শব্দকুঞ্জ স্মৃতিময় আষাঢ় সংখ্যা
গল্প: আমরা তখনও জেগেছিলাম
স্বপঞ্জয় চৌধুরী
গল্প
আমরা তখনও জেগেছিলাম
স্বপঞ্জয় চৌধুরী
এক
রাত বাড়ছে । জুলহাসের ঘরে তখনও আলো জ্বলছে আর গুনগুন পড়ার শব্দ ভেসে আসছে। জুলহাসের একমাত্র স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হওয়া। আমি আয়মান জুলহাসের বন্ধু। আমার স্বপ্ন জুলহাসের মতো নয়। আমার স্বপ্ন একটা স্বাধীন পেশা। যখন মন চাইবে আমার স্বপ্নের দোকান খুলে বসবো যখন মন চায় বন্ধ করে দেব। ওতো উচ্চাকাঙ্খা আমার নেই। আজকালতো মানুষের উচ্চাকাঙ্খার শেষ নেই। এই ধরুন পনেরো লাখ টাকার ছাগল কেনার খায়েস জাগতে পারে কারো মনে। আবার কেউ কোনো মতে একটা সরকারি পদ-পদবী জুটিয়েই কাড়ি কাড়ি টাকা কামাবে। টাকা কামানোটাই এখন মানুষের একমাত্র লক্ষ্য। সে যেভাবেই হোক কাউকে ঠকিয়ে হোক, দুই টাকার জিনিস দুই কোটি টাকায় কিনে বিল খসিয়ে হোক, কাউকে গুম করে হোক আর খুন করে হোক টাকা তোমাকে কামাতেই হবে। টাকাহীন জীবন যেন মূল্যহীন। এই জুলহাসের কথাই ধরুন। গার্লফ্রেন্ড শর্ত দিয়েছে বিসিএস ক্যাডার না হতে পারলে ব্রেক আপ করবে, অন্য লোকের ঘর করবে। আহা এই ঘুনে ধরা সমাজে জুলহাসের মতো এতো ইনোসেন্ট ছেলেদের কোনো মূল্য নেই মেয়ের বাবাদের কাছে। এখানে মূল্য আছে ঘুসখোর পেটমোটাওয়ালাদের। মূল্য আছে টাকার কুমির হওয়া অশিক্ষিত বর্বর চাঁদাবাজ নেতা, পাতিনেতাদের।
জুলহাসের রুমে আস্তে আস্তে কড়া নাড়লাম। জুলহাস কফির মগ হাতে দরজা খুললো। চোখ থেকে ঘুম তাড়াবার ওষুধ হচ্ছে কফি।
– কিরে ব্যাটা পড়তে পড়তে তো শহীদ হইয়া যাবি। আর কত পড়বি। দুনিয়ায় কি বিসিএস ক্যাডার ছাড়া আর কোনো মানুষ নাই। এইসব বাদ দিয়া চল মামা দুই বন্ধু মিল্লা একটা খাবারের দোকান দেই। টিএসসির মোড়ে আমি রানমু আর তুই বেঁচবি।
– আরে রাখ তোর খাবারের দোকান। তুই জানিস আমাক গার্লফ্রেন্ড শর্ত দিয়েছে। বিসিএস ক্যাডার না হলি পারি বিয়ে হবে। শালা এতদিন রিলেশন কইরলাম কিন্তু একটা কিস পর্যন্ত করতে দিলনা। কতডা পাষাণ মাইয়ে বুঝতে পারিস।
– হুম। পাষাণী মেয়ে। পরে দেহা গেল তুই বিসিএস ক্যাডারও হইতে পারলিনা আবার তোর গার্লফ্রেন্ডও হারাইলি। পরে বইয়া বইয়া আসিফের বিরহের গান গাবি। ও পাষাণি বলে যাও কেন ভালোবাসোনি। মুছে দিয়ে যাও এই চোখের পানি।
– এ যাতো তুই এখন। ডিস্টার্ব করিসনে। যা তুই ফুটপাতে দোকান পাইতে বস। আমি বিসিএস ক্যাডার হইয়ে সবার প্রথম তোর দোকানেই রেট দিব।
রাত দুইটা তিরিশ শফিউলের ঘর থেকে নাক ডাকার শব্দ আসছে। যেন সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ঢুকেছে হলে। এই হলো আরেক বান্দা এতো ঘুম মানুষের আসে কোত্থেকে। বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার টানটান উত্তেজনাকর ম্যাচ। হলের টিভিরুমে শতশত স্টুডেন্টের মধ্যেও ও ঘুমোতে পারবে। যা হোক অনেক কথা বললাম এবার নিজে ঘুমোতে যাই। আসলে এ পৃথিবীতে সবই মিথ্যে কেবল ঘুমই সত্য।
