মাঝি, কোন ঘাটে ভিড়বে তোমার তরী?’

[নদীতীরে ধীরেন্দ্র আর ভুশা, তাদেরও শৈশবের দু’টি টিকিট যদি মেলে!]

মাঝি বলে, ‘আপনারা ব্যাটা নাকি ছেলে?’

এ ওর দিকে চায়, তারপর ধীরেন্দ্র বলে ‘মুশকিলে পড়িলে ভুশা, মাঝিও মনের কথা রঙ ধরিয়ে বলে।’

প্রণত আষাঢ়ে

সাধ আহ্লাদ থেকে একটুআধটু মাদুরের ওপর

ছড়িয়ে নিয়ে বলি : তাণ্ডব চালিয়ে যাও

রণাঙ্গনে ক্লান্ত ঘর্মাক্ত দেহে ঊর্ধ্বমুখে জল খেতে চাইলে

কেউ একজন পাঠিয়ে দেবেন বৃষ্টির ধারা

আমাদের চেনা আকাশ থেকে শকুনেরা পালিয়ে গেছে কবে

চামচিকের ঠোঁটে খণ্ড  খণ্ড  মেঘ ঘরময় পায়চারি করে

বর্ষণের নিরাপত্তা নিয়ে কারও কোনো উৎকণ্ঠাই নেই

এ মুহূর্তে দীর্ঘদিনের জমানো সাধ আহ্লাদে ফাটল কিংবা

বিভাজন কারও কাম্য হতে পারে না

বিভাজিত ক্ষতে সবাই আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে

মাঝামাঝি বসে কালার বাঁশি সুর তুলতে পারে

হুক্কাহুয়া শেয়ালের ডাক মধ্যরাতের সাধ আহ্লাদে শুধু

আতঙ্কই ছড়িয়ে দিতে পারে

বিভাজন ক্রিয়াটা বুঝে না বুঝেই চাপিয়ে দিয়েছি

অখণ্ড  সাধ আহ্লাদ থেকে কোনোই সদুত্তর মিলছে না

নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকারে মাতাল হয়ে যারা চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে

দেখি তারা কী বলে

অন্যথা প্রণত আষাঢ়ে

একা একাই তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে দেখানো যাবে 

বর্ষণধারায়, প্রাণান্ত জীবনে

বৃষ্টিধারায় অবগাহনের প্রথম আনন্দ উপভোগ করেছিলেন আদম এবং ঈভ

বৃষ্টিতে ডোবা বন্যাদুর্গত, প্রথম দুর্যোগকবলিত অসাহয়ত্ব

অনুভব করেছিলেন আদম এবং ঈভ

জানা যায়, জ্বীন বংশোদ্ভূত ইবলিশই নাকি তার একমাত্র ষড়যন্ত্রকারী!

মানুষের মতো জ্বীনকেও পরম যত্নে সৃষ্টি করেছিলেন ঈশ্বর

মহান স্রষ্টার হুকুম ব্যতীত গাছের পাতাও নড়ে না

আদেশ অমান্য করায় ঈশ্বরের ঐশ্বর্য হতে খসে পড়ল উজ্জ্বল দুটি তারা

স্বর্গের উদ্যান হলো খা খা, আহা অমৃত, তুমি প্রভুর নিষেধাজ্ঞার চেয়ে গ্রাহ্যকর!

স্বর্গে যা নেই, তা কি সদাই বিদ্যমান এই পৃথিবীতে?

স্বর্গে যা আছে, তার করুণ অনুপস্থিতিজুড়ে তুমি স্বর্গীয় উদ্যান?

প্রবল বৃষ্টির তোড়ে যে নৌকাটি ডুবে গিয়েছিল, কে তার ষড়যন্ত্রকারী?

আর যারা ডুবে-মরে ভেসে ভেসে স্বর্গে চলে গেল, কে তার আহ্বানকারী?

অন্তত আদম তো জানে, স্বর্গের এত এত পাতা, অথচ

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াবার এক টুকরো ভূমিও তাতে নেই!

আরো জেনেছিল, যেখানে হাহাকার নেই, বৃষ্টির অন্ধকার নেই

সেইখানে পাশা খেলার আনন্দ কেবল বর্ণিল রাঙতায় মোড়া!

কোনোই হারজিত তাতে নেই

বৃষ্টির কোমর ভেঙে গেলে, কোথায় যে পড়ে কোনো হিতাহিত থাকে না!

ডুয়ার্স, চেরাপুঞ্জি ছাপিয়ে তারা সুনামগঞ্জ, উপশহর যায়!

লক্ষাধিক মানুষের হাটে আকাশ ফেটে নেমে আসে রক্তধারা

একজন জ্বীন বংশোদ্ভূত ইবলিশ প্রভুর আশীর্বাদ বঞ্চিত হয়েও

মানুষের জন্য কী প্রবল বন্যানিয়ন্তা হয়! বাড়িঘর ভেসে যায় বৃষ্টি-বন্যা মুদ্রায়!

