শব্দকুঞ্জ স্মৃতিময় আষাঢ় সংখ্যা। বঙ্গ রাখাল এর একগুচ্ছ কবিতা

Spread the love

শব্দকুঞ্জ স্মৃতিময় আষাঢ় সংখ্যা
বঙ্গ রাখাল এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ স্মৃতিময় আষাঢ় সংখ্যা

বঙ্গ রাখাল-এর গুচ্ছ কবিতা

উড়ে যাওয়া নিমগ্নতায়…

আমার বৈকালীক অসুখটা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নিজের চেনা মানুষকে ভুলে অচেনাকে অনেক বেশি চেনা চেনা লাগছে মাঠের গরু, পিছু পিছু ধেয়ে আসা মেঘ, বাড়ির পালানে জন্মানো সবজিকে নিজের স্নেহাতুল দৃষ্টি দিয়ে ভালবাসতে ইচ্ছে করছে। কি করি বলুন তো মশায় কোনদিন করুণ চোখে দেখিনি যে নারীকে তাকেও কাঙালের মতো ফুটফুটে ব্যথা নিয়ে দেখতে এবং ভালবেসে নদীর দিকে চেয়ে থাকতে মন চাচ্ছে… শূন্য করে যে দৃষ্টি একদিন দেখেছিল তোমার শরীর, আকৃষ্ট করেছিল সবুজাভ গোপন বুকে জন্মানো রহস্যের অতলে দিনকে দিন বর্ষাকান্দনে তোমার ভিতরে খুঁজে পেয়েছি ধাবমান বিকেলের অসুখ এই উদাসিনতা আমার চিরদিনের না হলেও মৃত্তিকার শরীরে এক কিংবা অধিক জীবনের বহুনারী সঙ্গম…

 

মনের মধ্যে বয়ে যাওয়া এক  স্বচ্ছ সকালের গল্প লেখব বলে তোমার জীবনে অনেক গল্প নিজস্ব সময়কে ধারণ করে হয়ে ওঠে আমার বিজনমুখর দিনের এক ঝাঁক আহত বকুলের দল অধিক বেদনায় নাম লেখায় সেনপালায় আর দূর হতে দূরান্তের বন্ধুরা দুঃখ কিনে নিজের জীবনে বাজায় দগ্ধতার সাইরেন…

 

সুন্দর একখানা মুখের দিখে এক স্বপ্ন অধিক সফলতায় সাজিয়ে তুলেছিল ধ্বংসস্তপের খেয়ালী দীর্ঘতাররাত তোমার চোখের কোণে আজ কিছুটা গরিমসিতার আপছাআলো মুছে দেয় করুণকান্না তবু এসো বিষণ্ন দিনেও লিখতে বসি শোকগাথা। এসব শোকগাথা কবিজীবনে নেমে আসুক আর শরীরে নারীর গন্ধ মেখে কবি সুখে-দুখে মশগুল থাকুক উড়ে যাওয়া নিমগ্নতায়…

 

হাসপাতাল

যে যায় সেতো চলেই যায়আমিও চলে যেতাম সব ছেড়ে কিন্তু আমায় তো আছে পিছুটান। সেই দুঃখে পারি না তোমাকে ছাড়তেবলতে পারি নামহারাজ বিদায়; আমার অনেক কাজ। অনেকের সাথে আড্ডা আছে, সেমিনার, মিটিং, সভা আরও কত কী? বাড়িতে বয়ষ্ক মা, বোনদের কষ্টে ভাসে বুক, বাবার হাপানি, একবেলা খেলে অন্যবেলা থাকে উপস। মাসীমাও এসেছে এই দুঃস্থ হাসপাতালেবর্ষার জলে ভেসে গেছে মেসোর পুকুর…

 

লুণ্ঠন হয়েছে বিবেক পুষ্পের সৌরভ বাড়ে হারিয়ে গেলে… নিঃশব্দে বিছানায় পড়ে থাকে দাদু। চুলের স্তরে খুসকিতে ছেয়ে গেছে মাথা আকাশে মেঘ আমাদের মনেও জমেছে মেঘকল্পনায় কত না প্রাসাদ আসমানধরারআসমানী কল্পনা। অথচ আমরা এক হাসপাতালে আছিবিপ্লব অনেক দূর… জীবন যেন চলতে চলতে থমকে গেছেএগোয়নি…তবুও তোমাকে দেখি আর নীরেন বাবুর কবিতা পড়ি