দুই
ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে নানামুখী আড্ডা চলছে। কপোতকপোতী কিংবা নিসঙ্গ যুবকের দল। কেউ কর্মহীন, কেউ টিউশন ফেরত আবার কারও চোখে স্বপ্নের ঝিলিক ঠিকরে বেরোচ্ছে। জুলহাস তার বান্ধবীকে নিয়ে রিকশায় ঘুরতে বেরিয়েছে। তার বান্ধবী চম্পা তার হাত ধরে বসে আছে। জুলহাস হঠাৎ গাল বরাবর এক তীব্র চুমোর বুলেট ছুড়ে দিতে গেলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো। চম্পার এককথা আগে বিসিএস পাস করো। তারপর তোমাকে আমি এক হাজার চুমু দিতে দিব। এখন থেকে প্রতিদিন আমার মনের ডিপিএসে তোমার চুমুগুলো জমা হচ্ছে। জুলহাস মুখ ভার করে বসে আছে।
– আচ্ছা ধরো আমি বিসিএস ক্যাডার হতি পারলাম না। তা আমার ডিপিএস আমি ভাঙাতে চাইলাম। তা তোমার মনের ব্যাংক থেকে কি আমি ডিপিএস ভাঙাবার পারবো।
– ইস্! সখ কতো। তখন তুমি দেউলিয়া হয়ে ঘুরবে। ঋণখেলাপির দায়ে আমার ব্যাংকে জমানো সবভান্ডার অন্য কেউ নিয়ে যাবে।
জুলহাস কোনো কথা বলে না। মন খারাপ করে কি যেন বিড়বিড় করে বলতে থাকে।
– আয়মান ঠিকই বলেছে এ নারী পাষাণী।
আয়মানকে চারিদিকে গোল করে বসেছে বন্ধুমহলের আড্ডা। এদের মধ্যে একজন হচ্ছে আব্বাস পাতি পলিটিশিয়ান। যখন যেই দল আসে সেই দলের সাথে মিশে যায় খুব সুন্দরভাবে। ও কারো সাথে নাই আবার সবার সাথেই আছে। পাক্কা ফটকাবাজ। এর হাতে যদি দেশের দায়িত্ব কোনোদিন যাই। পুরো দেশটাকে ফতুর করে ছাড়বে। আব্বাসের বক্তৃতা শুরু হলো এখন। আমি কানে আঙ্গুল দিয়ে বসে আছি। এই সৈরাচারকে যদি সরাতে না পারি তাহলে আমাদের ভিক্ষা করে খাওয়া লাগবে। চাকরিতে এই একবিংশ শতাব্দি এসে কোটা থাকবে কেন। আমাদের ক্যাম্পাসে অলরেডি কোটার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবার একটা জনমত তৈরি হয়েছে। এই কোটা উঠাতে না পারলি সারাজীবন আমাদের গোলামি করি যাইতে হবে। এক একজন দুর্নীতি করে, বিসিএস এর প্রশ্ন বেইচে টাকার কুমির হচ্ছে। আর আমাদের বিসিএস বয় জুলহাস বঞ্চিত হচ্ছে গার্লফ্রেন্ডের চুমু থেকে। একি মানা যায় বলো বন্ধুসমাজ। সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।
জুলহাস গার্লফ্রেন্ডকে বিদায় দিয়ে আড্ডায় যোগ দেয় এবং তাদের হাসি দেখে বুঝতে বাকি থাকেনা যে আমিই সব বলে দিয়েছি বন্ধু সমাজকে।
– জুলহাস আমার দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করছে। তুই বন্ধু নামের কলঙ্ক একটা কতা শেয়ার করলাম আর সেটা মাইয়ে মানুষের মতো ফুরুত করে সবারে বইলে দিলি। কারে বিশ্বাস করবো এই দুনিয়ায় বিশ্বস নামক বস্তু উইঠে যাচ্ছে।
