শব্দকুঞ্জ স্মৃতিময় আষাঢ় সংখ্যা। শাহ্ কামাল এর একগুচ্ছ কবিতা

Spread the love

শব্দকুঞ্জ স্মৃতিময় আষাঢ় সংখ্যা
শাহ্ কামাল এর একগুচ্ছ কবিতা

শব্দকুঞ্জ স্মৃতিময় আষাঢ় সংখ্যা

শাহ্ কামালের একগুচ্ছ বর্ষার কবিতা

কদম্ববিহনে

আষাঢ়স্য আকাশ ফুঁড়ে মেঘফুলের উল্লাস
অথচ তোমার সাড়া নেই—
ওহে মেঘাগমপ্রিয়, ওহে ললনাপ্রিয়
এসো, এসো…

সাতনরি হারের রংধনু তুমি—
ঝুমকো জবা বৃষ্টির ঝমঝমাঝম শব্দমাতম
তুমি দূর দ্বীপবাসিনী,
চিনি তোমারে চিনি
দারুচিনিরও দেশে,
তুমি বিদেশিনী গো
সুমন্দ ভাষিনী…

আষাঢ়স্য দিগন্তজুড়ে নীলঘণ মেঘের মালবিকা বলাকা
অথচ তুমি নেই—
ওহে কর্ণপূরক, ওহে ভৃঙ্গবল্লভ
এসো, এসো…

এই দিগন্তজোড়া শীতল হোক, শান্ত হোক,
এই হৃদয়জোড়া স্থির হোক, নীরব হোক
দেখি তোমার নৃত্যছন্দ
ভাজ খোলো আনন্দ দেখাও
করি প্রেমের তরজমা…

আষাঢ়স্য পুচ্ছপুচ্ছ মেঘে ঝংকার তানসেনী সেতারা
অথচ তোমার ইশারা নেই
ওহে সিন্ধুপুষ্প, ওহে বৃত্তপুষ্প, ওহে পুলকি, সর্ষপ, প্রাবৃষ্য
এসো, এসো…

তুমিই কালিদাসি বর্ষার দূত,
গোপন প্রিয়ার সুর-লহরি মেঘমল্লার,
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে
জানি নে, জানি নে
কিছুতেই কেন যে মন লাগে না…

আষাঢ়স্য নভঃ জুড়ে মেঘ-হাওয়া কালভৈরবী
অথচ তুমি শূন্য —
ওহে সুরভী, ওহে নীল, ওহে নীপ, ওহে মঞ্জুকেশিনী
এসো, এসো…

১৬ই জুলাই ২০২৫, ফতুল্লা

 

শহরের কার্নিশে গ্রামীন
প্রেম

যখন তোমার উঠানে গিয়ে দাঁড়ালাম
তখন এক সেশন মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে থেমেছে
একটি হাঁস উঠানের এককোন থেকে আরেক কোনের দিকে হাঁটছে
আশপাশেই আছে আরেকটি হাঁস
তার কন্ঠ শোনা যাচ্ছে।

বাঁশগাছের ছায়ার দাঁড়িয়ে
যখন বাঁশফুল হাতে তুলে নিতেই
দেখি বাঁশের ডগায় একটা ঠ্যাংভাঙ্গা দোয়েল বসে আছে
কি একটা যেন খোঁজছে
এদিক ওদিক
কোথায় হারালো প্রিয়তম সে…

নদীটি ভরা কলসির মতো টলমল
ঘোলাটে জলের ভাষায় শীৎকারের ধ্বনি
একটা মাছরাঙা পাখি ভেঙে দিয়েছে তার গোঙানি
গোঙানির শব্দ উঁকি দিয়েছে
শামুকের ঘরে
সাদা সাদা শামুকের ডিম ফুটে আছে চিকচিকে জলের পাড়ে…

কৈ মাছের কাঙখোয়া ইশারায় শিষ দিয়ে
বাণ কেটে দিয়েছে
স্বপ্নের মৎস্য খামার
কি খাল, কি পুকুর, কি বিল, কি বা নদী সব একাকার
তার মাঝে ঢোলকলমির পাতা হাত নাড়ে
কথা কয়
ডুবে যাওয়াই প্রকৃতি
চাঁদ ডুবে যায় একা একা ঘুরে নিশিরাতের প্রহরে…

তখন টেলিভিশন সম্প্রসারণ করছে রাগভৈরবীর গান
তুমি ছিলে কি না জানি না, জানি না, জানি না
আমি ছিলাম, আমি আছি, আমিই থাকবো
একটা ইঁদুর দৌড়ে গিয়ে লুকালো একটা গর্তের দিকে
তখন মুষলধারে বৃষ্টি চলছিল আবার…

 

বৃষ্টি

বৃষ্টি হচ্ছে
বৃষ্টি
আষাঢ়ে বৃষ্টি
শুধু তুমি নেই বৃষ্টির ক্যাম্পাস জুড়ে…

মাঠের দূর্বাঘাসের ডগায়—
বৃষ্টির ছন্দ দেখলেই
তোমার ভেজা পায়ের কথাই মনে পড়ে
শুধু পা নয়—
তোমার পায়ের নূপুর ভিজে যায় বৃষ্টির শব্দে…

চিলেকোঠার পাশে—
শহুরে ছাঁদজুড়ে
বৃষ্টি ঝরতেই
আমার খোলা নদীর বুকের কথা মনে পড়ে যায়
শুধু বুক নয়—
বুকের কাঁটাতারে অন্তবাস ভিজে যায়
বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায়…