‘তারই মধ্যে আমি দেখেছি তোমাকে যে,-তুমি,

হাত রেখেছো কাঁটাতারে, চোখ রেখেছ উন্মুক্ত আকাশে।’

বৃষ্টি নামে রোগ অথবা শোক

অবাক হওয়ার নেইতো কিছুরোদ্দুর ফুরিয়ে গেলে

ছুটে আসে বৃষ্টি নামের মেয়েকি ঘামে কি বা গন্ধে।

ছলছল দিনেও বুকে রপ্ত করেছি হারিয়ে ফেলার রোগ

শোকও বলতে পারিমায়ার অন্তরালে হাহাকার লেপ্টে থাকে।

 

বাইরে বৃষ্টি হলেআমিও তোমাকে দেখতে পাই

ভেতরে ফুটে ওঠে রঙথইথই অসুখে ভরে ওঠে মন

বৃষ্টির সাথে বছর দুয়েক হল মখমল হাওয়াই শুয়ে

শুকিয়েছি ধ্বংসাত্মকঅদৃশ্যের পৃথিবী।

 

চিঠি

কতদিন হয়ে গেল, চিঠিটা এলো না। বোধ হয় এবার ভালো থাকাও হলো না। অনেক দিনের পুরানা চিঠি। গল্পের ছলে কবিতা পড়ি। চিঠির লাইনও মনে নেয়, সেলফোন বাজে… বৃষ্টির রাতে বার্তা আসে চিঠি আসবে না। চিঠিটা রাজনীতির রঙ মেখে বৃষ্টিবিলাস করছে… আজ তার আসার পথ কর্মাদাক্ত। সে আসতে পারবে না, পথের মাঝে বৃষ্টির জল ঝরছে। বৃষ্টি মানে রাজিয়া কিংবা রোজিনা বা আফরোজা

বৃষ্টির

       আসা

              হলো

                     না

আমার ও হলো না বাঁচা…

খুব ক্লান্ত খুন আলগোছে ছড়িয়ে দেয় ক্ষমতার জাল।

বৃষ্টি

বিদীর্ণ আকাশ তোমার ঘৃণা

বুকে চেপে হয়ে উঠেছে মেঘাচ্ছন্ন

উপকথায় তুলসী কাকের কথা শুনেছো বুঝি

নিজের দেহ নিজেই খেয়ে হলেন হন্তারক

বিয়োগ ব্যথায় ঝরারে অশ্রু

 

সেই থেকে শুরু হল বৃষ্টি…

বঙ্গ রাখাল  কবি ও গবেষক।  জন্ম : ১২ জুন, ঝিনাইদহ।

শিক্ষা : ঝিনাইদহের বসন্তপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, দুঃখী মাহমুদ ডিগ্রী কলেজ (ঝিনাইদহ) থেকে এইচ.এস.সি। সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে স্নাতক (সম্মান) এবং একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা স্কুল অফ ইকনোমিকস থেকে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ইকোনমিকস ডিগ্রী। গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থেকে গণহত্যার উপর পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী অর্জন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সদস্য।

কর্মজীবন : লক্ষ্মীপুর, ভবানীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের বাংলার প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে তিনি সমাজসেবামূলক একটা বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত।

প্রকাশিত গ্রন্থ : সংস্কৃতির দিকে ফেরা (প্রবন্ধ, ২০১৫), লোক মানুষের গান ও আত্ম অন্বেষণ (গবেষণা, ২০১৬), মানবতাবাদী লালন জীবন অন্বেষণ (প্রবন্ধ, ২০১৭), হাওয়াই ডাঙ্গার ট্রেন (কবিতা, ২০১৮), মনীষা বীক্ষণ ও অন্যান্য (প্রবন্ধ, ২০১৮) , অগ্রন্থিত রফিক আজাদ (সম্পাদনা, ২০১৯), পাগলা কানাই ও তাঁর তত্ত্ব দর্শন (সম্পাদনা, ২০১৯), লণ্ঠনের গ্রাম (কবিতা-২০১৯), যৈবতী কন্যা ইশকুলে (কবিতা-২০২০), ছোটবোয়ালিয়া-জয়ন্তীনগর-বসন্তপুর গণহত্যা (অভিসন্দর্ভ),

 

সম্পাদিত ছোট কাগজ :  নিহারণ, বঙ্গস্বর, শঙ্খধ্বনি, শব্দকুঠি ।

বঙ্গ রাখাল
কবি ও গবেষক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top