একদিকে গার্লফ্রেন্ডের গঞ্জনা আর দিকে ভর করেছে বন্ধুমহলের টিপ্পনি সবমিলিয়ে বেচারা জুলহাস খুব কষ্টে আছে। কাঁদো কাঁদো চোখে হলে ফিরে যাচ্ছে।
– আব্বাস জোরে জোরে জুলহাসকে ডাকছে। এই জুলহাস এদিকে আয় আরে আমরা মজা করেছি। তুই সিরিয়াসলি নিসনা।
গনি গান শুরু করেছে- ‘ বন্ধে মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে, কি যাদু করিয়া বন্ধে মায়া লাগাইছে। গনির গান হলে আসর যেন জমে না।
তিন
সপ্তাহ খানেক পর। ক্যাম্পাস আন্দোলনে উত্তাল। কোটাবিরোধী আন্দোলন। চারিদিক থেকে ¯স্লেগান ভেসে আসছে। স্লোগানে নেতৃত্ব দিচ্ছে হাসমত।
– কোটা না মেধা?
– মেধা, মেধা।
ওদিকে পাতিনেতা সারজানের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আব্বাস বলছে–
– তুমি কে? আমি কে?
– রাজাকার, রাজাকার।
– কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।
আন্দোলন দমাতে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, কাঁদানি গ্যাস নিক্ষেপ। কোনো কিছুই আন্দোলনকে দমাতে পারছে না। যেন। তারুণ্যের এই শক্তি হার মানবার নয়। জুলহাসও এসেছ এই আন্দোলনে। বেচারা দুই দুইবার বিসিএস দিয়েছে কিন্তু ভাইবা বোর্ড থেকে রহস্যজনকভাবে বাদ পড়েছে। জুলহাসের কর্কশ গলা থেকেও স্লোগান বের হচ্ছে।
একজন বুদ্ধিজীবী লেখক রাজাকার শব্দের কঠোর আপত্তি জানালেন। তিনি ১৯৭১ দেখেছেন। এই প্রজন্মের মুখে রাজাকারের স্বপক্ষে স্লোগান দেখে তিনি খুব হতাশ হলেন কষ্ট পেলেন। তার এই কষ্ট পাওয়াকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তাল হলো জনতা। তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হলো। তার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা হলো। নাস্তিক তকমা দিয়ে তাকে দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ারও কথা বলা হলো। পপুলিস্ট জনগণও একাত্মতা ঘোষণা করলো ওই লেখকের পিন্ডি চপকাতে । যাই হোক এটা ছিল সাময়িক এক ক্ষোভ। কয়েকদিন পরেই কোটা আন্দোলনের দাবি সরকার মেনে নিলেন। কিন্তু দাবিতো কোটা নয় এবার।
– দাবি মোদের একটাই সৈরাচারের পতন চাই।
রাজপথ উত্তাল। স্বাধীনতার চেতনাকে বিক্রি করে যারা টাকার কুমির হয়েছিল। তাদের সিংহাসন যেন নড়বড়ে হতে লাগলো। কোটাবিরোধী আন্দোলন রূপ নিতে থাকলো সরকার বিরোধী আন্দোলনে। পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হলো আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের। পুলিশের সাথে আরও যোগ দিল সরকারের পেটোয়া বাহিনী, লাঠিয়াল বাহিনী, হেলমেট বাহিনী।