বৃষ্টি—
তুমি এত রোমাঞ্চ কোথায় পেলে?
কে দিয়েছে তোমাকে এমন অবাধ পাসপোর্ট?
সবকিছু ছুঁয়ে যাও—
একূল ওকূল
অবলীলায়!
আমি কি বৃষ্টি হতে পারি না—
আমি কি বৃষ্টি হতে বারণ?
আমি বৃষ্টি হতে চাই—
তোমার চোখের পাতা ছুঁয়ে
তোমার গাল, চিবুক, গ্রীবা, ছুঁয়ে
ভিজে যাক তোমার ভেতর বাহির পুরো পৃথিবী
প্রিয়তমা।

 

জন্ম

রক্ত আর রক্তগঙ্গার ভেতর থেকে
নৌকা সাঁতরে
ডাঙ্গায় উঠার পূর্বেই
দেখি—
ডাঙ্গা নিলাম হয়ে গিয়েছে নিরানভুমির কাছে
কোনো বৃক্ষ নেই
সাহারা, সাহারা সবটুকু
এখানেই তো ছিলো—
গ্রীষ্মের দুপুরে লাল রক্তিম হয়ে ফুটে থাকা একগুচ্ছ শিমুলের বসবাস
নেশা নেশা ধরা কন্ঠ তাঁর
আকাশটা বুঝি গিলেই খাবে এমনি চক্ষুরাগ তাঁর সুরে—
তাঁর পাঁপড়ির শিরায় শিরায়।

নভোথিয়েটারের নরম নরম শরীর বেয়ে—
কোনো জল মাটিতে নোঙ্গর ফেলছে না
মেঘের কাছে কোনো প্রশ্ন জমা নেই
মেঘ ডাক পাঠাচ্ছে দূরের বাতাসের কাছে
নির্বিঘ্ন বাতাস—
আহত ডাহুকের মতো
গোঙ্গাচ্ছে
ছেঁড়া পাল ছিঁড়ে যায়—
নীপবনে
শরীর জুড়ে তাঁর কাচিহলুদের ছোঁপ ছোঁপ দাগ।

আমি জানি—
অক্সিজেন আর হাইড্রোজেন কতটুকু মিশালে
একখন্ড মানবজমিন হয়
আমি জানি—
কতটুকু সেচ দিলে সোনার ধানে ছেয়ে যায়
দিগন্ত বিস্তৃত মাটির বুক

শহরের কার্নিশকে ভালোবেসে—
ক্যাকটাস
নিলাম করেছে
গ্রামের ফজল মাঝির মতো সবটুকু যৌবন
পথের কাছে
ভাঁটফুলের মোনালিসার হাসি—
তাঁর হাসির কাছে ব্যাঙ্কার বোমার শব্দে ধসে যায়
প্যারিস,পেট্টোনাস টাওয়ার
বুর্জ আল খলিফা।


রঙধনুর রঙ থেকে
রঙ এনে সাজিয়ে কি লাভ বল পৃথিবী?
শুকে দেখেছো কি কবরের মাটির ওপর রক্তজবার গন্ধ?

নক্ষত্র চৌধুরীর কাছে
তরুলতার—
চন্দ্রগর্ভের যতটুকু ইতিহাস বকেয়া আছে
ক্লিওপেট্রার কাছে সিজারের ঋণ তার চেয়ে বেশি কি?
দাসপ্রথার বিনাশ হয়েছে বৈকি!
দাসত্বের বিনাশ কোথায়? কতদূর?

সাঁওতাল পরগনার সিঁধু কানুর ইতিহাস পুরোনো হয়েছে কি?
রক্তের সাথে তবু রক্তের এতো বিদ্রোহ
এতো মশাল মিছিল
এতো ব্যারিকেট ভাঙ্গার আয়োজন
অর্পিত ফুলের সুভাস—
কালের মূর্তির ঘুম ভাসিয়ে নিয়ে যায় দূর বহুদূর
তবু চৈতন্য পাষাণের নিদ্রাভঙ্গ হয়নি দুদন্ড কেনোদিন…

জল
জলজ
মীন
চতুষ্পদ
মনুজ,
মনুজ… চতুষ্পদ … মীন… জলজ… জল নয়…

বলো
সুস্পষ্ট বলো
এবার জন্ম নিলে পরে আবার কোথায় জন্ম নিবে—
ডাকাতিয়া?

মৎস্যকন্যা

 

 

তাঁকে আজো বলা হয়নি
ভালোবাসি

তবু প্রতিবৎসর
গ্রীষ্ম গিয়ে বর্ষা আসে আসে এমন প্রথম বৃহস্পতিবার
এক গোছা জারুল
কিংবা সোনালু
অথবা কৃষ্ণচূড়া দিয়েই অভ্যর্থনা জানায়—

আর বলে রাখে
বর্ষার প্রথম ফোটা শাপলার মালা দিয়েই
তাঁকে যেন বরণ করি…

তারপর পুরো শ্রাবণ মাস চলে—
পানসি দৌড়াদৌড়ি
একদিন
পানসির গলুই ক্ষয়ে গিয়ে নৌকা পড়ে থাকবে ডাঙায়
মৎস্যকন্যা
হারাবে পঞ্চভূতে দশ উপাদানে
কানে আসে
সে বলছে—
আসছে বর্ষাকাল…

তাঁকে আজো বলা হয়নি
ভালোবাসি

ভালোবাসি… 

শাহ্ কামাল
কবি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top