ওবায়েদ আকাশের জন্ম : ১৩ জুন ১৯৭৩; সুলতানপুর, রাজবাড়ী। একাডেমিক 

পড়াশোনা : বাংলা ভাষা  সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।
পেশা : গণমাধ্যমে চাকরি। বর্তমান কর্মস্থল : দৈনিক সংবাদ। প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা :
কবিতা, অনুবাদ, গল্প, প্রবন্ধ, সম্পাদনা মিলিয়ে ৩৭টি।

কাব্যগ্রন্থ:
পতন গুঞ্জনে ভাসে খরস্রোতা চাঁদ (২০০১), নাশতার টেবিলে প্রজাপতিগণ (২০০৩), দুরারোগ্য বাড়ি (২০০৪), কুয়াশা উড়ালো যারা (২০০৫), পাতাল নির্মাণের প্রণালী (২০০৬), তারপরে, তারকার হাসি (২০০৭), শীতের প্রকার (২০০৮), বিড়ালনৃত্য, প্রেতের মস্করা (২০০৯), যা কিছু সবুজ, সঙ্কেতময় (২০১০), প্রিয় কবিদের রন্ধনশালায় (২০১১), শুশ্রূষার বিপরীতে (২০১১), রঙ করা দুঃখের তাঁবু (২০১২), বিবিধ জন্মের মাছরাঙা (একটি দীর্ঘ কবিতা, ২০১৩), তৃতীয় লিঙ্গ (কয়েকটি দীর্ঘ কবিতা, ২০১৩), হাসপাতাল থেকে ফিরে (২০১৪, কলকাতা), ৯৯ নতুন কবিতা (২০১৪), পাতাগুলি আলো (২০১৬), তথ্যসূত্র পেরুলেই সরোবর (২০১৮), সর্বনামের সুখদুঃখ (২০১৯) এবং পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর (২০২০)

কাব্য সংকলন:
ঋতুভেদে, পালকের মনোবৃত্তিগুলি (কাব্য সংকলন, ২০০৯), স্বতন্ত্র ৬০টি কবিতা 

(কাব্য সংকলন, ২০১০), ওবায়েদ আকাশের কবিতা  আদি পর্ব (কাব্য সংকলন, ২০১১), উদ্ধারকৃত মুখমণ্ডল (বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নির্বাচিত কাব্য সংকলন, ২০১৩), মৌলিক পৃষ্ঠায় হেঁয়ালি (কাব্য সংকলন, ২০১৭, কলকাতা), বাছাই কবিতা

(২০১১থেকে২০১৮ পর্যন্ত নির্বাচিত কাব্য সংকলন, ২০১৮), স্বতন্ত্র কবিতা (স্বতন্ত্র 

কাব্যসংকলন, ২০১৮), শ্রেষ্ঠ কবিতা (কলকাতা, ২০১৯)

Translated Book (Poetry Collection)
Faux Assassin
Translated by : Ashoke Kar, Haikal Hashmi, Mahfuz Al-Hossain, Razia Sultana and
Kamrul Hasan. (2019)

শিশুতোষ গ্রন্থ : ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ, ২০১৯

অনুবাদ:
ফরাসি কবিতার একাল / কথারা কোনোই প্রতিশ্রুতি বহন করে না’ (২০০৯)
জাপানি প্রেমের কবিতা / এমন কাউকে ভালোবাসো যে তোমাকে বাসে না’ (২০১৪)

গদ্যগ্রন্থ :
ঘাসের রেস্তরাঁ’ (২০০৮),
লতাপাতার শৃঙ্খলা’ (২০১২)

সম্পাদনা গ্রন্থ :
দুই বাংলার নব্বইয়ের দশকের নির্বাচিত কবিতা’ (২০১২),
পাঁচ দশকে বাংলাদেশ : সাহিত্য সংস্কৃতি সমাজভাবনা (বিশিষ্ট কবি লেখক বুদ্ধিজীবীর সাক্ষাৎকার সংকলন, ২০১৮),

সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন :
শালুক (১৯৯৯–)

পুরস্কার :
এইচএসবিসি–কালি  কলম তরুণ কবি  লেখক পুরস্কার ২০০৮
কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি  গবেষণা কেন্দ্র পুরস্কার ২০০৯
লন্ডন থেকে প্রাপ্ত সংহতি লিটারারি সোসাইটি বিশেষ সম্মাননা ২০১২
কলকাতা থেকে ঐহিক মৈত্রী সম্মাননা পদক ২০১৬

যোগাযোগ:

 

email : oakash1971@gmail.com

ওবায়েদ আকাশ
কবি ও সম্পাদক

শব্দকুঞ্জ স্মৃতিময় বর্ষা সংখ্যা। ওবায়েদ আকাশ এর একগুচ্ছ কবিতা

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top