একরাতেই ঝরে গেল অনেকগুলো লাশ। তারা ভেবেছিল, এই লাশ দেখেই হয়তো সবাই ঘরে ফিরে যাবে। ভয়ে লুকিয়ে থাকবে মায়ের কোলে। কিন্তু না এই প্রজন্ম যে দমবার নয়। মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তুললো। তাদের সাথে যোগ দিল আপামর জনতা, রিকশাওয়ালা, বৃদ্ধ, জোয়ান, বিরোধী দল, স্বাধীনতা বিরোধী দল, ক্ষমতালিপ্সু আরও যারা ছিল সবাই একাত্মতা ঘোষণা করলো। এই খুনী সরকারকে না নামালে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের আত্মা যে শান্তি পাবে না। সবাই একে একে হল ছেড়েছে । আমি লুকিয়ে আছি আমার দূর সম্পর্কের খালাতো বোনের বাসায়। জুলহাসকে গত সন্ধ্যা থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পল্টনের মোড়ে একটা ভ্যানে করে কয়েকটি লাশ স্তূপ করে গুলিস্তানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জানিনা জুলহাস ওই স্তুপের ভেতরে আছে কিনা? এক অজানা ভয়ে গা শিউরে উঠছে। এক সপ্তাহ আগেও একটা শান্তুশিষ্ট শহর ছিল, আজ তা ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে।
অনেক খোঁজাখুঁজি করে জুলহাসকে খুঁজে পাওয়া গেল ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। অপঘাতে মৃত্যু হিসেবে ওর মৃত্যুটাকে জায়েজ করা হচ্ছে। পত্রিকায়ও নিউজ হচ্ছে দুর্বৃত্তকে হামলায় মৃত্যু এই শিরোনামে। জুলহাসের গার্লফ্রেন্ড চম্পা খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে এসেছে ঢাকা মেডিকেলে ওর লাশ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। চম্পা জুলহাসের লাশের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায়। মনে পড়ে এই কদিন আগেও যে একটা কিস করার জন্য কতো বায়না ধরেছিল তার কাছে। তার আবদার যে অপূর্ণই রয়ে গেলো। চম্পা জুলহাসের উপর মূর্ছা গেল।
– ও আল্লাহ এমন কেন হলো আল্লাহ। জুলহাস তোমার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রয়োজন নাই। তুমি একটা ছোট খাটো যেকোনো কিছু করলেই হবে। আমাকে তুমি কিস করতে চেয়েছিলে। আমি তোমাকে কিস করতে দেইনি। আমি আসলেই পাষাণী। চোখ খোলো জুলহাস, চোখ খোলো।
চম্পাকে সান্তনা দেয়ার ভাষা আমার নেই। আমি বাকরুদ্ধ, যেন নিজের ভাইকে হারালাম। ওদিকে অনবরত গোলাগুলি চলছে। এখনই এম্বুলেন্স না ছাড়লে লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌছাতে দেরি হয়ে যাবে।
চার
অনেক ত্যাগ, তীতিক্ষা, সংগ্রাম আন্দোলনের পর সরকারের পতন হলো। এ যেন এক নতুন স্বাধীনতার স্বাদ। দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফতি জুলাইয়ের গ্রাফতি। সন্তান হারা মা যেন ভুলে থাকতে পারে তার সন্তান হারানো বেদনা। তাই চেতনার বানী, বিপ্লবের বাণী নৈতিকতার বাণী লেখা হলো দেয়ালে দেয়ালে। ফাঁকে ফাঁকে আরবী ক্যালিওগ্রাফি আঁকা হচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে। মাদ্রাসার ছেলেরাও যেন শিল্পী হয়ে উঠছে। তাদের প্রতিভা ফুটে উঠছে দেয়ালে দেয়ালে। অপরদিকে প্রতিশোধের আগুন জ¦লে উঠছে জনতার চোখে আজ তারা স্বাধীন তাই স্বাধীনতার স্বাদ নিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়া হচ্ছে থানা, ঝুলিয়ে মারা হচ্ছে পুলিশ, মুক্ত হচ্ছে দাগী আসামী, পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সংখ্যালঘুদের বাড়ি, মাজার ভাঙা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের যতো স্মৃতিফলক আছে সব ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। যে শেয়াল গর্তে লুকিয়ে ছিল সেও হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া ডাক দিয়ে জনসম্মুখে বেড়িয়ে আসছে। জনতার সাথে মিলে মিশে গিয়ে সেও এই আন্দোলনের ভাগিদার হচ্ছে, মালিক হচ্ছে।
ট্রাফিক কন্ট্রোল তাদের হাতে। নোবেল শান্তি পুরস্কার আজ তাদের পায়ের তলায়। তারাও এ দেশের একটি অংশ, এ দেশের রাজনীতির হিস্যায় তাদেরও অধিকার আছে। রাজনীতি ব্যবসায় থেকে যে লভ্যাংশ এতো তাদেরই প্রাপ্য। যেই কথা সেই কাজ তাদের হাতে তুলে দেয়া হলো। রাজনীতি নামক জাদুর কাঠি। যে জাদুর কাঠি যার হাতে থাকবে সে হয়ে উঠবে টাকার কুমির, সোনালী রাক্ষস। সে ক্ষমতা ছাড়া কিছু চায় না। বুলেটে যাদের বুক ঝাঝড়া হয়েছে তাদের প্রাণের বিনিময়ে এই মহামূল্যবান জাদুর কাঠির মালিক হয়েছে তারা। তারা আজ পাকা অভিনেতা জনতার চোখে চোখ রেখে রক্তগরম করা বক্তৃতায় আজ পটু তারা। খোলসের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসছে সুপ্ত শামুক। একটি চেতনার মুখোশ ছিড়ে ফেলে নতুন চেতনার মুখোশ পড়া হচ্ছে। একটি কোটা বাতিল করে, আবার নতুন কোটা হাজির হচ্ছে। বাংলার বিস্তৃর্ণ ভূমি জুড়ে তাদের আকর্ণ দাপাদাপি। মানুষ হাপিয়ে উঠছে তাদের চিত্রনাট্য দেখে। তাদের নাটক নতুন নতুন এপিসডে রূপ নিচ্ছে। চারিদিকে অনেকগুলো লোভাতুর চোখ। এই বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডটি ধর্ষিত হয় আছিয়া হয়ে, গরম ভাতের ধোয়ায় হারিয়ে যায় তোফাজ্জলেরা, মিডফোর্ডের পাথর মেরে মারা হয় সোহাগদের। যত চোর , ডাকাত ছিনতাইকারী দলে দলে নেমে পড়ে মানুষের ঘুম হারাম করতে। আপামর জনগণ ধর্ষিত বাংলাদেশের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন রক্তভেজা শাড়ি দেখে শঙ্কিত হয়। মুখ বদলায় ধর্ষক বদলায় না। নতুন নামে নতুন পরিচয়ে একে একে জিপার খোলার শব্দ তুলে এদেশকে তারা ধর্ষন করে চলে যায়। ধর্ষিতা মা আমার কোকিয়ে কোকিয়ে তার মৃত্যু প্রার্থনা করে। আব্বাসেরা আজ বড় নেতা , টাকার কুমির। আমার মতো আয়মানেরা জেগে থাকে জুলহাসদের পাহারা দিতে, যেন আলোজ¦লা রুম থেকে গুনগুন পড়ার শব্দ ভেসে আসে, আমরা জেগে থাকি যেন এদেশের স্বাধীন পতাকাটির রঙ বদলে না যায়, আছিয়ারা যেন তার মুক্ত পাখা মেলে আকাশে উড়তে পারে, তোফাজ্জলেরা যেন ভাতের থালার বিনিময়ে প্রতারিত হয়ে মৃত্যু বরণ না করে। আমরাতো এক প্রতারিত জনগণ, জুলহাসদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সুবিধাভোগীরা জাদুর কাঠি নাড়বে তা হতে দেয়া যাবে না। রাত অনেক বাড়ছে, গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে, চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। জুলহাসের কবরে চম্পার চুমোর আওয়াজ রাতের নিস্তব্ধতাকে আরও ভারী করে তুলছে যেন। আমরা এখনও জেগে আছি মা, আমরা তখনও জেগেছিলাম।
স্বপঞ্জয় চৌধুরী।
কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও কথাসাহিত্যিক।
জন্ম :১৯৮৪ সালের ৬ জুন।
পড়াশোনা: ঢাকা কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতোকত্তোর
পেশা ও কর্মস্থল: প্রভাষক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, সাউথ পয়েন্ট কলেজ।
ইতিপূর্বে কাজ করেছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এ্যসিসট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর পদে।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় জাতীয় দৈনিকে খন্ডকালীন সাংবাদিকতা ও সাপ্তাহিক
পত্রিকায় সম্পাদনা করেছেন।
লেখালেখির ক্ষেত্র: কবিতা, গল্প, অনুবাদ, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছড়া গান, চিত্রনাট্য ইত্যাদি ।
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: কাব্য :পতঙ্গ বিলাসী রাষ্ট্রপ্রেম(২০১১, সাহিত্যদেশ প্রকাশনী)
গল্প: জলপিপিদের বসতবাড়ি(২০১৩, পূর্বা প্রকাশনী)
কাব্য : কালযাত্রার স্নিগ্ধ ফসিল(২০১৬, শব্দসাঁকো, কলকাতা)
কাব্য: দ্রোহ কিংবা পোড়ো নদীর স্রোত(২০১৮- চৈতন্য প্রকাশনী)
কিশোর কাব্য: মায়ের মতো পরি( ২০২০,অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনী)
কাব্য: গহিনে অরণ্য নদী (২০২১, বেহুলা বাংলা প্রকাশনী)
গল্প: ডুবেছিল চাঁদ নিশিন্দা বনে (২০২১, অণুপ্রাণন প্রকাশনী)
প্রবন্ধ: নিগূঢ় শিল্পের কথাচিত্র (২০২১, অনুপ্রাণন প্রকাশনী)
নিভৃত ভাবনার জলযান (২০২৪, অনুপ্রাণন প্রকাশনী)
চিন্তকের খসড়া খাতা (২০২৫, অনুপ্রাণন প্রকাশনী)
অনুবাদ( কাব্য): ভিন পাখিদের স্বর (২০২২, বেহুলা বাংলা প্রকাশনী)
গল্প: মৃৎচক্রের দিনগুলো ( ২০২৩, অনুপ্রাণন প্রকাশনী)
কাব্য: জলাঙ্গি ও ভাটপুষ্পসমূহ (২০২৩, বেহুলাবংলা)
লিখেছেন বিভিন্ন দেশী বিদেশী দৈনিক ও সাহিত্য পত্রিকায়।
পুরস্কার: সাহিত্য দিগন্ত লেখক পুরস্কার-২০২০( গল্পগ্রন্থ- জলপিপিদের বসতবাড়ি)
বাঙালির কণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার-২০২০ (কাব্যগ্রন্থ- দ্রোহ কিংবা পোড়ো নদীর স্রোত)
ইন্টারন্যাশনাল পিস এম্বাসেডর সম্মাননা
দাবানল সাহিত্য পুরস্কার-২০০৪ ( কবিতা- রক্তাক্ত রাজপথ)
Rivista Letteraria Lido dell’anima PREMIO(ROME)
সম্পাদনা: শিল্প সাহিত্যের ওয়েব পত্রিকা শব্দকুঞ্জwww.shabdakunja.com